পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে কমলেও খুচরায় প্রভাব নেই

30

নগরীর পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম কমতে শুরু করলেও খুচরা বাজারে কোন পরিবর্তন ঘটেনি। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, পাইকারিতে দাম কমে আসলেও খুচরায় কোন পরিবর্তন নেই কেন? পেঁয়াজের দাম হাতের নাগালে আসা উচিত।
টেকনাফ ও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত দুইদিনে মিয়ানমার, চীন ও মিশরের প্রায় আড়াই হাজার টন পেঁয়াজ বাজারে আসায় পাইকারিতে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে বলে জানান পাইকারি ব্যবসায়ীরা। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
খাতুনগঞ্জে এতো পেঁয়াজ ঢুকার পরেও খুচরায় কোন পরিবর্তন ঘটেনি বলে অভিযোগ ক্রেতা সাধারণের। তারা বলছেন, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ এসে কি লাভ, যদি দাম না কমে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আমরা বেশি টাকা দিয়ে যেসব পেঁয়াজ কিনেছি সেগুলো বেশি টাকা দিয়ে বিক্রি করছি। ওইসব চালান শেষ হলে পুনরায় কিনে আনবো এবং কম দামে বিক্রি করবো।
গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রায় ৫০টির মত পেঁয়াজের ট্রাক বাজারে ঢুকেছে এবং খালাস চলছে। অর্থাৎ বৃহস্পতিবারে ১ হাজার টন পেঁয়াজ বাজারে এসেছে। কিছু কিছু আড়তদারকে পেঁয়াজ বিক্রি করতেও দেখা গেছে। বাজারে পাইকারি পর্যায়ে প্রতিকেজি মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩৫ থেকে ১৫০ টাকা, মিশর এবং তুরস্কের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ১১০ থেকে ১৩০ টাকা এবং চীনের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৭৫ থেকে ৯০ টাকায়।
অন্যদিকে গতকাল শুক্রবার খাতুনগঞ্জ বাজারে প্রায় ১ হাজার ৫০০ টনের মত পেঁয়াজ আসে এবং এসব দ্রæত খালাস করতে দেখা গেছে। তবে ছুটির দিন হওয়ায় আড়তদাররা কোন পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারেননি।
খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মিয়ানমারের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তুরস্ক এবং মিশরের পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায়।
গৃহিণী মেহনুর জান্নাত বলেন, ২০০ টাকা দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হবে কেন? সরকারের উচিত এ সংকট দ্রুত নিরসন করা। পাইকারি বাজারে দাম কমে আসলে খুচরা বাজারে দ্রুত এর প্রভাব পড়া উচিত। প্রশাসনের ওইদিকে মনিটরিং করা উচিত।
খুচরা দোকানি মামুন সিকদার বলেন, ‘নতুন পেঁয়াজ ঢুকছে সেটা আমরা শুনেছি। কিন্তু আমাদের তো আগের পেঁয়াজগুলো বিক্রি করতে হবে। আমরা তো আর লোকসানে বেচতে পারবো না।’
খাতুনগঞ্জের পিএন এন্টারপ্রাইজের মালিক এমদাদুল হক রায়হান বলেন, ‘পেঁয়াজের গাড়ি আসছে এবং আরও আসবে। শুক্রবার বেচাকেনা হয়নি, তাই দামের বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারছি না। গতকালকে (বৃহস্পতিবার) যে দাম ছিলো সেটিই বর্তমানে বলবৎ আছে। সরবরাহ যখন বাড়ছে দাম আরও কমে আসবে।’
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, ‘সরবরাহ বাড়ার কারণে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে এসেছে। কাল-পরশু গাড়ি ঢুকলে আরও কমবে বলে আমরা আশাবাদী। মাঝখানে দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি অনেকটাই কমে গিয়েছিলো। এখন যে দাম কমছে সেটা অনেকে জানেন না।’
খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেনি কেন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘খুচরা বাজারের বিষয়ে আমরা জানি না। এটা প্রশাসন দেখভাল করবে। প্রয়োজনে উনারা বাজার মনিটরিং করে ব্যবস্থা নিবে।’
তিনি আরও বলেন, খাতুনগঞ্জ এখন প্রায় ক্রেতাশূন্য। এখন পাইকারিতে ৯০ থেকে ১১৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা আরও দাম কমার আশায় বাজারে আসছেন না। তাই বাজারে তেমন বেচা বিক্রি নেই।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, খাতুনগঞ্জে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ এসেছে সেটা জানি। সামনে আরও পেঁয়াজ আসবে। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা সেগুলো নিয়ে গিয়ে বিক্রি করলে ভোক্তা পর্যায়ে দামটা আরও কমে আসবে।
তিনি আরও বলেন, রবিবার থেকে আমরা খুচরা বাজার মনিটরিং শুরু করবো। দোকানদারদের কাছ থেকে লেনদেনের কাগজপত্র যাচাই করবো। কোন অসঙ্গতি পেলে ওসব ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনবো।