পেঁয়াজের ‘ঝাঁজ’ কমছে

78

দেশের সর্ববৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে টেকনাফ ও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মিয়ানমার, চীন ও মিশর থেকে পেঁয়াজ আসায় পাইকারিতে কেজিপ্রতি দাম কমেছে ৮০ টাকা। গত দুইদিনে এই তিন দেশ থেকে বাজারে প্রায় সাড়ে ৩শ টন পেঁয়াজ এসেছে। এ কারণে বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় ধাপে ধাপে দাম কমতে শুরু করেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
তবে পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২০০ টাকায়। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আমরা ২২০ টাকা দিয়ে যেসব পেঁয়াজ কিনেছি সেগুলো ২০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করছি। এসব পেঁয়াজ শেষ হলে কম দামে বিক্রি করা যাবে। আবার পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমলেও খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে ক্রেতার অভাবে পড়ে আছে শত শত টন পেঁয়াজ। ফলে হতাশায় ভোগছেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারিতে মিয়ানমারের পেঁয়াজ শ্রেণিভেদে কেজিপ্রতি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, একইভাবে চীন ও মিশরের পেঁয়াজ শ্রেণিভেদে বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা। এর আগে গত রবিবার মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা এবং চীন ও মিশরের পেঁয়াজ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তার আগে শনিবার পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম ২২০ টাকার বেশি ছিলো বলে জানান পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ বিক্রি অনেক কমে গেছে। এখন যে দাম কমে গেছে সেটা অনেকে জানে না। তাই খাতুনগঞ্জ এখন প্রায় ক্রেতাশূন্য। এখন পাইকারিতে ৯০ থেকে ১১৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ক্রেতারা আরও দাম কমার আশায় বাজারে আসছেন না। তাই বাজারে তেমন বেচা বিক্রি নেই।
খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিছ পূর্বদেশকে বলেন, অনেকে দাম বেশি হওয়ার কারণে পেঁয়াজ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই বাজারে চাহিদা অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাজারে ক্রেতার সমাগমও আগের তুলনায় অনেক কম।
আরও দাম কমার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে এ ব্যবসায়ী বলেন, আজ রাতে (সোমবার) টেকনাফ ও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আসার পাশাপাশি আগামীকাল (মঙ্গলবার) কার্গো বিমানে করে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আশার কথা রয়েছে। এস আলমসহ অন্য আমদানিকারকরাও বিমানে করে পেঁয়াজ আনছেন বলে আমরা খবর পাচ্ছি। এছাড়া ডিসেম্বরের শেষের দিকে বাজারে দেশি পেঁয়াজও আসার কথা শুনছি।
এদিকে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করলেও বাড়ছে আদা, রসুন, এলাচি ও দারচিনির দাম। বর্তমানে প্রতিকেজি চীনা আদা ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা, মিয়ানমারের আদা ১০০ টাকা ও দেশি আদা ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চীনা রসুন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা ও দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। এলাচি গত সপ্তাহে ১ হাজার ৯৮০ টাকা বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ২ হাজার ৯২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দারচিনি গত সপ্তাহে ৯৩ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারিতে দাম কমে যাওয়ার পরও খুচরায় বেশি দামে বিক্রির বিষয়ে রিয়াজুউদ্দিন বাজারের মুদি দোকানদার মো. মামুন বলেন, আমরা এখন যে পেঁয়াজগুলো বিক্রি করছি, এগুলো গত সপ্তাহে ২২০ টাকা দামে কেনা। তাই এখন কম দামে কেমনে বিক্রি করি? এখন ভর্তুকি দিয়ে ২০ টাকা কমে বিক্রি করছি। পরবর্তী চালান আনলে দাম কমবে।
উল্লেখ্য, ভারত থেকে আমদানি বন্ধ হওয়ার আগে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার টন (১৫ টনের ২০০ ট্রাক) পেঁয়াজ দেশে আসতো। সে অনুযায়ী খাতুনগঞ্জে প্রায় ৪০০ টন (১৩-১৪ টনের ২০-৩০ ট্রাক) ভারতের পেঁয়াজ আসতো। বর্তমানে প্রতিদিন মিয়ানমার পেঁয়াজেরও ৩০-৪০ ট্রাক (১৩-১৪ টনের) বাজারে আসছে।