পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুক্তির সংগ্রামে অনেক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়

97

একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোনে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল তাদের স্মরণে নগরের কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার ও ফয়’স লেকস্থ বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ আলোচনা সভা ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট : আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেছেন মুক্তবুদ্ধি চর্চায় নিবেদিত প্রাণ বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ মানব সম্পদ। একাত্তরে বিজয়ের ঊষালগ্নের ১৪ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর দোসর কুখ্যাত আলবদর ও আলশামস বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য দেশের সূর্য সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নিধন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুক্তির সংগ্রামে এভাবেই অনেক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছে। ৭৫ পরবর্তী বাঙালি জাতীয়তাবাদকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামানের রাজনৈতিক উত্তরসূরি জাতীয় চার নেতাকে কারগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। গতকাল সকালে নগরীর জেলা শিশু একাডেমি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলা আয়োজিত বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদের সাবেক ডীন বরেণ্য বুদ্ধিজীবী প্রফেসর ড. জাকির হোসেন বলেন, ১৪ই ডিসেম্বর এমন একটি শোকাবহ দিন যে দিন বিশ্ব বিবেককে ছোবল দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসররা বুদ্ধিজীবিদের অপহরণ করে নিয়ে হত্যা করে। আমরা এখনও মনে করি এদেশে মুক্তচিন্তার মানুষেরা নিরাপদ নয়। চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল আমিন চৌধুরী বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবিরা বাঙালি জাতিসত্তার জাগ্রত বিবেক। সভাপতির বক্তব্যে দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এইচ এম সোহেল বলেনবুদ্ধিজীবিরা বিশ্ব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবি সজল দাশের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সদরঘাট থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মর্জিনা আকতার, আবৃত্তি শিল্পী এড.মিলি চৌধুরী, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বশর, আইন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন মিঠুন, বর্তমান সভাপতি নোমান জিহাদ, অর্থ সম্পাদক মো.জুয়েল শাওন, সাংস্কৃতিক কর্মী পলাশ কুমার দেব, তানভীরুল ইসলাম নাহিদ, মাসুদ উদ্দিন হামেদ নওয়াজ, জেলা শিশু একাডেমীর শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফারজানা আক্তার ববি, আবদুল আউয়াল টিটু প্রমুখ। শুরুতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন : বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি গতকাল সকালে ফয়’স লেকস্থ বধ্যভূমিতে ফুল দিয়ে এবং এক মিনিট নিরবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় মেয়রের সাথে প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবিদা আজাদ ও কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সামসুদ্দোহা, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, মেয়রের একান্ত সচিব মুফিদুল আলমসহ কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সিটি মেয়র তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন ১৪ ডিসেম্বর যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই দেশের সূর্য সন্তান। মেধাবী সন্তানদের হত্যা করাই বর্বর পাকিস্তানী এবং তাদের দোসরদের প্রধান লক্ষ্য ছিল। তারা জানত যে একটি দেশের সামগ্রিক মেধা ধ্বংস হয়ে গেলে সেই দেশের সকল উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়।
এমপি লতিফ : ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে এম এ লতিফ এমপি’র উদ্যোগে আগ্রাবাদস্থ পুরাতন চেম্বার হাউজ মিলনায়তনে বিকালে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম-১১ আসনের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বন্দর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি এম এ লতিফ এমপি আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য দেশবাসীকে আহব্বান জানান। সভা ও দোয়া মাহফিলে জাতীর জনক শেখ মুজিবুর রহমান,শহীদ পরিবার, জাতীয় চার নেতা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। নিজেদের ভেদাভেদ ভুলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এম এ লতিফ এমপিকে বিজয়ী করতে একাত্ম হয়ে কাজ করার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাহাবুবুল হক মিয়া সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন- মহানগর আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো.এনামুল হক চৌধুরী ও শেখ মাহমুদ ইছহাক, সদস্য সুলতান আহম্মদ, ৩৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিল আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ২৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব আবদুল কাদের, ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এইচ, এম সোহেল, ৩৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হোসেন মুরাদ, ৩০নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি জহির আহম্মদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন ইবনে আহমেদ, ২৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ’র সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা, ৩৬নং ইউনিট আওয়ামীলীগের সভাপতি মো.ইকবাল ও আবদুল মান্নান চৌধুরী, ইউনিট সাধারণ সম্পদাক রিফাত আলম, মহানগরের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ বাবলা, ক্রীড়া সম্পাদক আবু তারেক রনি, গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিয়ক সম্পাদক মো.শাহরিয়ার হাসান, সহ-সম্পাদক মো.আরিফ, আওয়ামীলাগ’র নেতা ফরিদ আহম্মদ, নওশেদ সরোয়ার পিন্টু, আক্তার, আবদুল মন্নান, নেজাম, দিদার, মোরশেদ, স্বাধীনতা নারী শক্তি পরিচালক অধ্যাপিকা বিবি মরিয়ম, যুবলীগ নেতা আমির হোসেন জুয়েল, শহীদ, জুয়েল, সুমন, সোহাগ, সাইফুল, জব্বার, আরিফ, জামাল, উজ্জল, জিকু, মনির হোসেন, মো.টিপু, ছাত্রলীগ নেতা আরমান, ইউনিট নেতৃবৃন্দসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
বাসদ (মার্কসবাদী) : শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সকালে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে। এই সময় উপস্থিত ছিলেন দলের জেলা কমিটির আহবায়ক কমরেড মানস নন্দী,সদস্য সচিব কমরেড অপু দাশ গুপ্ত, জেলা শাখার সদস্য শফিউদ্দীন কবির আবিদ, আসমা আক্তার, জান্নাতুল ফেরদাউস পপি, সত্যজিত বিশ্বাস প্রমুখ।
শহীদ এন এম এম জে ডিগ্রি কলেজ : নগরীর বাকলিয়া শহীদ এন এম এম জে ডিগ্রি কলেজে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে কলেজের অধ্যক্ষ, অধ্যাপকমন্ডলী, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ কলেজের শহীদ মিনারে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মালেক। অধ্যাপক আবদুল আলিম আজাদের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মো.রবিউল হাছান চৌধুরী, আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ। উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক খাদিজা বেগম, অধ্যাপক আবদুল কাইয়ুম, খোন্দকার ছাদেক মাহমুদ, সৈয়দ শাহাদাত হোসাইন, সাইমন নাহার চৌধুরী, বিশ্বকর শর্মা ভাষ্কর, মনিকা ধর, জয়শ্রী নাথ, ঝুমুর খাস্তগীর, মো.আলী, ফারহানা আকতার, সৈয়দ আহমদ সিকদার, আশীষ দস্তিদার ও মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা প্রমুখ। সভায় কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মালেক শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আত্মনিয়োগ করার জন্য আহব্বান জানান।
খোলাঘর : জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির উদ্যোগে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস স্মরণে আলোচনা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন আজ ১৪ ডিসেম্বর ফয়েজ লেকস্থ বধ্যভূমিতে অনুষ্ঠিত হয়। খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সহ সভাপতি কবি মাহবুবুল আলম সাবুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী রূপক চৌধুরীর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন খেলাঘর সহ সভাপতি কবি আশীষ সেন, ড. বেনু কুমার দে, এড. শফিউল আলম, সম্পাদক মিজানুর রহমান ইউনুস, সাবেকুন নাহার ঝর্ণা, সদস্য সাবেরা শবনম ময়না, মনোয়ার জাহান মনি, বনবিহারী চক্রবর্তী, সালমা জাহান মিলি, আয়েশা আক্তার নাজু, মো: ইসমাইল হোসেন প্রমুখ। বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা বিজয়ের প্রাক মুহুর্তে এদেশকে মেধাশূণ্য করার জন্য দেশের সূর্য্যসন্তানদেরকে হত্যা করে। এখনও স্বাধীনতা বিরোধীরা তাদের ঘৃণ্য কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে আজ এক হতে হবে। শহীদদের স্বপ্ন সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে আগামীতেও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে বিজয়ী করতে হবে। রাষ্ট্রক্ষমতায় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে সেদিকে স্বোচ্ছার হতে হবে। আলোচনা শেষে খেলাঘরের শিশু কিশোর ভাইবোনদের পরিবেশনায় সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সবশেষে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্ত ঘোষনা করা হয়।
সম্পাদক সাংবাদিক নেতা সৈয়দ আলমগীর সবুজ অনুরোধ জানিয়েছেন। খবর বিজ্ঞপ্তির