পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম

106

রাত্রির সাথে বেদনার পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমের সম্পর্ক
এ সম্পর্কে উত্তাপ ছড়ায় জ্বর
পত্র আদান-প্রদান করে উচ্চরক্তচাপ
কামুক এই উত্তেজক সম্পর্কে পরিপূর্নতা দেয় ডায়বেটিস
রাতের গভীরে তাদের সঙ্গমে গোঙাতে থাকি মা মা করে
আমি মাকে ডাকি— মা, বাঁচাও বাঁচাও বলে
আমি আমার বইপড়ুয়া বাপকে ডাকি—বাবা, তোমার বই রাখো
আমার স্বপ্নে রংবেরঙের সাপ এসে ফনা তোলে
আমার স্বপ্নে দেবী মনসা বহুরূপে সাজে, মন ভোলায়
ঘুমের ঘোরে গোঙাতে গোঙাতে সুবর্ণা মনসার পিছু হাঁটি
আমার পা জড়িয়ে ধরে, কেঁদে কেঁদে ডাকে ধূসর বেহুলা
সাধনসাধু লখিন্দর যেও না তার সাথে, ফিরে এসো এই অশত্থতলে
এভাবেই শীতের দীর্ঘতম রাতের দৈর্ঘ্য বাড়ে, আমি গোঙাতে থাকি
আমার কপালে জলপট্টি রাখে, কপোলে ঝরে বেহুলার অশ্রæ কমল
আজান ভাসে সুদূর গগন হতে, সর্পরানি মনসা দলে দলে পালায়
সরস্বতী বেহুলার পাশে বসে স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

জীবন সূর্য্যেও বিকেল আসে
স্বপন শর্মা

দিনগুলো শিউলি ফুলের মতো
স্মৃতির গাছ হতে ঝড়ে পড়ে
কুড়িয়ে রাখি ফুলদানী নামক কল্পনার ডাইরিতে
মালা গাঁথতে ধরে খুঁজে দেখি সুঁই সুতা নেই

অপেক্ষায় থাকি শুক্রবারের-
শুক্রবার বটতলার হাট বসে সেখানে রঙিন সুতো
সোনামুখী সুঁই, চুমকি পাওয়া যায়

কিছু টাকা হলে আগামী হাটে কিনতে যাব
হাটবার এলে ছুটাছুটি করি
মহাজনের গদিতে যাই সহজ শর্তে টাকা নিতে

কারবারি ছেড়ে মহাজন তীর্থে গেছেন
বেশ ভালো লাগল তার অপার্থিব ভাবনায়
আমিও ভাবতে ভাবতে বেমালুম ভুলে যাই
কুড়ানো দিন সুঁই সুতো আর মালার কথা,

ততক্ষণে জমানো দিনগুলো বাসি শিউলির মত
চুপসে গেছে, টাটকা ঘ্রাণ নেই
মালা গাঁথাও উপযোগী নয়।

কার্তিকের দিনের মত জীবন সূর্য্যও ক্ষণস্থায়ী
নিমিষেই বিকেল আসে।

বাবা
দ্বীপ সরকার

তাহাজ্জত শেষে বাবা আমাকে ডাকতেন প্রতিনিয়ত
আর আমি ভোরের ঠোঁট থেকে নামতাম,
বাবা খুশি হয়ে সালাম শিখাতেন প্রতিদিন, দিনের শুরুতেÑ

লম্বাটে দাঁড়ির ঝুল ধরে ‘বাবা’ ডাকলে তিনি বিস্ময় চোখে আঁকতেন আমাকে
পানের বাটি এগিয়ে দিলে অবিকল চুমুর পাহাড় এগিয়ে দিতেন
চুনরঙা ঠোঁটে চুম্বনের ধূলো উড়তো তাঁরÑ
তিনি ভালোর ভেতরকার মানুষ ছিলেন একজন।

মুখোমুখি বসিয়ে শাসনের কোরাস উড়াতেনÑ
ছায়াউরুর মাঝখানে মেঘের ছই আগলে ধরলে
আমি মুখ গুঁজিয়ে ওম চেখে নিচ্ছিলাম ; মনে পড়ে Ñ

অতঃপর তিনি মারা গেলে সেই প্রাচীন ঘুম, টানে পুনুশ্চ
আমি ঘুমোয়। স্থির দেউড়ি তুলে বাবার অপেক্ষায় থাকিÑ
তাহাজ্জত শেষে ডাকবেন,তিনি আর ডাকেননা

অথচ এখনকার ভোর সমূহ সরিসৃপের মতো
-চোখে ঢালে বিষ, প্রজন্মকে মেরে ফেলে

আমরা তাহাজ্জদ চিনিনা। সকালও চিনিনা। সালাম চিনিনা ।
আমার বাবা তা শিখিয়েছিলেন, মনে পড়ে-

তুমি সেই রমজান আলী মামুন
টিপলু বড়ুয়া

আকাশের সীমারেখা
খুঁজতে খুঁজতে
দ্রাঘিমা থেকে দ্রাঘিমান্তরে
ঘুরতে ঘুরতেÑ
তোমাকেই খুঁজে ক্লান্ত হলাম।
তবুও পেলাম না তোমার চিহ্ন-
কেননা, তুমি আজ নির্জীব-নি®প্রাণ,
শুকনো পাতার মতো পড়ে আছো-
মাটিতেই মিশে আছে তোমার প্রাণ।

কিন্তু,
সাহিত্যের মধ্যাহ্ন আকাশে
উজ্জ্বল সূর্যের মতো
জেগে আছো তুমি সারাক্ষণ।
সাহিত্যের অলিতে-গলিতে
এখনো খুঁজে পাই তোমার বিচরণ।
সবার মাঝে জেগে থাকা তুমিÑ
তুমি সেই রমজান আলী মামুন।

শব্দহীন মৌন ছায়ায়
আতাউল হাকিম আরিফ

আজ আকাশের রঙটা বেশ অন্যরকম, বিষন্ন
তেমনি বিষন্ন বোধে দাঁড়িয়ে আছে
সুউচ্চ পাহাড়, দালানকোঠা।
মেঘনার বুক উত্তাল! তুমুল হাওয়া বইছে।
কাব্যাঙ্গে জড়িয়ে গেছে অসূচি শব্দমালা,
তবুও জেগে উঠে শব্দচর-যৈবতী।
সুরসিন্ধুই জমে আছে তমালিকা-কুহেলিকা!
সেজেগুজে আছে বাউরী-বিহঙ্গিনী!
হয়তোবা মেঘালয়ায় আজ ওদের পুষ্পরাগ
আমিও আছি ভীষণ একা, শব্দহীন মৌন ছায়ায়।

অতৃপ্তি দেখিবার বেদনা
রেজাউল রেজা

তৃতীয় নয়নে তোমাকে দেখিবার চেষ্টা করিয়া যাই কিন্তু আবছা দেখিতে পাই।
দেখিব কেমনে—কখনও যে নয়নে নয়ন রাখিয়া দেখা হয় নাই।
হৃদয়ের দেওয়ালে কল্পনার রং তুলিতে তোমাকে আঁকিতে চাই
আঁকিতে গিয়া বার বার আটকিয়া যাই
কোথায় লাল কোথায় হলুদ কিংবা কোথায় কৃষ্ণবর্ণ লাগাইতে হইবে তাহা ঠাহর করিতে নাহি পাই।
কখনও কখনও তোমার চুলের গন্ধ অনুভব করিবার চেষ্টা করিয়াও ব্যর্থ হইয়া যাই।
কারণ একটাই- আজ অবধি তোমায় আ-তৃপ্তি দেখিবার সৌভাগ্য হয় নাই।