পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে ভোলায় নিহত ৪

117

ফেসবুকে ‘অবমাননাকর’ পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ভোলার বোরহানউদ্দিনে ‘মুসলিম তাওহিদী জনতা’র ব্যানারে এক সমাবেশের পর পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে কয়েকশ মানুষ। রোববার বেলা পৌনে ১১টা থেকে বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদরে দফায় দফায় সংঘর্ষে এক মাদ্রাসাছাত্রসহ অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক মো. শাহীন জানিয়েছেন, গুলিতে নিহত দুইজনের মৃতদেহ তার হাসপাতালে রয়েছে। আরও দুইজনকে মৃত অবস্থায় ভোলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জেলার সিভিল সার্জন রথীন্দ্রনাথ রায় জানিয়েছেন।
আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ভোলা সদর হাসপাতাল ছাড়াও কয়েকজনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বোরহানউদ্দিনে জরুরি ভিত্তিতে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
সংঘর্ষে হতাহতের খবর পাওয়ার পর হেলিকপ্টারে করে বিজিবি সদস্যদের ভোলায় পাঠানো হয়েছে বলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সদরদপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন।বোরহানউদ্দিনের উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, ফেসবুকে ‘নবীর অবমাননার’ অভিযোগে স্থানীয় এক যুবকের বিচারের দাবিতে রোববার সকালে উপজেলা সদরে একটি সমাবেশ হয় মুসলিম তাওহিদী জনতা’র ব্যানারে। বেলা পৌনে ১১টায় সেখানে পৌঁছে তিনি দেখতে পান, সমাবেশে উপস্থিত এলাকাবাসী পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়ছে।
সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা ছিল বেলা ১১টায়। কিন্তু আয়োজকরা সাড়ে ১০টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করে দিলে অংশ নিতে আসা জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। আমি যখন পৌঁছেছি, তখনও বড় বড় মিছিল নিয়ে অনেকে সমাবেশে অংশ নিতে আসছিল।
নিহতদের মধ্যে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র শাহীন এবং স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ছাত্র মাহবুব পাটোয়ারীর লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে। আর ভোলা সড়র হাসপাতালে রয়েছে মিজান ও মাহফুজ নামে দুজনের লাশ।
ফেসবুকে ‘নবীকে নিয়ে কটূক্তি’ করার অভিযোগে স্থানীয় ওই যুবকের বিচারের দাবিতে শনিবার সকালেও বোরহানউদ্দিনের কুঞ্জেরহাট বাজারে মানববন্ধন এবং থানার সামনে ‘মুসলিম তাওহিদী জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ হয়।
তার আগেই শুক্রবার রাতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ওই তরুণ জিডি করতে বোরহানউদ্দিন থানায় যান। তিনি দাবি করেন, তার ফেসবুক আইডি হ্যাকারের কবলে পড়েছে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ওই তরুণের ফেসবুক আইডি থেকে শুক্রবার বিকালে একটি পোস্ট আসার পর তার ‘স্ক্রিনশট’ কয়েকটি আইডি থেকে ফেইসবুকে ছড়ানো হয়। এরপর অনেকেই ফেসবুকে এর প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে।
এই পরিস্থিতিতে বিষয়টি তদন্তের জন্য ওই তরুণকে থানা হেফাজতে রেখে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় আরও দুইজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
ফেসবুকে ধর্ম অবমাননা করার গুজব ছড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলার নজির রয়েছে। খবর বিডিনিউজের
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় হামলা চালিয়ে লুটপাটসহ ১২টি বৌদ্ধ মন্দির ও ৩০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে একদল লোক।
২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে রসরাজ নামে এক মৎসজীবীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে লোকজনকে খেপিয়ে তুলে ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা চালানো হয়।