পুলিশি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ, ব্যাপক ধরপাকড়

26

বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে পুলিশি নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই দিল্লি, উত্তর প্রদেশ,ব্যাঙ্গালুরু ও কর্নাটকসহ বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিবাদ মিছিল অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার পুলিশের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ ও জমায়েত নিষিদ্ধ করা হলেও তা অমান্য করে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় বিভিন্ন রাজ্য থেকে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে স্বনামধন্য ইতিহাসবিদ থেকে শীর্ষ রাজনীতিকরাও রয়েছেন।
বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে নিপীড়নের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতে সম্প্রতি আইন সংশোধন করেছে ভারত। গত ১২ ডিসেম্বর রাতে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের পরেই আইনে পরিণত হওয়া বিলটি শুরু থেকেই মুসলিমবিরোধী আখ্যা পেয়েছে। বিতর্কিত এই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দেশজুড়ে সরব একাধিক রাজনৈতিক দল। চলছে দফায় দফায় বিক্ষোভ।
বিক্ষোভের মুখে পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞামূলক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে চারজনের বেশি লোকের জমায়েত। পুলিশের দাবি, সহিংসতা এড়াতে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশের পুলিশ প্রধান ওপি সিং জনগণকে বিক্ষোভ থেকে দূরে থাকার আহŸান জানিয়েছেন। চেন্নাইয়ের মতো বিভিন্ন শহরের পুলিশ মিছিল, সমাবেশ বা কোনও ধরনের বিক্ষোভের অনুমতি দিচ্ছেন না। তবে পুলিশি নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে উত্তর প্রদেশ, ব্যাঙ্গালুরু, মুম্বাই ও দিল্লিতে নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাধারণ জনগণকে বিক্ষোভ প্রদর্শনের ইন্সটাগ্রাম ও টুইটারে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ডাক দিচ্ছেন।
ধারাবাহিক প্রতিবাদের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে দিল্লি, ব্যাঙ্গালুরু, চণ্ডীগড়, মুম্বই, কর্নাটক-সহ সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্য। ব্যাঙ্গালুরুতে প্রতিবাদে অংশ নিয়ে আটক হন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভিকে সাক্ষাৎকার দেওয়া অবস্থায় তাকে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলে পুলিশ। অন্য দিকে, দিল্লিতে আটক করা হয় সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাটা, ডি রাজা এবং স্বরাজ ইন্ডিয়ার সর্বভারতীয় সভাপতি যোগেন্দ্র যাদবকে।
বিক্ষোভ ঠেকাতে দিল্লির ১৮টি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও। কয়েকটি স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তবে তা উপেক্ষা করে সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে লালকেল্লা-সহ বেশ কিছু এলাকা। লালকেল্লায় আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। বিক্ষোভকারীরা এর সামনে জমায়েত হতেই পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হয়। বিহারেও পরিস্থিতিও ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পুলিশের সঙ্গে বেশ কয়েক জায়গায় সংঘর্ষও হয়েছে বিক্ষোভকারীদের। সিএএ-র প্রতিবাদে উত্তরপ্রদেশের সম্ভল জেলা রণক্ষেত্রে পরিণহ হয়। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় বিক্ষোভকারীদের। পুলিশের ঊাড়ি, বাসে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। চণ্ডীগড়েও ছাত্ররা প্রতিবাদ মিছিল করে। এদিকে, বড়সড় সংঘাতের আশঙ্কায় মুম্বাইয়ের ক্রান্তি মাঠে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
দিল্লি ও জয়পুরকে সংযুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ সব মহাসড়কে ব্যারিকেড দিয়েছে পুলিশ। রাজধানীর প্রবেশমুখে সব যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এতে বড় ধরনের যানজট সৃষ্টি হয়েছে। অনেক যাত্রী তাদের বিমানের ফ্লাইট ধরতে পারেননি।