পুরো কাশ্মির যেন এক কারাগার

31

বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকীকৃত এলাকা মনে করা হয় ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরকে। সেনাবাহিনী, আধা-সামরিক বাহিনী ও পুলিশ সদস্য মিলিয়ে সেখানে ৭ লক্ষাধিক নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। সোমবার রাজ্যটির স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ অধিকার বাতিলের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে পুরো উপত্যকাকে কারাগারে পরিণত করেছে ভারত সরকার। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে’র খবরে বলা হয়েছে, হোটেল, গেস্ট হাউস, সরকারি ও বেসরকারি ভবনকে অস্থায়ী কারাগার বানানো হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৪ শতাধিক রাজনীতিক, উপদেষ্টা ও স্বাধীনতাপন্থী নেতাদের। পুরো উপত্যকা যেন পরিণত হয়েছে এক কারাগারে।
সরকারের নির্দেশ অনুসারে, চেন্তৌর, হারি নিবাস, ফরেস্ট গেস্ট হাউসের মতো হোটেল ও গেস্ট হাউস এবং সরকারি ও বেসরকারি ভবনকে অস্থায়ী কারাগার বানানো হয়েছে। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতিকে গ্রেফতার করে হরি নিবাসের পৃথক দুটি কটেজে রাখা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সব নেতাকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বাদ পড়েছেন শুধু ড. ফারুক আব্দুল্লাহ ও ৯১ বছরের স্বাধীনতাপন্থী নেতা সৈয়দ আলি গিলানি।
মঙ্গলবার মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন ফারুক আব্দুল্লাহ। ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর বাবার অভিযোগ, সরকার তাকে গৃহবন্দি করেছে। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তা অস্বীকার করেছেন। শ্রীনগর থেকে নির্বাচিত এমপি ফারুক আব্দুল্লাহ বাড়ির পেছনের গেইটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি অভিযোগ করেন, লোকসভায় ৩৭০ ধারার বিলোপ নিয়ে আয়োজিত ভোটাভুটিতে তাকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা কর্মকর্তা শাফকাত খান এ সময় ফারুক আব্দুল্লাহের বাসার বাইরে অবস্থান করছিলেন। তিনি দাবি করেন, প্রবীন এই নেতাকে তার গুপকার বাড়িতে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রাখা হয়েছে। তাকেও বাড়িতে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ফারুক আব্দুল্লাহ বলেন, মোদি সরকারের এই পদক্ষেপ একেবারেই অসাংবিধানিক। ৩৭০ ধারার জন্য বুকে গুলি নিতে রাজি আছি। আমি জানি না কোথায় আছে আমার ছেলে। সরকার আমাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে।

‘নতুন ভোরের অপেক্ষা’য় মোদি
জম্মু-কাশ্মির সংক্রান্ত নতুন আইন পাসকে সংসদীয় গণতন্ত্রের ‘স্মরণীয় মুহূর্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার কয়েকটি টুইটার পোস্টে তিনি দাবি করেছেন, জম্মু-কাশ্মির এবং লাদাখে এবার আরও উন্নয়ন হবে, সেখানকার যুব স¤প্রদায়ের কাছে অনেক সুযোগ খুলে যাবে। একইসঙ্গে লাদাখের মানুষকে বিশেষ অভিনন্দন জানিয়েছেন মোদি। সোমবার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মিরের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে রাজ্য থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে রাজ্যসভায় বিল পাস করে বিজেপি সরকার। পরদিন মঙ্গলবার লোকসভায়ও পাস হয় বিলটি।
ঘটনার পর দেওয়া এক টুইটার পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘বছরের পর বছর ধরে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, কখনো জনগণের ক্ষমতায়ন নিয়ে ভাবেনি। জম্মু ও কাশ্মির এখন তাদের কবল থেকে মুক্ত। একটি নতুন ভোর, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে!’
মোদি আরও দাবি করেন, তার সরকার কাশ্মিরের বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকা লাদাখকে ভারতের কেন্দ্রশাসিত এলাকা ঘোষণার জন্য সেখানকার জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করেছে।

৩৭০ ধারা বাতিল ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় : আমিরাত
মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমান প্রধান রাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আহমেদ আল বন্না ৩৭০ ধারা বাতিলকে ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ’ বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন। এ ধারা বাতিলের কারণে ভারতে সামাজিক ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের আশাবাদ প্রকাশ করেন।এ ধরণের প্রক্রিয়া যেকোন দেশের জন্যই একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ভারতের কেন্দ্রীয় রাজ্যসভায় ৩৭০ ধারা বাতিলকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করেছিল।‘লাইন অব কন্ট্রোলে’ ভারত ও পাকিস্তানকে শান্তি বজায় রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র অনুরোধ জানিয়েছে।

মানবাধিকার
সংস্থার প্রবেশাধিকার চায় ওআইসি
জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল ও সেখানে চলমান উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মুসলিম দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সংস্থা-ওআইসি। সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে ভারতের প্রতি দাবি জানিয়েছে তারা। সোমবার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এদিকে জম্মু-কাশ্মিরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে পার্লামেন্টে একটি বিলও পাস করা হয়েছে। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কাশ্মিরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সেনা। গ্রেফতার করা হয়েছে সেখানকার শতাধিক স্থানীয় নেতাকে। ইন্টারনেট-মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি।