‘পুরোনো পাইপলাইন’ গ্যাসে নতুন সংকট

56

গত সপ্তাহে গ্যাসের সর্বোচ্চ সরবরাহ পেয়েছে কর্র্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (কেজিডিসিএল)। এতে করে বিদ্যুতের পাশাপাশি সার উৎপাদনে গ্যাসের যোগান বেড়েছে। তবে গ্যাসের চাপ বাড়ায় এখন পুরোনো পাইপলাইনগুলোই গ্রাহকদের মাঝে নতুন সংকট তৈরি করছে।
জানা গেছে, গত ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট থেকে চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহ শুরু করে পেট্রোবাংলা। ধারাবাহিকভাবে বর্তমানে ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস পাচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস। অথচ ২০১০ সালের ১৯ এপ্রিল যাত্রা শুরুর পর থেকেই চাহিদার অর্ধেকের কম গ্যাস পেয়ে আসছিল কর্ণফুলী গ্যাস। দীর্ঘদিন ধরে ১৮০ থেকে ২২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছিল চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানটি।
কেজিডিসিএল সূত্রে জানা যায়, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্পখাত মিলিয়ে চট্টগ্রামে গ্যাসের গ্রাহক রয়েছে ৫ লাখ ৮০ হাজার। তন্মধ্যে আবাসিক গ্রাহক ৫ লাখ ৭৫ হাজারের অধিক। তাছাড়া শিল্পকারখানা আছে এক হাজার ৫০০। চট্টগ্রামে সিএনজি ফিলিং স্টেশন আছে ৭০টি। শিল্প, বাণিজ্যিক, সার-বিদ্যুৎ ও চা বাগানসহ সব মিলে আরো ৪ হাজার ৯২টি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাসের গ্রাহক। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা থাকে ৪৮০-৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট।তথ্য মতে, বিগত সপ্তাহে গ্যাস সরবরাহে নতুন করে রেকর্ড করেছে কেজিডিসিএল। তথ্য অনুযায়ী, গ্যাসের সঞ্চালনকারী প্রতিষ্ঠান জিটিসিএল (গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লি.) এলএনজি ও জাতীয় গ্রিড থেকে সবমিলিয়ে ৬ মার্চ ৩৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট, ৫ মার্চ ৩৩২ মিলিয়ন ঘনফুট, ৪ মার্চ ৩৪০ মিলিয়ন ঘনফুট, ৩ মার্চ ৩৬৬ মিলিয়ন ঘনফুট, ২ মার্চ ৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুট ও ১ মার্চ ৩৪৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে।
এদিকে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ায় সার কারখানা দুটিতে যোগানও বেড়েছে। শিল্প গ্রাহকদের ব্যবহারও বেড়েছে।
তবে আবাসিকে গ্যাসের সংকট রয়েই যাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এলএনজি আসার পরেও রান্নার চুলোয় গ্যাসের চাপ থাকছে না। অনেক সময় মিটমিট করে জ্বলে। বিশেষ করে, নগরীর সল্টগোলা, বন্দরটিলা, হালিশহর, মাদারবাড়ি, আন্দরকিল্লা, রহমতগঞ্জ, ঘাটফরহাদবেগ, বাকলিয়া, কাতালগঞ্জ, বাদুরতলা, বহদ্দারহাট ও নাসিরাবাদ এলাকায় গ্যাসের সংকট কাটছে না।
এদিকে কেজিডিসিএল বলছে, কর্ণফুলী গ্যাসের বর্তমান নেটওয়ার্কের সক্ষমতা ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করার জন্য নেটওয়ার্ক আপগ্রেডেশন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। নেটওয়ার্ক আপগ্রেডেশন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৫ কিলোমিটার ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন বসানো হচ্ছে। এসব পাইপ দিয়ে ৩৫০ থেকে ১০৫০ পিএসআই চাপের গ্যাস সরবরাহ করা হবে। পুরোনো পাইপলাইনগুলোই বর্তমানে গ্যাস সরবরাহে সংকট তৈরি করছে বলে মনে করছেন কেজিডিসিএল’র কর্মকর্তারা।
কেজিডিসিএল’র ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘মহেশখালী থেকে পুরোদমে এলএনজি সরবরাহ আসছে। আনোয়ারা সিটিএস-সহ (সিটি গেট স্টেশন) জাতীয় গ্রিড থেকে ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছি। বর্তমান নেটওয়ার্ক সক্ষমতায় আমরা ৩৫০ মিলিয়ন পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ দিতে সক্ষম।’ তিনি বলেন, ‘এতো গ্যাস পাওয়ার পরেও আমাদের গ্যাস সংকট রয়ে যাচ্ছে। এর মূল সমস্যা হলো- পুরোনো পাইপলাইন। এখন সরবরাহ লাইনগুলোর সাথে সঞ্চালন লাইনের ইন্টারলিংক তৈরি করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইন্টারলিংক তৈরি করা গেলে লাইনে গ্যাসের চাপ বাড়বে এবং সংকটও কেটে যাবে।’