পুরাতন লাইনেই চলছে গ্যাস সংযোগের কাজ

71

নগরীর কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড’র (কেজিডিসিএল) অধীনে প্রায় ৬ লাখের কাছাকাছি আবাসিক সংযোগ থাকলেও তার তদারকি নেই কেজিডিসিএলের। পুরাতন লাইনের মাধ্যমে চলছে গ্যাস সংযোগের কাজ। নানা অনিয়মের কারণে বারবার মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটলেও টনক নড়ে না কর্তৃপক্ষের। যার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে হতাহতের ঘটনা। গ্রাহকদের দাবি, তাদের লাইনগুলো ঠিকঠাক চেক করলে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পেতো নগরবাসী।
কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ জানায়, অগ্নিকান্ডসহ অন্যান্য দুর্ঘটনা এড়াতে গ্যাস রাইজার মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে কেজিডিসিএল। এর আওতায় বিনামূল্যে নগরের প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার গ্যাস রাইজার পরীক্ষা করা হবে। এ সময় কোনো রাইজারের লিকেজ বা কোনো ধরনের সমস্যা পেলে তাৎক্ষণিক তা মেরামত করে দেওয়া হবে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, গ্যাস রাইজার পরীক্ষার জন্য শতাধিক প্রকৌশলী ও ৪০ জন রিপেয়ারম্যানের সমন্বয়ে ৩০টি টিম গঠন করা হয়েছে। এ সপ্তাহ থেকে সব রাইজার পরীক্ষা করবেন। এই কার্যক্রম শেষে হলে দুর্ঘটনা হ্রাসের পাশাপাশি গ্যাসের অপচয়ও কমবে বলে সংশ্লিষ্টদের আশা।
তবে কেজিডিসিএল’র দাবি, গ্রাহকের অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য কেজিডিসিএল দায়ী নয়। সংযোগের জন্য গ্যাস রাইজার আছে প্রায় দেড় লাখ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের যে জনবল, তা দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব রাইজার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাও সম্ভব নয়। তবে এই দুর্ঘটনার পর গ্যাস কর্তৃপক্ষ রাইজারগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
জানা যায়, গত তিন বছরে অন্তত পাঁচ দফা গ্যাসজনিত বিষ্ফেরণের ঘটনা ঘটেছে। এই ধরনের বিষ্ফোরণে মারা গেছেন ১২ জন। নগরের পাথরঘাটার ব্রিক ফিল্ড রোডের ঘটনা ছাড়া অন্য চারটির কোনোটিতেই তদন্ত কমিটি গঠন করেনি কেজিডিসিএল।
তদন্ত কমিটি গঠন না করার বিষয়টি স্বীকার করে প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক (প্রকৌশল ও সেবা) মো. সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘ওগুলো সম্পূর্ণ গ্রাহকদের অভ্যন্তরীণ লাইনের কারণে ঘটেছে। সেখানে আমাদের দায়দায়িত্ব নেই। তাই কমিটি গঠন করা হয়নি।’
কেজিডিসিএল সূত্রে জানা যায়, মহানগরীতে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৫টি আবাসিক সংযোগ রয়েছে। ২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার সরবরাহ লাইন রয়েছে। ১৯৮৮ সালে অল্প নেটওয়ার্ক থাকলেও পরবর্তীতে ধীরে ধীরে পাইপ লাইন বেড়েছে।
প্রধান সরবরাহকারী গ্যাস সংযোগ লাইনের ৩, ৮, ৪, ১০, ১৬, ২০ ও ২৪ ইঞ্চির পাইপগুলোকে সিপি (ক্যাথোডিক প্রোটেকশন) দেওয়া হয়। আর ফিডার লাইন অর্থাৎ ৩ ইঞ্চির নিচের পাইপ লাইনগুলোকে আগে এক ধরনের গাম লাগিয়ে তার উপরে পর্যাপ্ত টেপ মোড়ানো হয়। যার কারণে মাটির নিচে অনেকদিন যাবৎ স্থায়িত্ব থাকে। এতে লিকেজ হওয়ারও সুযোগ থাকে না।
তবে এলএনজি লাইন আসার পূর্বে কিছু সরবরাহ লাইনের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। যাতে অতিরিক্ত চাপে তা ফেটে না যায়। কিন্তু আবাসিক এলাকাগুলোতে এখনো হাত দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান কর্মকর্তা।
গ্রাহক আবুল ফয়েজ বলেন, গ্যাস লাইনের কাজ করে তাদের (গ্যাস কর্তৃপক্ষের) ঠিকাদাররা। আমাদেরকে যেভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়, আমরা সেভাবে কাজ করি। তাদের প্রতিষ্ঠানের দেওয়া রাইজারে আমরা হাতও লাগাই না।
অভ্যন্তরীণ লাইনগুলোর (৩ ইঞ্চির নিচের পাইপ) সমস্যার কথা জানতে চাইলে প্রকৌশলী মো. সারোয়ার হোসেন বলেন, আমরা ইতোমধ্যে গ্যাসের রাইজার পরীক্ষা করতে কমিটিও করেছি। যদিও এর আগে ১ জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্পের অধীনে নগরের এক লাখ ৫ হাজার রাইজার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে যেগুলো লিকেজ ছিল সেগুলো ঠিক করতে নির্দেশনা দিয়েছি। এ সপ্তাহ থেকে আগেরগুলো ও নতুন ৪০ হাজার রাইজার পরীক্ষা করা হবে।
পাশাপাশি প্রত্যেক বাসায় কি কি কারণে অগ্নিকান্ড ঘটতে পারে, সে বিষয়ে সচেতনতামূলক পোস্টারও লাগানো হবে। এছাড়া কোনও রাইজার লিক পেলে তিনদিনের মধ্যে ঠিক করতে বাসার মালিককে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, গ্যাস সংযোগের মেইন লাইনগুলোতে কখনো সমস্যা হয়নি। সব অভ্যন্তরীণ লাইন বা আবাসিক লাইনগুলোতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এখানে মূলত সিডিএ, ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন যখন রাস্তা খোঁড়াখুুঁড়ির কাজ করে তখন গ্যাস পাইপ লাইনগুলো লিকেজ হয়ে যায়। মূল লাইন পরীক্ষা করা হলেও বাসাবাড়ির সংযোগ পরীক্ষা করা হয় না।
পাথরঘাটা গ্যাস লাইন বিষ্ফোরণের বিষয় টেনে এনে তিনি বলেন, বেশির ভাগ এলাকায় গ্যাস সংযোগের জন্য রাইজার বসানো আছে। কিন্তু অনেক জায়গায় রাইজারগুলোকে বাড়ির মালিকরা খোলা জায়গায় রাখেননি। আবাসিক এলাকাগুলোতে যে যার মতো করে বাসা-বাড়ি তৈরি করছে। কিন্তু গ্যাস সংযোগের রাইজারের জন্য খোলামেলা জায়গার প্রয়োজন হলেও তার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হচ্ছে না।
অভ্যন্তরীণ লাইনের রাইজার এবং লাইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ে একটা প্রস্তাব পাঠাবো। যখন এটি পাশ হয়ে আসবে তখন আমরা কাজ শুরু করতে পারবো। আবার তখনও নগরবাসীর ভোগান্তি হবে। যেমন- পুনরায় রাস্তা কর্তন, পুরাতন গ্যাস লাইন খুঁজে বের করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। কারণ ১৯৮৮ সালে যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছিলো তার পরে অনেকবার রাস্তা সংস্কার হয়েছে। সে কারণে আমাদের লাইনগুলো অনেক নিচে পড়ে যায়।