পুঁজিবাজারের দরপতন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ চাই

41

নানা উদ্যোগ, পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা কোনটিই যেন থামাতে পারছেনা দেশের পুঁজিবাজারের অস্থিরতা। পুঁজিবাজারে দরের নিয়মতান্ত্রিক সকল ধারার ব্যত্যয় ঘটিয়ে দরপতনের দিকদিয়েই যেন প্রতিযোগিতা চলছে। সর্বশেষ কোথায় গিয়ে টেকবে তা দেখার বিষয়। আমরা জানি, পুঁজিবাজারে দরের অসম উত্থান-পতনের ফলে ইতোমধ্যে কয়েক লাখ বিনিয়োগকারী শেয়ার মার্কেটে তাদের পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ কার্যদিবসের মধ্যে ৭ দিনই শেয়ারের বড় দরপতন হয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকা-চট্টগ্রামে প্রধান সূচক কমেছে ৪০০ পয়েন্টের ওপর। এর মধ্যে শুধু মঙ্গলবারই কমেছে ৮৫ থেকে ৮৭ পয়েন্ট। এতেই সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এর আগেও আমরা লক্ষ্য করেছি, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা সিন্ডিকেট কারসাজিতে দরপতনের অভিযোগ এনে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। সরকার তখন বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছিল। রদবদল করা হয়েছিল বেশকিছু শীর্ষপদের। কিন্তু তাতে বাজারদরের তেমন কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান বাজারের যে অবস্থা তাতে বলা যায়, বাজারের ওপর আস্থা প্রতিনিয়ত হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। যেকোন সময়ের চেয়ে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। আর তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে সূচকে। তাই দেশের স্বার্থে, উন্নতির স্বার্থেই শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। তার জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা, নীতিমালা এবং গাইডলাইন। জানা গেছে, ২০১০ সালে ধসের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ফিরেছে শেয়ারবাজার। এতে ঋণগ্রস্ত বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর পত্রকোষ বা পোর্টফোলিও জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেলের আওতায় পড়েছে। একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কেবল গত এক বছরের ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। এমতাবস্থায় দেশের আর্থিক খাতে সুশাসনের সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। ব্যাংক খাতের ‘নন-পারফর্মিং লোন’ বেড়ে গেছে। যে কারণে তৈরি হয়েছে তারল্য সংকট। এর প্রভাব পড়ছে শেয়ারবাজারে। শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে স¤প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু ছাড় দিলেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না। উল্টো পতনের বাজারে লেনদেন খরা নতুন মাত্রা পেয়েছে। সর্বশেষ পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট নিরসনে সরকারি ৪ ব্যাংককে বিনিয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্ববান জানানো হয়েছে। এসব উদ্যোগি বিনিয়োগকারীদের আশা জাগাবে নিঃসন্দেহে। আমরাও আশাবাদী হতে চাই। এর আগে দেখেছি, সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিএসইসি) নানা উদ্যোগ নিয়েও বাজার ন্যূনতম স্থিতিশীল রাখতে পারেনি। কারণ সরকারের নানা আশ্বাসে ভরসা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারবাজারে যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং তা ফেরাতে হবে। দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার স্বার্থেই পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে হবে। শেয়ারবাজারের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাজ থেকে পরামর্শ নিতে হবে। বিনিয়োগকারীদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টিও সরকারকে বিবেচনায় রাখতে হবে। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের উচিৎ আবেগী আয়ের প্রতি ধাবিত না হয়ে জেনে-বুঝেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা। আমরা আশা করি, পুঁজিবাজারের দরপতন এখনই থামানোর জরুরি পদক্ষেপ নেবে সরকার। একইসাথে প্রত্যাশা সংকট কাটিয়ে পুঁজিবাজার আবারো চাঙ্গা হয়ে উঠবে।