পিতা হত্যার প্রতিশোধ নিতেই আইয়ুবকে খুন

47

রাঙ্গুনিয়ায় চাঞ্চল্যকর আইয়ুব বাহিনীর প্রধান আইয়ুবকে গুলি করে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। পিতা হত্যার প্রতিশোধ নিতেই এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে বলে পিবিআই এর তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পিবিআইয়ের দেয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া এই হত্যাকান্ডে অংশ নেওয়া ৫ আসামিও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানায় পিবিআই কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭ টার দিকে মো. আইয়ুব আলী (৫৮) কে রাঙ্গুনিয়ার আলমশাহ পাড়া এলাকার বসাক পাড়ার মুখে রাস্তার উপর প্রকাশ্যে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় তার স্ত্রী জাহেদা বেগম বাদি হয়ে পরের দিন তিনজনের বিরুদ্ধে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় মামলা করেন। রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ প্রায় ৩ মাস ১৫ দিন তদন্ত করেও এই নির্মম হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারায় আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের জন্য আদেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে পিবিআই মামলাটির তদন্ত শুরু করে। তদন্তকালে পিবিআই বিশ্বস্ত গুপ্তচর নিয়োগ করে এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাত্র ২৩ দিনের মধ্যেই মামলাটির মূল রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়।
এই বিষয়ে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানান, তদন্তকালে দেখা যায় পূর্ব বিরোধের জের ধরে ভিকটিম আইয়ুব আলী এই মামলার এজাহারনামীয় আসামি মহসিন এবং হাছানদ্বয়ের পিতা আব্দুস সাত্তার তালুকদারকে ১৯৮৭ সালে দিনে দুপুরে জবাই করে নির্মমভাবে হত্যা করে। পিতা হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মহসিন এবং হাছান বিভিন্নভাবে পরিকল্পনা করতে থাকে। দীর্ঘ দিন পর তারা এই মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামিদেরকে ভাড়াটে খুনি হিসাবে ঠিক করে আইয়ুবকে প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করতে সক্ষম হয়।
তিনি বলেন, পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার একটি চৌকস দল গত ১৫ ফেব্রূয়ারি থেকে টানা ৪৮ ঘন্টা রাঙামাটি জেলাধীন রাজস্থলী থানা এলাকা, চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানা ও রাঙ্গুনিয়া থানা এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে এই হত্যাকান্ডের মূল ভাড়াটে খুনিদের গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গাবতল এলাকার নবী হোসেনের ছেলে আবদুল আজিজ ওরফে মানিক (২৪), দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর এলাকার আবদুল গফুরের ছেলে মো. আজিম (২৪), রাউজান উপজেলার কদলপুর এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে আবদুল জলিল (২৯), একই এলাকার চাঁদ মিয়ার ছেলে মো. রুবেল (২৮) এবং পূর্ব রাউজান উপজেলার মহরম মিয়ার ছেলে মো. মহিন উদ্দিন (২৭)।
তিনি আরও বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ৫ আসামিই হত্যাকান্ডে তাদের অংশগ্রহণ এবং কার কি ভূমিকা ছিল তা স্বীকার করে। পরে গত ১৭ ফেব্রূয়ারি আদালতে সোপর্দ করা হলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহিদুল্লাহ কায়সার এর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। স্বীকারোক্তিতে প্রকাশিত অপরাপর পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান। তিনি জানান, আইয়ুব হত্যার তদন্তকালে ভিকটিম আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে এক ডজনের উপরে হত্যাকান্ডসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগ জানা গেছে। তন্মোধ্যে ভিকটিম আইয়ুব আলীর হাতে ১৯৮৫ সালে সাবেক মেজর ওয়াদুদ, ১৯৮৬ সালে মেহেরুজ্জামান, ১৯৮৯ সালে মেহেরুজ্জামান নামে আর এক ব্যক্তিকে, ১৯৯১ সালে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সোবহান, একই সালে রাঙ্গুনিয়ার গফুর এবং ১৯৯২ সালে রাঙ্গুনিয়ার নুরুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তিকে হত্যার কথা উঠে আসে। ১৯৯১ সালে রাঙ্গুনিয়ার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সোবহান হত্যাকান্ডে আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার সময় আব্দুস সোবহানের ২ পুত্র কবির ও সবুর’কে পথিমধ্যে আটক করে খেঁজুর কাঁটা দিয়ে তাদের চোখ উপড়ে ফেলা হয়। এ ধরনের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ রয়েছে নিহত আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে।