পিআইবির মহাপরিচালক শাহ আলমগীর আর নেই

41

প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক সাংবাদিক মো. শাহ আলমগীর আর নেই (ইন্নালিল্লাহে…রাজেউন)। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে পিআইবির প্রশিক্ষক জিলহাজ উদ্দিন জানান। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শাহ আলমগীরের বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, একপুত্র, এক কন্যা, আত্মীয়-স্বজন এবং অজ¯্র গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বিকেল পৌনে ছয়টায় রাজধানীর উত্তরা ১২ নম্বর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। দাফনের আগে প্রথমে তার মরদেহ দুপুরে পৈতৃক বাড়ি গোড়ানে নেয়া হয়। পূর্ব গোড়ান মক্কা জামে মসজিদে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর আড়াইটায় প্রয়াতের মরদেহ তার কর্মস্থল পিআইবিতে নেয়া হয়। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রয়াতের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
বিকেল তিনটায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে তার মরদেহ নেওয়া হয়। সেখানেও তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী সাংবাদিকরা শ্রদ্ধা জানান। পরে তার জানাজা শেষে বিকাল ৪টায় উত্তরা নিজ বাসভবনে নেয়া হয়। বাদ আসর উত্তরা ১১নং সেকটরে বায়তুল নূর মসজিদে জানাজা শেষে উত্তরা ১২ নং সেক্টর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
সাংবাদিক শাহ আলমগীরের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিএফইউজে’র সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব কাজী মহসিন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিম উদ্দিন শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
২০১৩ সালের ৭ জুলাই থেকে তিনি পিআইবির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আগামী ৭ জুলাই পর্যন্ত তার দায়িত্বে থাকার কথা ছিল। পিআইবিতে যোগ দেওয়ার আগে এশিয়ান টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন শাহ আলমগীর। খবর বিডিনিউজের
আলমগীরের শ্যালিকা শাহনাজ শারমীন জানান, হঠাৎ শাহ আলমগীরের রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গিয়েছিল। ডায়াবেটিসসহ বিভিন্নি শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে অসুস্থ হয়ে সিএমএইচে ভর্তি হন পিআইবির মহাপরিচালক। পরদিন তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসার জন্য ছয় সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে লেখাপড়া করা শাহ আলমগীরের সাংবাদিকতার শুরু উপমহাদেশের প্রথম শিশু-কিশোর সাপ্তাহিক কিশোর বাংলায়। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ওই পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন তিনি।
এরপর দৈনিক জনতা, বাংলার বাণী, আজাদ ও সংবাদ-এ কাজ করা আলমগীর ১৯৯৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম বার্তা-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া চ্যানেল আইয়ে প্রধান বার্তা সম্পাদক, একুশে টেলিভিশনে হেড অব নিউজ, যমুনা টেলিভিশনে পরিচালক (বার্তা) এবং মাছরাঙা টেলিভিশনে বার্তা প্রধানের দায়িত্বেও তিনি ছিলেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা শাহ আলমগীর জাতীয় প্রেসক্লাবেরও সদস্য ছিলেন।
তিনি শিশু কল্যাণ পরিষদ এবং শিশু ও কিশোরদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান ‘চাঁদের হাট’এর সভাপতি এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পরিচালনা বোর্ডের সদস্য ছিলেন।
সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ২০০৬ সালে ‘কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার’, ২০০৫ সালে ‘চন্দ্রাবতী স্বর্ণপদক’, ২০০৪ সালে ‘রোটারি ঢাকা সাউথ ভোকেশনাল এক্সিলেন্স এওয়ার্ড’ এবং ২০০৪ সালে ‘কুমিল্লা যুব সমিতি অ্যাওয়ার্ড’ পান। শাহ আলমগীরের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায়।