পায়েল হত্যার ৩ আসামির জামিন বাতিল

40

বাস থেকে ফেলে চাঞ্চল্যকর পায়েল হত্যা মামলার তিন আসামি হানিফ পরিবহনের গাড়ি চালক জামাল হোসেন, সুপারভাইজার মো. জনি ও হেলপার মো. ফয়সাল হোসেনের জামিন বাতিল করে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। আসামিরা ভুয়া জিম্মাদার দেখিয়ে আদালত থেকে জামিন নিয়েছিলেন। এ ঘটনায় আদালতের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে আসামিদের আইনজীবী এডভোকেট ফাহমিদা আফসানার বিরুদ্ধে কী ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা আগামী ৩০ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদককে অনুরোধ করেছেন আদালত।
গতকাল বুধবার বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. আবদুল হালিম এর আদালত এসব আদেশ দিয়েছেন। এছাড়া, আগামী ২৭ মার্চ পায়েল হত্যা মামলার চার্জ গঠনের জন্য পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বিভাগীয় দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি এডভোকেট আইয়ুব খান বলেন, তিন আসামি ট্রাইব্যুনালে এসে যাকে স্থানীয় জিম্মাদার দেখিয়েছেন তা আসলে ভুয়া। বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হলে ট্রাইব্যুনাল প্রতারণার ঘটনায় তাদের জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে আসামিদের আইনজীবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনজীবী সমিতির কাছে আদেশের কপি পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ মার্চ আসামিরা হাইকোর্টের নির্দেশনা ভিত্তিতে স্থানীয় দু’জন ব্যক্তির জিম্মায় ২০ হাজার টাকা বন্ডে জামিননামা দাখিল করেন। আদালত তা গ্রহণ করে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। দুই জিম্মাদারের মধ্যে শিউলি বেগম নামে একজনের জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করা হয়। যার আইডি নম্বর ১৯৯১২৬৯৩৬২২০০০২৮৮। কিন্তু তার আইডিতে দেখা গেছে একজন পুরুষের ছবি সংযুক্ত রয়েছে। এটি সন্দেহ হয় আদালতের। এ ঘটনাকে আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে মর্মে ট্রাইব্যুনাল আদেশ দেন।
একই আদালতের পিপি ও আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব খান বলেন, আদালতের আদেশ অনুযায়ী সমিতির ফোরামে বিষয়টি উত্থাপন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২১ জুলাই রাতে দুই বন্ধুর সঙ্গে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে রওনা হওয়ার পর নিখোঁজ হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ এর শিক্ষার্থী মো. সাইদুর রহমান পায়েল। নিখোঁজের একদিন পর ২২ জুলাই মুন্সিগঞ্জ উপজেলার ভাটেরচর সেতুর নিচের খাল থেকে পায়েলের লাশ উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানা পুলিশ। এরপর হানিফ পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার জনিকে ঢাকার মতিঝিল এবং চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আরামবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে তাদের জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গজারিয়া এলাকায় গাড়ি যানজটে পড়ায় প্রস্রাব করার কথা বলে বাস থেকে নেমেছিলেন পায়েল। বাস চলতে শুরু করলে তিনি দৌড়ে এসে ওঠার সময় দরজার সঙ্গে ধাক্কা লেগে সংজ্ঞা হারায়। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার বদলে তার মুখ থেঁতলে দিয়ে দায় এড়াতে ভাটেরচর সেতু থেকে নিচের খালে ফেলে বাস নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন আসামিরা। গজারিয়া থানার পুলিশ ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর তিন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ মামলাটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরে প্রজ্ঞাপন জারি করে।