পাহাড়ে লিচু ও আমের বাম্পার ফলন

109

পাহাড়ে এবার প্রচুর লিচু, আম ও কাঁঠাল উৎপাদন হয়েছে। তবে জেলার বাহিরে চলে যাচ্ছে এসব মৌসমী ফল। যার ফলে স্থানীয় বাজারে মৌসমী ফলের দাম অনেকটা বেশি। একটি প্রবাদ আছে-আমতলায় নাকি আমের দাম বেশি! জেলার বাহিরে এসব মৌসমী ফল চলে যাওয়াতে দাম ক্রেতাদের নাগালের বাহিরে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। ইতিমধ্যে আনারস ও কাঁঠাল প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছে গেছে। এখন লিচু ও আমের মধুর রসে ভরপুর করছে গোটা পাহাড়জুড়ে। প্রতিটি বাগানে স্বাদের লিচু ও পাকা আমগাছের ঢালে ঢালে বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে ঝুলতে দেখাগেছে। কি যে সুন্দর লাগছে প্রকৃতির এই সম্পদগুলোকে।
স্থানীয় লিচু ও আম বাগানের মালিক বৌদ্ধ রঞ্জন চাকমা জানিয়েছেন, গতবারের চেয়ে এবার লিচু ও আম অনেক ভাল ফলন এসেছে। লকডাউনের জন্য যানবাহন ও নৌ-পথের লঞ্চ ও বোট না চলাতে এত দিন মৌসমী ফলের দাম পাইনি। গত ১জুন থেকে যানবাহন চালু হওয়াতে মৌসমী ফলের দাম ভাল পাওয়া যাচ্ছে। এতে মৌসমী ফল চাষিরা অনেকটা খুশি। চাষীরা বলেন, অন্যান্য বছর ব্যবসায়িরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে লিচু, আম, কাঁঠাল ও আনারসের বাগান কিনে আসতেন এবার লকডাউনের কারণে সেটা করতে পারেনি ব্যবসায়িরা। অন্যদিকে কাপ্তাই লেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না থাকায় যাতায়াতেও সমস্যা হচ্ছে উভয়ের। এখন বিভিন্ন উপজেলা হতে বাগান মালিকেরা তাদের লিচু ও আম শহরের সমতাঘাট ও পৌর ট্রাক টার্মিনাল এনে বিক্রি করতে হচ্ছে। দীর্ঘ দিন লকডাউন থাকায় অনেক আনারস, কাঁঠাল ও আম বিক্রি করতে না পেরে নদীতে ফেলে দিয়েছেন। এখন গণপরিবহন খোলায় লিচু ও আম বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় ক্রেতাদের অভিযোগ জেলার বাহির থেকে প্রবেশ করা কিছু অসাধু ব্যবসায়ি রয়েছে তারা উপজাতিদের কাছ থেকে কম-দামে লিচু ও আম কিনে বনরুপা বাজার, রিজার্ভ বাজার ও কলেজগেট এলাকায় বেশি দামে বিক্রি করছে। এসব প্রতারক ব্যবসা বন্ধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এসব ব্যবসায়িরা গলাকাটা দামে ক্রেতাদের কাছে লিচু ওআম বিক্রি করছে। আবার চট্টগ্রাম থেকে কিছু ডাকাত ব্যবসায়ি এসে লিচু ও আম কিনে ট্রাক ভরে নিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে স্থানীয় ভাবে লিচু ও আমের দাম বেশি। যে লিচু স্থানীয় বাজারে শ’ ১২০ টাকা বিক্রি হতো সে লিচু এখন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা শ’। আম কেজি ২০ টাকা বিক্রি হতো আর এখন বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮০-৯০ টাকা।
ব্যবসায়িরা বলেন, আগে আমরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে উপজাতিদের কাছ থেকে কাঁঠাল, আনারস, লিচু ও আমের বাগান ক্রয় করতাম। এবার সেটি হচ্ছে কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের কারণে। যার ফলে বেশি দামে ফলমূল কিনতে হচ্ছে। আর বেশি দামে কিনলে তো বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। কাঁচা মালের ব্যবসা এ ধরনের হয়ে থাকে। রাঙামাটির মৌসমী ফল বাজারে থাকে সর্বোচ্চ ২০-২৫ দিন। আর এই ২০-২৫ দিনেই আমাদের ব্যবসা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, গতবারের চেয়ে এবার লিচু ও আমের ফলন ভাল হয়েছে। এবার জেলাতে প্রায় আড়াই কোটি টাকার লিচু ও আম বিক্রি করা হয়েছে। লিচুর ও আমের বাম্পার ফলন হয়েছে।জেলাতে প্রায় ১৮৮২ হেক্টর বাগানে লিচু ও ৩৩৭০ হেক্টর বাগানে আমের চাষ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ৯ মেট্রিক টন লিচু এবং প্রতি হেক্টর জমিতে ১৫ মেট্রিক টন আম ফলন হয়েছে। লকডাউনের জন্য চাষীরা এবার তেমন দাম পাচ্ছেনা। তিনি বলেন, মৌসমী ফল নিয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রদর্শনী হয়ে থাকে ওই প্রদর্শনীতে কৃষি বিভাগ চাষীদের ভাল ফরনের জন্য পুরস্কৃত করে থাকেন। এছাড়াও মৌসমী ফল চাষীদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাছের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কারিগরি পরামর্শ দিয়ে থাকি।