পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন দুই লক্ষাধিক মানুষ

34

কক্সবাজার জেলায় বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন দুই লক্ষাধিক মানুষ। এর মধ্যে পর্যটন শহর কক্সবাজার পৌরসভার অভ্যন্তরে ছোট-বড় অনেক পাহাড়ে লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করছেন। পাহাড় কেটে বা পাহাড়ের পাদদেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের তালিকাও তৈরি করেছে জেলা প্রশাসন।
ওই তালিকা মতে, কক্সবাজার পৌরসভার অভ্যন্তরে অতি ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ৯৯৮টি পরিবার। কক্সবাজারে ৩ দিন ধরে টানা বর্ষণ চলছে। ফলে পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতি বছর পাহাড়ধসে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়লেও সেদিকে কোন খেয়াল নেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী এসব মানুষের। এদিকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীরা বলছেন, তাদের থাকার আর কোন ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি জেনেও পাহাড়ে বাস করছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শহরের ১২টির বেশি পাহাড়ে ১৭ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করছে অন্তত দেড় লাখ মানুষ। শহরের আদর্শগ্রাম, কলাতলী, সিটি কলেজ এলাকা, পাহাড়তলী, ঘোনাপাড়া, খাজামঞ্জিল, বৈদ্যেরঘোনাসহ বিভিন্ন এলাকার ১২টির বেশি পাহাড়ে বসবাসকারী দেড় লাখের বেশি মানুষ চরম ঝুঁকিতে আছে। প্রবল বর্ষণ অব্যাহত থাকলে পাহাড়ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে শহরে ১০টির বেশি পাহাড়ধসের ঘটনায় কমপক্ষে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বৈদ্যেরঘোনা পাহাড় ঘুরে দেখা যায়, শত শত মানুষ উঁচু পাহাড় কেটে কাঁচা ঘরবাড়ি তৈরি করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় নারী-শিশুরা গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় গৃহবধূ সমিরা বেগম বলেন, দেড়শ ফুট নিচে গিয়ে নলকূপ থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু বৃষ্টির জন্য পানি আনা সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টির কারণে পাহাড় থেকে নিচে নামার রাস্তাটি পিচ্ছিল ও কাদাযুক্ত হয়ে পড়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, পাহাড় কাটা বন্ধ ও বসতি উচ্ছেদের জন্য গত জানুয়ারি থেকে অন্তত ২০টি অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় শতাধিক নতুন করে তৈরি ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করা হলেও আরও ১৫ হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এসব স্থাপনা উচ্ছেদে যৌথ অভিযান দরকার।
শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, বর্ষণ শুরু হওয়ায় পাহাড় কাটার মাটি নরম হয়ে ধসে পড়েছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকলে এ পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, বর্ষাকাল এলেই পাহাড়ে বসবাসকারী লাখো মানুষকে নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। পাহাড়ধসে প্রতিবছর বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু মাথা গোঁজার বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়ায় পাহাড় থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনা যাচ্ছে না।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, পাহাড়ধসে প্রতি বছর প্রাণহানি ঘটলেও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। নিজেরা না সরলে তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হবে বলে জানান তিনি। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস বন্ধে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন আরও জানান, কক্সবাজার পৌরসভায় পাহাড়ের পাদদেশে বা পাহাড়ের চ‚ড়ায় ৯৯৮টি পরিবার অতি ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এসব পরিবারের জন্য একটি স্থানে অবকাঠামো তৈরি করে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে জীবন-জীবিকার একটি প্রস্তাবনা দাখিল করা হয়েছে। এসব পাহাড়ে বনায়ন করে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি ঝুকিপুর্ণদের বিপর্যয় ও সম্পদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যাবে।