পাহাড়ধস-জলাবদ্ধতা এখনও দুর্যোগ হিসেবে রয়ে গেছে

38

খাতুনগঞ্জ এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি নিরুপণ এবং চট্টগ্রামে শিল্পখাতে ঝুঁকি প্রাক্কলনের লক্ষ্যে চিটাগাং চেম্বার ও বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের যৌথ উদ্যোগে ‘ইকনোমিক ইমপেক্ট অব ওয়াটারলগিং ইন লোকাল ট্রেড এ স্ট্যাডি ইন খাতুনগঞ্জ, চট্টগ্রাম এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টর রিস্ক প্রোফাইল ফর চট্টগ্রাম’ শীর্ষক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন বলেন, ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে প্রকল্প গ্রহণ করা হলে তা বাস্তবায়নযোগ্য হয় এবং সুফল পাওয়া যায়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাহাড়ধস এবং জলাবদ্ধতা এখনোও দুর্যোগ হিসেবে রয়ে গেছে। তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণে মাস্টারপ্ল্যান যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি খাত একসাথে কাজ করতে হবে। ইতোমধ্যে ডেল্টা প্ল্যান করা হয়েছে এবং এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে, যার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ঝুঁকি কমানো হচ্ছে। ২০৪১ সালে প্রতিটি এলাকা হবে পর্যটন এলাকা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম সম্পর্কিত যেকোনো প্রকল্প একনেকে পাস করার ক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন পরিকল্পনা সচিব।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, প্রতি বছর বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে কোটি কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং সরকার রাজস্ব হারায়। চাক্তাই খাল, রাজাখালী খালসহ সংশ্লিষ্ট খালগুলোর মুখ ভরাট হওয়ার কারণে জোয়ার ও বৃষ্টির পানি আটকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রাখার গোডাউনগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সিডিএ’র অধীনে ৫ হাজার ৬শ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তবে এখনো উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিভিন্ন সময়ে করা সমীক্ষা, গৃহীত পরিকল্পনা ও জাইকা রিপোর্ট বাস্তবায়নের দাবি জানান।
এনআরপি’র উপ-প্রধান ও প্রকল্প পরিচালক ড. নুরুন নাহার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি খাতকে সহায়তার লক্ষ্যে ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় খাতুনগঞ্জ সংক্রান্ত সমীক্ষার সুপারিশসমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সব প্রকল্পের মধ্যে সমন্বয়ের লক্ষ্যে পরিকল্পনা বিভাগে একটি ইউনিট করা হবে। এছাড়া ঝুঁকি ও বাধা মোকাবেলায় তথ্য সংগ্রহ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইউএনডিপি’র প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট আরিফ আবদুল্লাহ খান বলেন, ভূমিকম্প, জলাবদ্ধতা, জলোচ্ছ¡াস ইত্যাদি জলবায়ুজনিত দুর্যোগ ও পরিবর্তন শিল্পখাতকে কিভাবে প্রভাবিত করবে তা ভবিষ্যৎবাণী করা সম্ভব না। তাই ঝুঁকি মূল্যায়ন করে বিনিয়োগ করা ও ভবিষ্যতের প্রস্তুতি কি হবে তা উদ্ভাবন করা এই সমীক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। এসডিজি অর্জনে ৯২৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে যার ৭০ শতাংশ দেশীয় বিনিয়োগ হতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
চেম্বার পরিচালক সৈয়দ জামাল আহমেদ বলেন, খালে পানি না থাকলেও রাস্তায় পানি থাকে। ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন, খাতুনগঞ্জ এলাকাকে বাণিজ্যিক জোন ঘোষণা এবং প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের দাবি জানান।
সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর জলাবদ্ধতার কারণে খাতুনগঞ্জে কি পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় তা নিরুপণে বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা পরিচালনা ও তা কার্যকর করা এবং একটি ডাটাবেইজ তৈরির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
অন্যান্য বক্তারা চট্টগ্রামে বেদখল ও ভরাটকৃত খালসমূহ পুনরুদ্ধার, নদীর পাড় উন্নয়ন করে পর্যটন প্রসার, সিটি গভর্ন্যান্স চালু করা, অপরিকল্পিত নগরায়ন বন্ধ করা, প্রাকৃতিক জলাধার রক্ষা করা, উন্নয়ন কর্মকান্ডে ডিজিটাল ম্যাপিং ব্যবহার করা, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, বিভিন্ন খাল উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্ত ছিন্নমূল মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করা, ভূমিধস বন্ধে পরিকল্পনা গ্রহণ, এলাকার জনগণকে সম্পৃক্ত করা, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বার্জের মাধ্যমে খাতুনগঞ্জ এলাকায় পণ্য পরিবহন, জাইকা স্ট্যাডি অনুযায়ী রিং রোড বাস্তবায়ন, নালা ও খালে বর্জ্য নিক্ষেপের ক্ষেত্রে জনগণের আচরণ পরিবর্তন করা এবং দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
এসময় ন্যাশনাল রেসিলিয়েন্স প্রোগ্রামের (এনআরপি) উপ-প্রধান ও প্রকল্প পরিচালক ড. নুরুন নাহার, ইউএনডিপি’র প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট (ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড ডিজএস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট) আরিফ আবদুল্লাহ খান, বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, জেলা প্রশাসনের ডিডিএলজি (উপ-সচিব) ইয়াসিন পারভিন তিবরিজী, চেম্বার পরিচালক ছৈয়দ ছগীর আহমদ আর্কিটেক্ট ও আরবান প্ল্যানার জারিনা হুসেন, সিডিএ’র প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. শহীদুল ইসলাম খান ও প্রধান প্রকৌশলী হাবীব মহিউদ্দিন, চসিক’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, ওয়াসার তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল আমিন, উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক সামিলা রীমা ও ক্যাব’র সাধারণ সম্পাদক ইকবাল বাহার সাবেরী বক্তব্য রাখেন। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের ফ্যাকাল্টি অব আর্কিটেকচার এন্ড প্ল্যানিং এর ডিন প্রফেসর ড. খন্দকার সাব্বির আহমেদ ও ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং’র পরিচালক ড. মোল্লা মো. আওলাদ হোসেন। অন্যদের মধ্যে চেম্বার পরিচালক মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), এসএম আবু তৈয়ব ও মো. জহুরুল আলমসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।