পাহাড়তলীতে চাঁদপুরগামী সাগরিকা ট্রেন লাইনচ্যুত

101

রেল সেবা ও নিরাপত্তা সপ্তাহ চলাকালেই চাঁদপুরগামী ‘সাগরিকা এক্সপ্রেস’ ট্রেন ইঞ্জিনের আটটি চাকা লাইনচ্যুত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৮ টার দিকে পাহাড়তলী স্টেশন ছেড়ে যেতেই ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়ে। তবে সবধরনের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। সহকারী স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টসম্যানের ভুলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটায় দুইজনকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তাকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে চাঁদপুরগামী সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যায়।
৭টা ৫০ মিনিটে ট্রেনটি পাহাড়তলী স্টেশনে পৌঁছায়। পাহাড়তলী স্টেশন ত্যাগের পরপরই সাগরিকা ট্রেনের ইঞ্জিনের আটটি চাকা লাইনচ্যুত হয়। ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে আরেকটি রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ইঞ্জিনটি উদ্ধার করে লোকোশেডে পাঠানো হয়। তবে দুর্ঘটনাস্থলে তিনটি লাইন থাকায় বাকি দুটি লাইনের মধ্যে একটি ব্যবহার করে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। বাকি একটি লাইনে সবধরনের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়। ঘটনার পরপরই রেলওয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পাহাড়তলী স্টেশনের দায়িত্বরত একজন বলেন, এই লাইনে পয়েন্টসম্যান দায়িত্বরত থাকলেও ঘটনার আগে লাইন সম্পর্কে বুঝে উঠতে পারেনি। লাইন পরিবর্তনের যে সিস্টেম আছে সেটি নির্দিষ্ট সময়ে পরিবর্তন না করায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। দুর্ঘটনার পরেও পাহাড়তলী স্টেশন থেকে ৮টা ৪৫ মিনিটে চট্টলা এক্সপ্রেস, ৯টা ১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, ১০টা ৪০ মিনিটে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। এছাড়াও চাঁদপুর থেকে মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন ৯টা ৩০ মিনিটে পাহাড়তলী স্টেশন পার হয়ে চট্টগ্রাম স্টেশনের উদ্দেশ্যে চলে যায়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশগুপ্ত পূর্বদেশকে বলেন, ডাবল লাইন থাকায় দুর্ঘটনার পরেও ট্রেন চলাচলে কোনো সমস্যা হয়নি। দুর্ঘটনার এক ঘন্টা ২৮ মিনিট পর সাগরিকা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। শান্টিং করে আরেকটি ইঞ্জিন দিয়ে এটি চালিয়ে দিয়েছি। দায়িত্বে যে মাস্টার ও পয়েন্টসম্যান ছিল তাদেরকে আমরা প্রাথমিকভাবে দায়ী করেছি। নিয়ম হচ্ছে, পয়েন্ট সেট করবে, লগ করবে তারপর সিগন্যাল হবে। কিন্তু সকালে সুবর্ণসহ দুটি ট্রেন গেছে; তখন সবকিছু ঠিক ছিল। দুটি ট্রেন যাওয়ার পরে যে সিস্টেম চালু করার কথা সেটি করা হয়নি। পয়েন্টসম্যানের এটি সেট করার কথা এবং মাস্টার নিশ্চিত হবে- এটাই নিয়ম। কিন্তু কোনোটিই করা হয়নি। রেলের ধারাভঙ্গের কারণে রাকিবুল ইসলাম, আব্দুল কাইয়ুম ভুঁইয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল পরিবহন বিভাগের কয়েকজন জানান, সহকারী স্টেশন মাস্টার ২০১৯ সালে চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। অভিজ্ঞতা না থাকলেও তাকে গুরুত্বপূর্ণ এই স্টেশনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন এক রেল কর্মকর্তার আত্মীয় হওয়ায় তাকে শহরের কাছাকাছি এই স্টেশনে পদায়ন করা হয় বলে জানা গেছে। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে অনভিজ্ঞ সহকারী স্টেশন মাস্টার বদলি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।