পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়নে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে

32

রাঙামাটি প্রতিনিধি

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা সদরে চেঙ্গি নদীর ওপর দিয়ে নির্মিত ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে নানিয়ারচর সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় গণভবন থেকে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে চারটি প্রকল্পের সঙ্গে পার্বত্য এলাকার সর্ববৃহৎ এ সেতুটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘ দুই দশক ধরে অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করেছিল। আমি ক্ষমতায় এসে পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদন করায় বর্তমানে পার্বত্য এলাকায় স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করছে এবং সেখানকার আর্থ-সামাজিকসহ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাÐ বাস্তবায়ন করছে সরকার।
চেঙ্গি নদীর ওপর দিয়ে নির্মিত ৫০০ মিটারের নানিয়ারচর সেতুর গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওই সেতু নির্মাণের ফলে পার্বত্য এলাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। উন্মোচিত হয়েছে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত। সেতুটি নির্মিত হওয়ায় সড়ক পথে রাঙামাটি জেলা সদর হতে নানিয়ারচর, লংগদু ও দীঘিনালা উপজেলা হয়ে সরাসরি বাঘাইছড়ি উপজেলার মারিশ্যা পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারবে এলাকার মানুষ। যাতায়াতের পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করা সহ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, পর্যটন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাপক সুবিধা পাবে এলাকাবাসী। ফলে স্থানীয় লোকজনের আর্থ-সামাজিক ও জীবনমান উন্নয়নসহ পার্বত্য এলাকার অর্থনৈতিক চিত্র দ্রæত পাল্টে যাবে।
চারটি প্রকল্পের সঙ্গে নানিয়ারচর সেতুসহ কক্সবাজারের বালুখালী-বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত সড়কও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব কঠিন কাজগুলো দক্ষতার সঙ্গে সফলভাবে বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিশে^ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, সারা দেশের মহাসড়ক ও সড়কের নিরাপত্তায় সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পথচারীদের সবসময় সতর্কভাবে চলাফেরা করতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- দীপংকর তালুকদার এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন, নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলি রহমান তিন্নিসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামরিক বেসামরিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, নানিয়ারচর উপজেলা সদরে চেঙ্গি নদীর ওপর দিয়ে আধা কিলোমিটার (৫০০ মিটার) দৈর্ঘ্যরে ওই সেতুটির নির্মাণ কাজ ২০১৬ সালের নভেম্বরে শুরু হয়ে তা শেষ হয় ২০২১ সালের ৩০ জুন। জমি অধিগ্রহণসহ নির্মাণ কাজে মোট ব্যয় হয়েছে ২২৫ কোটি টাকা। এটির নির্মাণ কাজ করেছে সেনাবাহিনীর ২০ ও ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। সেতুটি নির্মাণে রাঙামাটি জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগে সংযুক্ত করবে নানিয়ারচর, লংগদু, বাঘাইছড়ি এবং খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলাকে। বর্তমানে নানিয়ারচর উপজেলা সদর হতে লংগদু উপজেলা সদর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণকাজ চলছে। নির্মাণ কাজে আরও ১৬ কিলোমিটার সড়ক অবশিষ্ট রয়েছে। লংগদু পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ শেষ হলে রাঙামাটি সদর হতে নানিয়ারচর, লংগদু ও দীঘিনালা হয়ে সরাসরি সাজেক ও বাঘাইছড়ি উপজেলার মারিশ্যা পর্যন্ত সড়ক পথে যানবাহন চলাচল করবে।