পানি সরবরাহে অনিয়ম বন্ধ না হলে আন্দোলন

71

কোন এলাকায় এক সপ্তাহ আবার কোন কোন এলাকায় মাসেরও বেশি সময় ধরে পানি নেই। আবার ঘোলা পানি, পানি না দিয়েও বিল করা, রাস্তা-ঘাট কেটে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি এবং কিছু কর্মকর্তার অসদাচারণের এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হচ্ছে বলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে অভিযোগ করেছেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
গতকাল রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহর দপ্তরে মতবিনিময়কালে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
এ সময় নগরীর বিভিন্ন এলাকার এসব সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং পবিত্র রমজানে পানি সবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার আহব্বান জানান তিনি।
‘ঐক্য চাই’- শীর্ষক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা খোরশেদ আলম সুজন মতবিনিময় সভায় বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনা এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের ফলে চট্টগ্রাম ওয়াসা স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে চলেছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর পুরো চট্টগ্রামে সুপেয় পানি সরবরাহ এবং স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণের কারণে পুরো নগরীতে উন্নয়ন কর্মকান্ডের উৎসবে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে এসব উন্নয়ন। নগরবাসীর পানির চাহিদাকে মাথায় রেখে পানির উৎস বৃদ্ধি এবং সঞ্চালন লাইনের কাজও চলছে পুরোদমে। এসব উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফলে ওয়াসা যখন আগের দুর্নাম মুছে নগরবাসীর আস্থার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে, ঠিক তখনই হঠাৎ করে নগরজুড়ে বিশুদ্ধ পনির হাহাকার শুরু হয়েছে। যেখানে সরকার সুপেয় পানির জন্য হাজার কোটি টাকা খরচ করছে, সেখানে নগরবাসী কী কারণে সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তা অবশ্যই ভেবে দেখার বিষয়।
তিনি বলেন, ওয়াসার রাস্তা খোড়াখুড়ি নগরবাসীর যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে এখনও ওয়াসার সঞ্চালন লাইন নাই। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়াসার পানি সরবরাহ নাই কিন্তু প্রতিনিয়ত বিলের বোঝা বহন করতে হচ্ছে গ্রাহককে। একদিকে ওয়াসার পানি নাই, অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে ওয়াসার এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীকে ম্যানেজ করে অসাধু ব্যবসায়ীগণ গ্যালনে ভরে ওয়াসার পানি বিক্রি করছে। বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানির সাথে কালো-নোংরা দুর্গন্ধযুক্ত পানি গ্রাহকের পানির ট্যাংকে জমা হচ্ছে।
রমজানে নিয়মিত পানি সরবরাহ অব্যাহত রাখার আহব্বান জানিয়ে সুজন বলেন, রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ইবাদত-বন্দেগী যাতে পানির সমস্যায় বাঁধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়া যেসব এলাকায় ওয়াসার সঞ্চালন লাইন নাই, সেসব এলাকায় রমজান মাসে ওয়াসার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
মিটার নষ্ট হলে ঘুষ ছাড়া নতুন মিটার সংযোজন করা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ওয়াসার অভ্যন্তরে সরকার বিরোধী কেউ ঘাপটি মেরে বসে জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলছে কিনা সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বিদ্যুৎ এবং গ্যাস বিভাগের মতো ওয়াসার পানির বিলও যাতে মোবাইলে প্রদান করা যায় এবং গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে একটি হটলাইন নম্বর চালু খুব প্রয়োজন।
দ্রুততার সাথে অসমাপ্ত উন্নয়ন কর্মকান্ডের কাজ সমাপ্ত করে সরকারের উন্নয়নের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আহব্বান জানান তিনি।
প্রায় শতাধিক এলাকার লোকজন নিয়ে ওয়াসা কার্যালয়ে উপস্থিত হয় সুজন। এরপর বিভিন্ন সমস্যাগুলো যখন একে একে বর্ণনা করছিলেন তিনি।
অভিযোগ শোনার পর ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, সত্যিকার অর্থেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক অর্থ বরাদ্দের কারণেই নগরবাসীর সুপেয় পানির নিশ্চিত করতে কাজ করছে ওয়াসা। ইতিমধ্যে অনেকগুলো প্রকল্প চলমান রয়েছে। আমাদের প্রকৌশলীগণ নতুন লাইন স্থাপনে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবে গরমে পানির ব্যবহার বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, সংকট নিরসনে কাজ চলছে। গ্রাহকের পাইপলাইন লিকেজ হয়ে গেলে, সেখানে ময়লাযুক্ত হয়ে পানি দুর্গন্ধ হচ্ছে। তবে ওয়াসার লাইন লিকেজ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তারপরও দুর্গন্ধযুক্ত পানি পেলে সাথে সাথে ওয়াসার কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করবেন। ওয়াসার পানি বিক্রিতে ওয়াসার কোন ধরনের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফজলুল্লাহ বলেন, ২০২১ সালের পর চট্টগ্রামে আর পানির সংকট থাকবে না। তখন চট্টগ্রামে আর রাস্তাও কাটা হবে না। শহরের আশপাশের কিছু জায়গায় পানি সংকট রয়েছে। ওয়াসার যে প্রকল্পগুলো চলমান সেগুলোর কাজ শেষ হলে পানির সংকট আর থাকবে না।
রমজানে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের জন্য ইতিমধ্যে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ফজলুল্লাহ বলেন, রোজায় পানি সরবরাহ সচল রাখতে সব জায়গায় জনবল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেনারেটরগুলো সচল রাখা হচ্ছে, যাতে বিদ্যুৎ না থাকলেও পানি সরবরাহ ঠিক থাকে। পাশাপাশি তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে ভ্রাম্যমাণ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত গ্রাহকদের মধ্য থেকে পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলী এলাকার বেশ কিছু অভিযোগ নেন ওয়াসা এমডি। এসব সমস্যা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দেন।
এদিকে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের খোরশেদ আলম সুজন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে মেগা প্রকল্প করা হলেও এগুলোর সুফল সাধারণ মানুষের কাছে যথাযতভাবে যাচ্ছে না। পানি কষ্ট থেকে শুরু করে নানা ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এখানে কোন ধরনের সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখতে বলেছি। সমস্যাগুলো আমরা তুলে ধরেছি। ওয়াসার এমডি এক সপ্তাহের সময় চেয়েছেন। এরমধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে জনগণের পক্ষে আমরা আন্দোলনে যাব।
মতবিনিময় সভায় ওয়াসার সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদুল আলম, আরিফুল ইসলাম, রাজনীতিবিদ হাজী মো. ইলিয়াছ, এসএম আবু তাহের, নাগরিক উদ্যোগের সদস্য সচিব হাজী হোসেন কোম্পানী, আব্দুল আজিম, আব্দুর রহমান মিয়া, হাবিবুর রহমান, কুতুব উদ্দিন, এজাহারুল হক, নিজাম উদ্দিন, ছালেহ আহমদ জঙ্গী, নুরুল কবির, এএসএম জাহিদ হোসেন, সমীর মহাজন লিটন, সাইফুল্লাহ আনসারী, সোলেমান সুমন, শেখ মামুনুর রশীদ, জাহাঙ্গীর আলম, সফি আলম বাদশা, স্বরূপ দত্ত রাজু, হাসান মো. মুরাদ, রকিবুল আলম সাজ্জী, নগর ছাত্রলীগ সভাপতি এম. ইমরান আহমেদ ইমু, মো. বেলাল, খোরশেদ আলম, মনিরুল হক মুন্না, হাসান মুরাদ, উৎপল দত্ত, আশীষ সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।