পানি প্রবেশ ঠেকাতে পাউবোর জরুরি প্রকল্প

34

ঘূর্ণিঝড় ফনী ও বন্যার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বেড়িবাঁধ সংস্কারে আপদকালীন জরুরি কাজ হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ভাঙনরোধে প্রাথমিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী ও সীতাকুন্ড উপজেলায় ২৬টি প্যাকেজে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সাগর, নদী ও খালের বিভিন্ন অংশে খন্ডিতভাবে কাজগুলো করা হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছে। বাকি কাজগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর পূর্বদেশকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ও সাম্প্রতিক বন্যায় যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানেই কিছু জরুরি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে এলাকাবাসীর জানমাল ও অবকাঠামো রক্ষা পাবে। অত্যন্ত স্বচ্ছ ও টেকসই কাজ করতে ঠিকাদারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
পাউবো সূত্র জানায়, বাঁশখালীতে ১৪টি প্যাকেজে তিন কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা, আনোয়ারায় চারটি প্যাকেজে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা, পটিয়ায় সাতটি প্যাকেজে প্রায় এক কোটি টাকা ও সীতাকুন্ডে একটি প্যাকেজে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার জরুরি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড (ডিপিএম) সিস্টেমে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় এসব প্রকল্পের কাজ করা হবে।
জানা যায়, পটিয়ার শ্রীমাই খালের ১৩টি স্পট জরুরি কাজের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ভাটিখাইন, ছনহরা, হাইদগাঁও, ভাটিখাইন বাইপাস সেতু এলাকায় প্রায় সাতটি প্যাকেজে ৭০০ মিটার কাজ হবে। বাঁশ, বল্লী, সিনথেটিক ব্যাগ দিয়ে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে এসব কাজ হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শওকত ইবনে শহিদ বলেন, ‘ছনহরা এলাকাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এলাকাটি সম্প্রতি মন্ত্রী পরিদর্শন করেছেন। ১৯৮৬ সালের এলাকাবাসী জমি দেয় নাই বলে সেখানে স্থায়ী বাঁধ হয়নি। সেসময় যা কাজ হয়েছে, তা নদী ঘেঁষে হওয়ায় দ্রুত পাড় ভেঙে যায়। সেখানে নতুন বেড়িবাঁধ করা হবে। এর বাইরে শ্রীমাই খালের ১৩টি স্পটে সাতটি প্যাকেজে প্রায় কোটি টাকার আপদকালীন জরুরি কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। ঈদের পরপরই জরুরি প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’
পাউবোর নেয়া জরুরি কাজের মধ্যে বাঁশখালীর পাঁচটি ইউনিয়নে ১৪টি প্যাকেজে প্রায় তিন কোটি ৬৫ লক্ষ টাকার কাজ হবে। এর মধ্যে খানখানাবাদ ইউনিয়নের বাজার এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত অংশের বাঁধ মেরামত ও উঁচুকরণ, ঈশ^রবাবুর হাট সংলগ্ন এলাকায় জিওব্যাগ দ্বারা আপদকালীন প্রতিরক্ষা কাজ, গন্ডামারা ইউনিয়নস্থ পূর্ব বড়ঘোনা এলাকার বাঁধে ক্ষতিগ্রস্ত অংশে বাঁধ মেরামত ও উঁচুকরণ কাজ, সরল ইউনিয়নের জালিয়াঘাটা এলাকায় কাটাখালী খালে বাম তীরে বাঁশ, বল্লি, ড্রাম সিট, সিনথেটিক ব্যাগ দ্বারা স্লোপ প্রতিরক্ষা কাজ, সাধনপুর ইউনিয়নের রাতাখোর্দ্দ জেলেপাড়া এলাকার সাঙ্গু নদীর বাম তীরে জিও ব্যাগ দ্বারা প্রতিরক্ষা কাজ, ছনুয়া ইউনিয়নের ছনুয়াঘাট এলাকার বাঁধ মেরামত ও উঁচুকরণ এবং জিওব্যাগ দ্বারা ঢাল প্রতিরক্ষামূলক কাজ, খুদুকখালী (কেরানীঘোনা) এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত অংশে জরুরি বাঁধ মেরামত ও উঁচুকরণ কাজ। এ পাঁচ ইউনিয়নে চার দশমিক ৩৩৭ কিলোমিটার এলাকায় এসব কাজ হবে।
বাঁশখালীর সহকারী প্রকৌশলী ধীমান চৌধুরী বলেন, ‘বিভিন্ন ইউনিয়নে ভাঙন কবলিত এলাকা দ্রæত সংস্কারে জরুরি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয় হবে। আপদকালীন ভাঙন ঠেকাতে এসব প্রকল্প কাজের সুফল পাবে জনগণ।’
আনোয়ারায় চারটি প্যাকেজের মধ্যে রায়পুর ইউনিয়নের ফকিরহাট এলাকায় ১০০মিটার জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ে ১৯লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা, সারেং এলাকার ১০০ মিটারে ১৯লক্ষ ৯৮ হাজার টাকার জরুরি কাজ চলছে। এছাড়া লামা বাজার এলাকার ১০০ মিটার জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ে ১৯ লক্ষ টাকা, লামার বাজারের দক্ষিণে চাঁনমিয়া মসজিদ ও নাপিতখালী এলাকার ২০০ মিটারের জন্য ১৯ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
আনোয়ারার সহকারী প্রকৌশলী ফারাইজুল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ পরিদর্শন করে জরুরি প্রকল্পের আওতায় চারটি প্যাকেজে কাজ চলছে। এর মধ্যে দুটি ফকিরহাট ও সারেং অংশে কাজ চলমান আছে। লামার বাজার ও নাপিতখালীতে ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে।’
তিনি বলেন, ‘এসব কাজে ঠিকাদার পাওয়া যায় না। রেট খারাপ থাকায় কেউ কাজ করতে চায় না।’
সীতাকুন্ডের বাঁশবাড়িয়ার উত্তরাংশে সিকদার খালের উপর স্লুইস গেট ১০০ মিটার এলাকার বাঁশ, বল্লি ও সিনথেটিক বস্তা দিয়ে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার কাজ করা হবে। সীতাকুন্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবু কাসেম ফজলুল হক বলেন, সীতাকুন্ডে সম্প্রতি বড় প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ফনী ও বন্যার কারনে স্লুইস গেটের পাশে কিছু জায়গা ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে জরুরিভাবে এ কাজটি করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা।