পানির অপর নাম জীবন

94

এই প্রতিষ্ঠিত সত্য কথাটি ধারণ করে আমাদের বেড়ে ওঠা। সময়ে সময়ে পানি আমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয় এবং জীবন ঝুঁকিতে থাকে। বর্তমানে নাগরিক সমাজ অধিক সচেতন। বিশেষ করে খাদ্য এবং পানীয় এর ব্যপারে। আমার জানা এবং তথ্য মতে রাজধানীতে পানি ফুটিয়ে পান করেন শতকরা আটান্ন ভাগ মানুষ। বিশেষায়িত (বোতলজাত) পানি এবং ফিল্টার এর পানি ব্যবহার করেন তেত্রিশ শতাংশ। অবশিষ্ট নয় শতাংশ মানুষ কূপ, নলকূপ এবং বিপাকে পড়ে ওয়াসার পাইপ লাইনের পানি পান করে। ওয়াসার সরবরাহকৃত পাইপ লাইনের পানি ফুটিয়ে পান করার পরে দুর্গন্ধের ভাব থেকে যায়। ঐ পানি ফুটিয়ে পান করার পরেও মানুষ ডায়রিয়া এবং পানিবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। হাসপাতালে যাতায়াত করলে বুঝা যায়, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত কত সংখ্যক রোগী প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এই পরিসংখ্যান শুধু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বর্তমান।
আামার এতসব কথা বলার পিছনে উদ্দেশ্য কি? জানতে হলে পাঠক সমাজ আমার সাথে যোগ দিন। ২০ এপ্রিল ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে ঢাকা ওয়াসার সুযোগ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব তাসকিন এ খান সংবাদ সম্মেলন করে রাজধানীবাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন, ঢাকা ওয়াসার পাইপ লাইনে সরবরাহ করা পানি শতভাগ “সুপেয় এবং নিরাপদ”। আমি তাঁহার এই বক্তব্যের সাথে যদি একমত পোষন করি, তাহলে রাজধানীর লাখ লাখ মানুষের সাথে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করব। যেহেতু আমি ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত সুপেয় পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল করছি। শুধু তাই নয়, রান্নাবান্নাসহ অন্যান্য কাজেও ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছি। তিনি তাঁহার জ্ঞান সর্বস্ব বক্তব্য প্রকাশ করার অর্থ হচ্ছে, নিজেকে উর্ধ্বে রাখা এবং আমজনতার কাছে নিজেকে সমাদৃত করা। তিনি ঢাকা ওয়াসার উচ্চ পদে আসীন হয়ে এই বক্তব্য দেওয়ার পিছনে উদ্দেশ্য, জনগণকে ধোকা দিয়ে বোকা বানানোর চেষ্টা করেছেন। নতুবা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তথা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে খুশি করতে আন্তরিক হয়েছেন। ওয়াসার পানিতে ময়লা এবং আয়রণের মিশ্রণ থাকে, তা নতুন নয়। এক্ষেত্রে শুধু ঢাকা ওয়াসা নয়, দেশের বারটি সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ওয়াসার সরবরাহকৃত পাইপ লাইনের পানি ময়লা ও আয়রণযুক্ত। তবে দেশের অগ্রগতির সাথে ওয়াসারও কম-বেশী অগ্রগতি হয়েছে বৈকি। রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় নতুন সংযোগ এবং নতুন করে পাইপ লাইন স্থাপন করা হয়েছে, তা অবশ্যই স্বীকারযোগ্য। ময়লা এবং আয়রণ মিশ্রিত পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষ দায়ী নয়। অবকাঠামো, উপকরণ, আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং ব্যবস্থপনা এর সাথে সম্পৃক্ত। ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তার বক্তব্য মতে, পুরনো লাইনের ত্রæটির কারনে ময়লা এবং আয়রণ মিশ্রিত পানি সরবরাহ হতে পারে।
রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ এলাকার মানুষের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মালিবাগ বাসিন্দাদের মতে, ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে দূর্গন্ধ থাকার কারনে পান করার কথা বাদ দিলেও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজগুলোও করা যায়না। জুরাইন এবং অন্যান্য এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ একই রকম।
ঢাকা ওয়াসার এমডি জনাব তাসকিন এ খান এই সত্য কথাটি মানতে নারাজ। ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি শতভাগ “সুপেয় এবং নিরাপদ”। এই ধরনের খামখেয়ালীপনা দাবীর পর তাঁকে নিজ বাসার পানি শরবত করে খাওয়ানোর জন্য জুরাইন অধিবাসী জনাব মিজানুর রহমান ঘোষণা দিয়ে কারওয়ান বাজার ওয়াসা অফিসে আসেন। উল্লেখ্য, তিনি পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে পানি ও শরবতের উপকরণসহ পরিবার নিয়ে অফিসে হাজির হন। এমডি সাহেবের অনুপস্থিতির কারনে মিজানুর রহমানের প্রোগ্রাম কার্যতঃ ফলপ্রসূ হয়নি। তবে এই ধরনের প্রতিবাদ ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে নাড়া দিয়েছে নিঃসন্দেহে।জনাব মিজানুর রহমানকে সাধুবাদ জানাই এই মর্মে, উক্তরূপ প্রতিকী প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে তিনি রাজধানীবাসীর নজর কেড়েছেন। জনাব মিজানুর রহমানের মতে ‘জুরাইন এলাকার ওয়াসার পানি নর্দমার পানির মত অপরিষ্কার’। বলাবাহুল্য, টিআইবি গবেষণায় প্রকাশ পায়, ওয়াসার পানি ফুটিয়ে পান করতে বৎসরে তিনশত বত্রিশ কোটি টাকার অধিক গ্যাস পোড়াতে হয়। এতসবের পরেও আমরা আশা করি, এমডি মহোদয়ের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং ঢাকা ওয়াসার ভবিষ্যত কর্মকাÐ জনমানবের কল্যাণে পরিচালিত হবে। সবার জানা একটি কথা না বললে নয়, সুপেয় এবং নিরাপদ পানির উৎস- “মক্কা নগরীর জমজম ক‚পের মধ্যে নিহিত”।

লেখক : প্রাবন্ধিক