পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বিজিবি মোতায়েন, গ্রেপ্তারি ক্ষমতা নিয়ে ২৪ ডিসেম্বর মাঠে নামছে সেনাবাহিনী

40

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সেনা, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে থাকছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি। আগামী সপ্তাহে নামছে সেনা, র‌্যাব ও অবিরিক্ত পুলিশ। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো চিহ্নিত করে গড়ে তোলা হবে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি।
জানা যায়, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কঠোর অবস্থানে নির্বাচন কমিশন। এরই অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার থেকে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আগামী ২২ ডিসেম্বর থেকে বিজিবি মোতায়েনের কথা থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বাহিনীকে আগাম মাঠে নামানো হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ১০১৬ প্লাটুন (৩৫ হাজার ৫শ ৬০ জন) বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বিজিবি মোতায়েন প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গণমাধ্যমেই খবর আসছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। তা ছাড়া আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্ট এখনই সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। সেনা মোতায়েন সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সে কারণে কমিশন আগাম বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা এবং গোয়েন্দা প্রধানদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেছে। ভোট নির্বিঘেœ করতে কিভাবে মাঠ সামাল দিতে হবে সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনাও দিয়েছে। ইসির নির্দেশনা পেয়ে নির্বাচনে নিরাপত্তার ছক চ‚ড়ান্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে তিন শ্রেণিতে পাঁচ স্তরে তৈরি করা হয়েছে নিরাপত্তার ছক।
সিএমপি ও জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভোটকেন্দ্রগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ছক এঁকেছে পুলিশ। আগে পরে মিলিয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ১০ দিনের জন্য মাঠে থাকবে র‌্যাব। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ও র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারি ক্ষমতা নিয়ে ভোটের ৬ দিন আগে ২৪ ডিসেম্বর মাঠে নামবে সেনাবাহিনী। আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা মূলত থাকবে কেন্দ্রের মূল শৃঙ্খলার কাজে। এবার কাজে লাগানো হবে গ্রাম পুলিশ সদস্যদেরও। এ ছাড়াও সংখ্যালঘু ও নারী ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারেন সে বিষয়েও বিশেষ খেয়াল রাখবে পুলিশ। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৩০ হাজারেরও বেশি সদস্য আগামী সপ্তাহে একযোগে মাঠে নেমে সমন্বয় করে কাজ করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাশকতা ও জঙ্গি হামলার কথা মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সব রকম প্রস্তুতি নিতে বলেছে ইসি। ভোটকেন্দ্রে হামলা, ব্যালট পেপার ও বাক্স যাতে ছিনতাই হতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
সিএমপি ও জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা ধরে নিরাপত্তা ছক সাজানো হয়েছে। বিশেষ করে দুর্গম এলাকায় যাতে ভোটের আগে ও পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে সেজন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ভোটের দিন সন্ধ্যা থেকে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল ঘোষণার সময় ও পরে যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, হলেও যাতে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেইসব দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ-র‌্যাব।
পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তায় পুলিশ মাঠে রয়েছে। কদিন পর পুলিশের সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবেও থাকবে পুলিশ টিম। গোয়েন্দা পুলিশও মাঠে থাকবে। তারা নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়, নির্বাচনের দিন এবং পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কাজ করবে। তিনি বলেন, কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে থাকবে পুরো নগরী ও বোট কেন্দ্রগুলো। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ পাবে না।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে সেনাবাহিনী।
নির্বাচন কমিশনের এক কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবেন সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল দেবেন। তারা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনা কক্ষে ঢুকতে পারবেন না। অবশ্য রিটার্নিং বা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা চাইলে স্ট্রাইকিং ও মোবাইল টিমের সদস্যরা প্রয়োজনে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন।
জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশ মাঠে কাজ করছে। প্রয়োজনে তা আরো বৃদ্ধি করা হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রেও থাকবে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সহিংসতার বিষয়টি মাথায় রেখেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্রের পাহারায় মেট্রোপলিটন এলাকার সাধারণ কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশের মোট ১৬ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন।
এরমধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ ৩ থেকে ৫ জন, অঙ্গীভূত আনসার ১১ জন ও গ্রাম পুলিশের একজন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে মোট ১৭ জন ও অস্ত্রসহ ৪-৬ সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এরমধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ থাকবে ন্যূনতম চারজন।
মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের মোট ১৪ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এরমধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ একজন, অঙ্গীভূত আনসার ১২ জন ও গ্রাম পুলিশের দু-একজন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে মোট ১৫ জন ও অস্ত্রসহ তিন-চারজন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এরমধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্য থাকবেন ন্যূনতম দুজন।
এদিকে চট্টগ্রামে ১৮৯৯টি কেন্দ্রের মধ্যে অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র বেশি রয়েছে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (স›দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড), চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী), চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া), চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া), চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-খুলশী), চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া), চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া), চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে।
এরমধ্যে নগরীর বাকলিয়া, হালিশহর, পাহাড়তলী এবং জেলার বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, ফটিকছড়ি, সীতাকুন্ড ও সন্দ্বীপ এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলোকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনোধরনের সমস্যা যাতে না হয় সেজন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।