‘পশ্চিমারা জিতছে’, চীনকে বলল যুক্তরাষ্ট্র; আপত্তি ফ্রান্সের

26

চীন ও রাশিয়া যতই ‘সাম্রাজ্য গড়ার’ চিন্তা করুক না কেন পশ্চিমা মূল্যবোধগুলোই শেষ পর্যন্ত প্রাধান্য বিস্তার করবে বলে ইউরোপীয় মিত্রদের আশ্বস্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ইউরোপের নেতাদের অসন্তোষের মধ্যে শনিবার জার্মানিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভূমিকা ও পদক্ষেপগুলোর পক্ষে দৃঢ় অবস্থানও নেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা প্রথম’ স্লোগান, নেটো সামরিক জোট নিয়ে দোটানা এবং ইউরোপীয় পণ্যে একের পর এক শুল্ক আরোপের ঘটনায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কে সৃষ্ট অবিশ্বাস ও সন্দেহ দূর করারও জোর চেষ্টা চালিয়েছেন পম্পেও। পশ্চিমা নেতৃত্বে কোনো ধরনের সংকটে নেই বলেও দাবি করেছেন তিনি।
“আটলান্টিকের এপার-ওপার মিত্রতার মৃত্যু নিয়ে যা বলা হচ্ছে, তা যে অতিরঞ্জিত এটা জানাতে পেরে আমি খুশি। পশ্চিমারা জিতছে, এবং আমরা একসঙ্গেই জিতছি,” উদার গণতন্ত্রের সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন যুক্তরাষ্ট্রের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পম্পেওর এ অবস্থানকে শুক্রবার মিউনিখ সম্মেলনে দেওয়া জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইমেয়ারের দেওয়া বক্তৃতার প্রত্যুত্তর হিসেবেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। স্টেইনমেয়ার তার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বকে আরও ‘বিপজ্জনক অবস্থার দিকে’ ঠেলে দেয়ার অভিযোগ এনেছিলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও জার্মান প্রেসিডেন্টের ওই বক্তব্যকে সমর্থন জানান। ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের জুনিয়র পার্টনার হতে পারি না। নেটোকে সমর্থন দিলেও ইউরোপের যেমন প্রতিবেশীর হুমকি মোকাবেলায় সক্ষম হয়ে ওঠা দরকার, তেমনি দরকার ওয়াশিংটনের বাইরে স্বতন্ত্র অবস্থান নেওয়ারও। ইউরোপীয় সমাধান চেয়ে চেয়ে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি,’ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতা, সাংসদ ও কূটনীতকদের সামনে বলেন ম্যাক্রোঁ। রাশিয়াকে ঠেকানোর পশ্চিমা নীতি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে বলেও মত এ ফরাসী প্রেসিডেন্টের। কেউই যেহেতু মস্কোর সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে জড়াতে চায় না, সেহেতু বিরোধ নিষ্পত্তিতে আলোচনার পথই একমাত্র উপায়, বলেছেন তিনি।
‘সব অংশীদারদের মুখেই আমরা (রাশিয়াকে) বাধা দেওয়ার কথা শুনছি। আমি পাগল নই, কিন্তু বাধা দেওয়া এবং দুর্বল হওয়া, এটা কোনো নীতি হতে পারে না। এটা পুরোপুরি অকার্যকর পন্থা। দ্বিতীয় একটি বিকল্প আছে, ফের কৌশলগত আলোচনা শুরু করা। পরিস্থিতিও সেটিই দাবি করছে। এখন দিন দিন আমাদের মধ্যে কথা কম হচ্ছে, সংঘর্ষ বাড়ছে এবং আমরা সংকটের সমাধান করতে পারছি না,’ বলেছেন ম্যাক্রোঁ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ইরান চুক্তি ও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে ট্রাম্পের বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র যে এখন আর ইউরোপীয় স্বার্থকে খুব বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে না তা স্পষ্ট হয়েছে। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর কূটনীতিকেও দুর্বল করে দিয়েছে ওয়াশিংটন।
পম্পেও রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল, ইরানের সাইবার হুমকি এবং চীনের অর্থনৈতিক আগ্রাসনের প্রসঙ্গ উপস্থাপন করে বলেন, এ রাষ্ট্রগুলোর ‘সাম্রাজ্য আকাঙ্ক্ষা’ আছে এবং এরা আন্তর্জাতিক নিয়মনীতিকে অবজ্ঞা করে যাচ্ছে। তার এ বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া দেখান চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। ‘চীনের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই মিথ্যা, কোনো অভিযোগেরই বাস্তব ভিত্তি নেই,’ বেইজিং ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে ও সম্পর্কের দ্বন্দ্ব কমিয়ে আনতে ইচ্ছুক বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। বিডিনিউজ