পশু বাজারের পেটে মইজ্জ্যারটেক খাল

53

কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেকস্থ পশ্চিম পাশের খালটি পশু বাজারের পেটে চলে গেছে। বাজারের উচ্ছিষ্ট আর কাঁদামাটি দিয়ে ক্রমান্বয়ে খাল ভরাট করে তাতে স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় মইজ্জ্যারটেক থেকে দক্ষিণ দিকে জোয়ারের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে বোরো চাষাবাদ করতে পারেনি কয়েকশ কৃষক। নির্মাণাধীন ৪ লেন সড়কের পাশে নির্মিত ড্রেনের সংযোগ ওই খালের সাথে দেয়া হয়। কিন্তু আসন্ন বর্ষায় ড্রেনের পানি খাল দিয়ে নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হবে। এছাড়া বাঁধের দক্ষিণে বিভিন্ন কলকারখানার পানি বর্তমানে খাল দখলের কারণে আটকে থাকায় দূষিত হয়ে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। উপজেলার ব্যস্ততম স্থানে এ ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন এখনো নির্বিকার। এ কারণে কৃষক ও সাধারণ মানুষের মাঝে বাড়ছে ক্ষোভ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডস্থ মউজ্জ্যারটেক এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ক্রমান্বয়ে খালের ভরাট চলছে। শুরু থেকে এলাকার লোকজন এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানালেও তারা এ পর্যন্ত কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে জটিল অবস্থা ধারণ করেছে। তারা জানান, উচ্ছিষ্ট, খুড়খুটো এবং কাঁদা মাটি দিয়ে খালের উপর আগ্রাসন শুরু প্রায় দুই বছর আগে থেকেই। খাল একটু একটু করে ভরাটের পর এর উপর ঘর তৈরি করা হয়। এভাবে এখন পুরো খাল কতিপয় পশু ব্যবসায়ীদের পেটে চলে গেছে। নির্মাণাধীন ৪ লেন সড়কের উভয় পাশে তৈরি করা ড্রেনের পানি নিষ্কাশন ওই খালের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আসন্ন বর্ষায় ড্রেনের পানি খাল দিয়ে নিষ্কাশন হবে না। এর ফলে মহাসড়কে পানির মাট তৈরি হলে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন মানিক জানান, খালটি উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের কাছে একাধিক বার বলা হয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা। পশু বাজারের উচ্ছিষ্ট দিয়ে খাল ভরাট ছাড়াও মইজ্জ্যারটেক মোড়ের উত্তর পশ্চিম পাশে একটি সুয়েটার কারখানা খাল দখল করে ভবন নির্মাণ করছে। শুরু থেকে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আনা হয়। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। এখন খাল দখল করে ওই ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। এ অবস্থায় খালের জমি উদ্ধার করে জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে।
চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছাবের আহমদ জানান, গত বছর কেউ কেউ ওই খালের উপর দোকানপাট নির্মাণের চেষ্টা করে। তাতে বাধা দেয়া হয়। পশু বাজারের দখলদারিত্বসহ নানা বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি। এবার লিখিতভাবে উপজেলা প্রশাসনের আবেদন করা হবে। যাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা, খাল থেকে উচ্ছিষ্ট এবং স্থাপনা দখলদারদের দ্বারা অপসারণ করা হয়। ওই খালের কারণে চরপাঘরঘাটা, শিকলবাহা ও চরলক্ষ্যার লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই তিন চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে কাজটি এগিয়ে নেয়া হবে।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, ভূমিমন্ত্রী নির্দেশ আছে সব ধরনের অবৈধ দখলমুক্ত করার। কর্ণফুলী উপজেলার জন্য মাস্টার প্লান তৈরির কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন আরএস খতিয়ান মোতাবেক সবগুলো খাল উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মইজ্জ্যারটেকস্থ খাল দখলের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আপাতত জোয়ার-ভাটার পানি স্বাভাবিকভাবে চলাচলের সুযোগ করে দেয়া হবে। এরপর আরএস খতিয়ান মোতাবেক ওই খালসহ উপজেলার সবগুলো খাল উদ্ধারের কাজে হাত দেয়া হবে। সে ক্ষেত্রে ভূমিমন্ত্রী কাউকে ছাড় দেবেন না বলে তিনি জানান।