পশুপাখির অভয়ারণ্য হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা

306

বর্ণিল হাঁটার পথ, পাশে দেয়ালচিত্রে পশু-পাখির অবয়ব আর সংলগ্ন পাহাড় ঘিরে দেশীয় পশুপাখির অভয়ারণ্য গড়ে তোলার কাজ চলছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানার সাথে অভয়ারণ্যের ধারণার সংযোগ ঘটিয়ে নতুন আঙ্গিকে চলছে উন্নয়ন কাজ। মূলত শিশু ও দর্শনার্থীরা যাতে প্রকৃতির সান্নিধ্যে থেকে পশু-পাখির সাথে পরিচিত হতে পারে সেটাই লক্ষ্য বলে জানান চিড়িয়াখানা সংশ্লিষ্টরা।
চিড়িয়াখানা পরিচালনা পর্ষদের সচিব মো. রুহুল আমীন বলেন, ‘আমাদের সমস্ত কর্মকাÐের কেন্দ্রবিন্দু শিশুরা। চিড়িয়াখানার ভিতরে হাঁটার পথ এবং পাহাড় ঘেরা গাইড ওয়ালটি রঙিন দেয়ালচিত্রে রাঙানো হয়েছে শিশুদের আকৃষ্ট করতেই। যাতে এখানে প্রবেশের সাথে সাথেই এত রঙ তাদের মন আনন্দে ভরে ওঠে।’
চিড়িয়াখানা লাগোয়া প্রায় আড়াই একর বিস্তৃত পাহাড়ের পাদদেশে প্রায় ৭৩০ ফুট দীর্ঘ গাইড ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে ২২ লাখ টাকায়। সেই দেয়ালে আঁকা হয়েছে বক, উটপাখি, ডাইনোসার, কচ্ছপসহ বিভিন্ন পশুপাখির ছবি। চলছে চিড়িয়াখানার ভেতরের হাঁটার পথ রঙিন করার কাজ। সোমবারের মধ্যেই এসব কাজ শেষ হবে বলে জানান চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর ও চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন শুভ।
তিনি বলেন, ‘ঈদের পরই সংলগ্ন পাহাড়ে ওঠার সিঁড়ি তৈরি করা হবে। সিঁড়ি এমনভাবে দুই পাশ থেকে ঘিরে দেওয়া থাকবে যাতে পুরো পাহাড় ঘুরে দেখা যাবে কিন্তু পাহাড়ে ঢোকা যাবে না।’
মূলত পাহাড়টি ধসের হাত থেকে রক্ষা এবং পাহাড়ে পশু-পাখির অভয়ারণ্য গড়ে তোলাই লক্ষ্য বলে জানান পরিচালনা পর্ষদের সচিব মো. রুহুল আমীন। তিনি বলেন, মূলত প্রকৃতি ও পশুপাখির সাথে মানুষের সহাবস্থান এবং মেলবন্ধন গড়ে তুলতেই এটা করা হবে।
পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে এই পাহাড়ে এক হাজার চারশ গাছ লাগানো হয়েছে। গত ছয়-সাত মাস ধরে এখানে টিয়া, দোয়েল, কোকিল, মুনিয়া ও বাবুইসহ নানা রকম দেশি পাখি আসছে নিয়মিত। মাসখানেক পর থেকে প্রতিদিন খাবার দেওয়া হবে। পাখিরা যাতে নিয়মিতভাবে আসে সেজন্য গাছে গাছে পাখির বাসা করে দেওয়া হবে। একটি লেকও খনন করা হবে। পাহাড়টিতে কাঠ বিড়ালি আছে। পেছনের পাহাড় থেকে আসে বাদুড়, মেছো বিড়াল, শিয়াল ও মায়া হরিণ। এসব প্রাণি যেন নিয়মিত আসে সে ব্যবস্থা করা হবে।’
তিনি বলেন, চিড়িয়াখানার সাথে অভয়ারণ্যের ধারণার সমন্বয় ঘটাতে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পুরো কাজ শেষ হলে চিড়িয়াখানায় থাকা বন বিড়াল, মেছো বিড়াল ও বাগডাশের মত কিছু ছোট প্রাণী ওই পাহাড়ে ছাড়া হবে। উন্মুক্ত পরিবেশে এসব প্রাণী ও পাখি ঘুরে বেড়াবে। দর্শনার্থীরা তা দেখতে পারবে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় সাদা বাঘ, জেব্রা, সিংহ, ম্যাকাওসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি পাখি, উট পাখি, ইমু, বন গরু, কুমির দর্শকদের অন্যতম আকর্ষণ। চিড়িয়াখানাটিতে ৬৬ প্রজাতির মোট ৬২০টি প্রাণি আছে।
আসন্ন ঈদের পাঁচদিনে ৭০ থেকে ৮০ হাজার দর্শক সমাগমের প্রত্যাশা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের। বছরে গড়ে ১০ লাখের বেশি দর্শনার্থী হয় এখানে।