পর্যটন শিল্পের অগ্রগতিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিবেশ উন্নয়ন জরুরি

89

পত্রিকান্তরের প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি দেশের প্রধান পর্যটননগরী কক্সবাজারের রাস্তাঘাট ও পরিবেশের দূরাবস্থার কথা। এখন পর্যটন মৌসুম চলছে। পর্যটননগরী কক্সবাজারে পর্যটকদের থাকার সুবিধা পর্যাপ্ত রয়েছে। তবে রাজধানী ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে আকাশ পথে ঘণ্টাখানিক সময় প্রয়োজন হয়। কিন্তু দেশ-বিদেশের পর্যটক আকাশ পথের সীমাবদ্ধতায় পড়ে সবার পক্ষে যাতায়াত সম্ভব হয় না। সারা দেশের পর্যটকদের জন্য সড়ক পথই প্রধান মাধ্যম। কিন্তু ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে বিমানে ১ ঘণ্টা সময় ব্যয় হলেও সড়কপথে তার ১৫ গুণ বেশি সময় লাগছে। কেননা সড়কপথে স্থানে স্থানে সড়কের যে বেহাল দশা তাতে যানবাহনে সময় বেশি ব্যয় হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট হতে শাহ আমানত ব্রিজ পর্যন্ত এবং চট্টগ্রাম কক্সবাজার সকড়ের স্থানে স্থানে রাস্তার সংস্কারের কাজে ধীরগতির কারণে যাত্রী সাধারণকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কক্সবাজারের ভেতরেও মেরিন ড্রাইভ রোডের প্রবেশ পথে কলাতলী এলাকা থেকে বেশিকিছু অংশ খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। কক্সবাজার শহরের ভেতরেও কিছু কিছু স্থানে রাস্তার পরিবেশসম্মত সংস্কার কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে।
দেশের প্রধান পর্যটননগরী হিসেবে কক্সবাজারের পরিবেশ এখনো মানসম্মত নয়। পর্যটনবান্ধব সুযোগ-সুবিধা এখনো তৈরি হয়নি। একথা সত্য যে, পূর্বের তুলনায় উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু তা দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো পর্যাপ্ত নয়। সমুদ্র সৈকতের রাস্তা ও পরিবেশ উন্নয়নে যে মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল তার সামান্যই বাস্তবায়িত হয়েছে। এখনো বালি মাড়িয়ে পর্যটকদের সৈকতে যেতে হচ্ছে। সৈকতের পাশে যেসব পার্ক বা উদ্যান তৈরি করা হয়েছে তার অবস্থা খুবই নাজুক। লাবণী পয়েন্টে যে উদ্যান তৈরি হয়েছিল তার পরিচর্যার বেহাল দশা পর্যটকদের চোখ এড়ায় না। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের এমন অবস্থা আমাদের কাম্য নয়। কক্সবাজার আসা-যাওয়ার ভোগান্তির কারণে এ ভরা মৌসুমেও পর্যাপ্ত পর্যটক যাচ্ছে না কক্সবাজার-টেকনাফে। কক্সবাজারের পথে দুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক তো রয়েছেই। খুটাখালী মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানও চালু হতে যাচ্ছে। সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, মহেশখালীসহ নানা স্থানে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার বহু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কক্সবাজারে রয়েছে। কিন্তু পর্যটক বন্ধের রাস্তাঘাট কিংবা যাতায়াত মানসম্মত না হওয়ায় এখানে পর্যটকরা হতাশায় ভোগে। প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে পর্যটন কর্তৃপক্ষের দায়সারা দায়িত্ববোধও পর্যটকদের দৃষ্টি এড়ায় না। টেকনাফ সেন্টমার্টিন জলপথে চলাচল করছে মাত্র ছয়টি পর্যটকবাহী জাহাজ। সোনাদিয়ায়ও জাহাজ চলাচল হতে যাচ্ছে। তবে দেশের প্রধান পর্যটননগরী হিসেবে কক্সবাজারে যে পর্যটকের ভীড় সে তুলনায় জলপথেও পর্যাপ্ত যানবাহন নেই। বিশেষ করে পর্যটন এলাকাসমূহে পরিবেশ সংরক্ষণ খুবই জরুরি। পর্যটন নগরীতে নোংরা রাস্তাঘাট এবং ময়লা আবর্জনার স্ত‚প খুবই দৃষ্টিকটু। এসব বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয় পর্যটননগরী কক্সবাজারে। যা পর্যটকদের কাম্য নয়।
পর্যটননগরী কক্সবাজারে যাতায়াতের সড়ক ব্যবস্থা আরো দ্রুত উন্নতি করা প্রয়োজন বলে মনে করে পর্যটকরা। তাছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে যারা কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে যায় তাদের জন্য পর্যটন এলাকার পরিবেশ পরিচ্ছন্ন এবং মানসম্মত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বরাদ্ধ খুব একটা কাম্য নয়। যে পরিমাণ বরাদ্ধ তার এক তৃতীয়াংশ কাজ করা হলে এবং যেসব কাজ হয় সেসব সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থাপনা থাকলে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক পর্যটন এলাকা হিসেবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক হবে এমন ধারণা সকলের।