পরিবারের দাবিই স্পষ্ট হচ্ছে তদন্তে

63

নগরীর পাহাড়তলী রেলওয়ে পাওয়ার হাউস কলোনি এলাকায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক মহিউদ্দিন সোহেল হত্যা মামলার পুলিশি তদন্তে নিহতের পরিবারের দাবিই ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। নানা দিকে আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রের কাছে হুমকি হয়ে উঠা মহিউদ্দিন সোহেল ‘পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের শিকার’ হয়েছেন বলে পরিবারের দাবি। আর ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে মহিউদ্দিন সোহেলকে ‘চাঁদাবাজ’ ও ‘গণপিটুনির শিকার’ বলে প্রচার করেন নেপথ্যে থাকা প্রভাবশালীরাই।
সোহেল হত্যা মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত পাহাড়তলী বাজারের ব্যবসায়ী ও জাপা নেতা ওসমান খান, নিহত সোহেলের বন্ধু রিদোয়ান ফারুক রাজীব, যুবদল নেতা শওকত খান রাজুসহ মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে। সর্বশেষ গত ১৯ জানুয়ারি সকালে খাজা খয়েরউদ্দীন ছোটন নামে বাজারের এক দোকানদারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে নিহত মহিউদ্দিন সোহেলের লুণ্ঠিত ল্যাপটপও জব্দ করা হয়েছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, মহিউদ্দিন সোহেল হত্যাকান্ডের পর পৃথক একটি চুরির মামলায় মোবারক নামে বাজারের এক যুবক পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। চুরির মামলার গ্রেপ্তার হলেও পুলিশ প্রাথমিক তথ্য-উপাত্তে নিশ্চিত হয়ে মহিউদ্দিন সোহেল হত্যা মামলার এজাহারে মোবারকের নামও উল্লেখ করে। এরপর চুরির মামলায় কারাগারে আটক মোবারককে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে
এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মোবারক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছে। জবানবন্দিতে মোবারক জানায়, সোহেলকে তার অফিসকক্ষে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে খুন করে লাশ টেনে-হিঁচড়ে বাজারে নিয়ে যাওয়ার সময় অফিসকক্ষে লুটপাটও হয়। মোবারক নিজেই ল্যাপটপটি বাজারের দোকানদার ছোটনের কাছে জমা রাখে। এই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ গত ১৯ জানুয়ারি খয়েরউদ্দিন ছোটনকে গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে লুণ্ঠিত ল্যাপটপটি উদ্ধার করে।
সিএমপির ডবলমুরিং জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আশিকুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা তদন্তের শুরু থেকেই সবদিক বিবেচনায় নিয়ে প্রকৃত সত্য বের করে আনার চেষ্টা করছি। যে যাই বলুক বা প্রচার করুক না কেন, হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে সেটা যেমন সত্যি তেমনি কারা কী কারণে এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাও তদন্তে স্পষ্ট হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের কার্যক্রম সে প্রক্রিয়াতেই এগিয়ে যাচ্ছে।’
এর আগে মহিউদ্দিন সোহেল হত্যাকান্ডের দু’দিন পর গত ৯ জানুয়ারি মহিউদ্দিন সোহেল হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহব্বায়ক ও পাহাড়তলী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহব্বায়ক কমিটির সদস্য ওসমান খানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তার আগের দিন অর্থাৎ গত ৮ জানুয়ারি গভীর রাতে নিহত মহিউদ্দিন সোহেলের ভাই শাকিরুল ইসলাম শিশির বাদী হয়ে ডবলমুরিং থানায় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও রেলওয়ে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহব্বায়ক সাবের আহম্মেদ এবং ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য ও জাপা নেতা ওসমান খানসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে নিহত মহিউদ্দিন সোহেল চাঁদাবাজ কিংবা সন্ত্রাসী ছিলেন না উল্লেখ করে পাহাড়তলীকে ‘সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত’ করার কাজে হাত দিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাবের সওদাগর ও জাপা নেতা ওসমান খানের রোষানলে পড়েছিলেন বলে দাবি করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি সকালে নগরীর ডবলমুরিং থানার পাহাড়তলী রেলওয়ে পাওয়ার হাউস কলোনি এলাকায় প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন সোহেলকে। নিহত মহিউদ্দিন চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার মিলারচর গ্রামের আব্দুল বারিকের ছেলে। তার বাবা রেলওয়ের সাবেক কর্মচারি। পরিবার নিয়ে নগরীর খুলশী আবাসিক এলাকায় বসবাস করলেও রেলওয়ে পাওয়ার হাউস কলোনি স্টাফ কোয়ার্টারের দুটি কক্ষ দখল করে কার্যালয় খুলে সেখানেই আড্ডা দিতেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা। তার শরীরে ২৬ টি ধারালো অস্ত্রের জখম ছিল বলে জানিয়েছে চিকিৎসক। হামলায় রাসেল দে নামে তার এক অনুসারীও আহত হন। হত্যাকান্ডের পর পুলিশ প্রাথমিকভাবে ‘চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ’ হয়ে রেলওয়ে বাজারের ব্যবসায়ীদের ‘পিটুনিতে’ সোহেল নিহত হন বলে জানিয়েছিল পুলিশ।