পরিকল্পনাতেই সীমাবদ্ধ মশকমুক্ত নগরী

43

শীতের এই মৌসুমে বেড়েছে মশার উপদ্রব। ফলে মশার আক্রমণে আতঙ্কিত নগরবাসী। কেননা বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশজুড়ে হয়েছিল এডিস মশার ভয়াবহ প্রকোপ। আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক মানুষ। সেই সময় মশক নিধনে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।
এরপর মন্ত্রণালয় থেকে কয়েকবার তাগদা দেওয়ার পর মশক নিধন নিয়ে বাৎসরিক পরিকল্পনাও তৈরি করেছে সংস্থাটি। যেখানে চট্টগ্রার নগরীকে মশকমুক্ত নগরী গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হলেও দৃশ্যমান কোনো কর্মকান্ড নেই। ফলে মশক মুক্ত নগরী গড়ার স্বপ্ন কেবল পরিকল্পনাতেই সীমাবদ্ধ আর বাস্তবে নগরীবাসী মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে এমনটা জানা গেছে।
জানা গেছে, চসিক গত ১৫ জুলাই থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত তিন মাসের মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করে। ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে ‘এডিস মশা নিধন ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে মহানগর ও বিভাগীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণ’ সম্পর্কিত সভায় মশার বিরুদ্ধে এ যুদ্ধ ঘোষণা করেন চসিক মেয়র। পরদিন জামালখানে ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ নামে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ওষুধ ছিটানো।
১৬ অক্টোবর ডিসি হিল এলাকায় ফের মশক নিধন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। প্রতিটি কর্মসূচি ফলাও করে প্রচার করা হয়। প্রতিটি কর্মসূচিতেই স্প্রেম্যানদের ফগার মেশিন নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রলীগ নেতা থেকে সামাজিক ব্যক্তিত্ব সবাই ফগার মেশিন নিয়ে মশক নিধনে নেমেছিলেন। কিন্তু অনুষ্ঠানের পর তাদের আর কারও দেখা মেলে না।
মশক নিধনে দৃশ্যমান কোনো কর্মকান্ড না দেখা নগরীবাসী এমন কর্মসূচি দেখে আশ্বাস্ত হয়েছিলেন। তবে নগরবাসীর অভিযোগ ও ফগারম্যানের উধাও হওয়াটা যেন নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, শীতেও এডিস মশা ডিম পাড়ে। সাধারণত শুষ্ক মৌসুম নভেম্বর-এপ্রিল পর্যন্ত মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এ সময় নালা-নর্দমায় জমে থাকা পানিতে ডিম ছাড়ে জীবাণুবাহী মশা। তবে চসিক বছরজুড়ে মশার ওষুধ ছিটানোর কথা বললেও তা করছে না। ডেঙ্গুর মৌসুমে মাঝে মাঝে দেখা গেলেও পরে আর চোখে পড়েনি। এ নিয়ে চসিকের আরও অনেক বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার উচিত বলে মন্তব্য করছেন নগরবাসী।
এছাড়া গত ১৩ নভেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তিন কার্যদিবসের মধ্যে মশক নিধন নিয়ে সারাবছরের কর্মপরিকল্পনা চেয়ে চসিককে চিঠি দেয়। এতে অবশ্য আগে বেশ কয়েকবার তাগদা দেওয়ার পরও কর্মপরিকল্পনা না পাঠানোর বিষয়টি জানানো হয়। এরপরই মূলত চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের টনক নড়ে। তারপর এক পৃষ্ঠার একটি বাৎসরিক পরিকল্পনা প্রেরণ করে চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ। যেখানে চট্টগ্রাম নগরীকে মশকমুক্ত পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। তাছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডকে চারটি অংশে বিভক্ত করে মশার ওষুধ স্প্রে করার জন্য একজন স্প্রেম্যান নিযুক্ত করার কথা বলা হয়। প্রতিটি বিভক্ত অংশের ঝোপ, ঝাড়, জঙ্গল, আগাছা, ডোবা ও জলাশয় থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করার কথাও বলা হয়। প্রত্যেক ওয়ার্ডে ৪টি ফগার মেশিন ও ৪টি হ্যান্ড স্প্রে মেশিন দিয়ে প্রতিদিন ওষুধ ছিটানোর পরিকল্পনার কথা বলা হয়।
বিরতিহীনভাবে মশক নিধন কার্যক্রম চালানো হবে বলে দাবি করা হয় সেই বাৎসরিক পরিকল্পনায়। তবে এসব পরিকল্পনার বাস্তবতা কতটুকু? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কথা হয় বিভিন্ন প্রান্তের নগরবাসীর সাথে। যেখানে বরাবরের মতই ওষুধ ছিটানো বা ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কারের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে মশক নিধন নিয়ে দিয়ে রুটিন বক্তব্য দিয়েছেন চসিকের উপপ্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে মশার উপদ্রব বাড়ার কারণে আগের চেয়ে বেশি করে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। প্রতিদিন মশক নিধনে কাজ করা হচ্ছে। এই নিয়ে আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি। নগরবাসীকে মশার কামড় থেকে পরিত্রাণ দিতে পুরনো ৭০টির সঙ্গে নতুন ৪০টি ফগার মেশিন যোগ হয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডের জন্য ২০০ লিটার করে মশক নিধন তেল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও দেওয়া হবে।’