পবিত্র মাহে রমজান শুরু আগামীকাল

27

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের আকাশে কোথাও গতকাল পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। আজ বৃহস্পতিবার শাবান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হবে। ফলে আগামীকাল শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে রোজা। রোজার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। চাঁদ দেখার সাথে সাথে আজ রাত থেকেই তারাবিহ নামাজ শুরু হবে।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা হয়। দেশের কোথাও পবিত্র রমজানের চাঁদ দেখা না যাওয়ায় শুক্রবার থেকে রোজা পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি ও ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।
তিনি বলেন, দেশের আকাশে কোথাও চাঁদ দেখার খবর পাওয়া যায়নি। তাই বৃহস্পতিবার (আজ) শেষ হবে শাবান মাস এবং শুক্রবার শুরু হবে রমজান। তিনি জানান, ১৮ এপ্রিল দিবাগত রাতে শবে কদর পালিত হবে।
রমজান শুরুর জন্য চাঁদ দেখা আবশ্যক। কারণ, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে ইফতার করো। যদি আকাশ তোমাদের কাছে মেঘাচ্ছন্ন হয়, তবে তোমরা ৩০ দিন পূর্ণ করো।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০৮১)।
মুসলমানরা চন্দ্র মাসের পঞ্জিকা অনুসরণ করেন, যেখানে ১২ মাসে ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে বছর হিসাব করা হয়। চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ইসলামী পঞ্জিকার দশম মাস রমজানের শুরু হয়।
মঙ্গলবার চাঁদ দেখা না যাওয়ায় সোদি আরবে আজ থেকে রোজা শুরুর ঘোষণা আসে। বাংলাদেশের কিছু জেলার মুসলমানরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখা শুরু করেন এবং একই দিন ঈদ উদযাপন করেন। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় এই রীতির অনুসারীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যা রয়েছে।
এদিকে গতকাল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের আকাশে আজ (বুধবার) কোথাও ১৪৪৪ হিজরি সনের পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। এ কারণে বৃহস্পতিবার (আজ) রমজান মাস ৩০ দিন পূর্ণ হবে। ২৪ মার্চ থেকে পবিত্র রমজান মাস গণনা শুরু হবে।সভায় ১৪৪৪ হিজরি সনের পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা সম্পর্কে সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে চাঁদ দেখা না যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রমজান মাসের রোজা অন্যতম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় হিজরিতে কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা উম্মতের উপর রোজা ফরজ করেছেন। রমজানের রোজা কেউ যদি অস্বীকার করলেÑসে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। এছাড়াও শরিয়ত সমর্থিত ওজর (অপারগতা) ছাড়া ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গকারী মৌলিক ফরজ লংঘনকারী ও ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারীরূপে গণ্য। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ওজর বা অসুস্থতা ছাড়া রমজানের একটি রোজা পরিত্যাগ করবে-সে যদি ওই রোজার পরিবর্তে আজীবন রোজা রাখে তবু ওই এক রোজার ক্ষতিপূরণ হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭২৩)
রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘…সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস (রমজান) পাবে, সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তবে অন্য সময় সে সমান সংখ্যা পূরণ করবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

সারা বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মাস :
নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনরা এ মাসে (সারা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৩৬৮)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী হতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখন রমজান মাসের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জিন ও শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে— হে কল্যাণের প্রত্যাশী! অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের প্রার্থী! থেমে যাও। আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দান করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৮২)
বরকতময় মাস :
আবু হুরায়রা (রা) বলেন, যখন রমজান মাসের আগমন ঘটল, তখন নবীজি (সা.) ইরশাদ করলেন, ‘তোমাদের কাছে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর এ মাসের রোজা ফরজ করেছেন…।’
রমজানের রোজা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবার রোজার বিনিময়ে অনেক বড় পুরস্কারেরও ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন, “আল্লাহ্ তাআলা বলেন- ‘রোজা আমারই জন্য। আমি নিজে এর প্রতিদান দেব। আমার বান্দা আমার জন্য পানাহার ছেড়ে দেয়, কামনা-বাসনা ছেড়ে দেয়। রোজাদারের জন্য দু’টি খুশি। একটি খুশি ইফতারের সময়। আরেকটি খুশি আমার সঙ্গে তার সাক্ষাতের সময়। রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধের চেয়েও উত্তম।”
এ মাসে মানুষের প্রত্যেকটি আমল বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। একটি নেকি ১০ গুণ থেকে (ক্ষেত্র বিশেষে) ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোজার ব্যাপারটি ভিন্ন। কারণ, রোজা আমার জন্য। সুতরাং তার প্রতিদান আমি নিজেই প্রদান করব।’

রোজাদারদের জন্য বিশেষ দরজা
জান্নাতে একটি ফটক আছে। তার নাম রাইয়্যান। কেয়ামতের দিন রোজাদারগণ সেই ফটক দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অন্য কেউ সেই ফটক দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে- ‘রোজাদারগণ কোথায়? তখন তারা উঠবে। তারা ছাড়া অন্য কেউ যাবে না। যখন তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন রাইয়্যান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হবে। সুতরাং আর কেউ এ ফটক দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৬; মুসলিম, হাদিস: ১১৫২)
আর যে ব্যক্তি সে রাইয়ান গেট দিয়ে প্রবেশ করবে সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রমজান মাস লাভকারী ব্যক্তি, যিনি উত্তমরূপে সিয়াম ও কিয়াম পালন করে, তার প্রথম পুরস্কারÑরমজান শেষে গুনাহ থেকে ওই দিনের মতো পবিত্র হয়Ñযেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল।