পবিত্র ঈদুল আজহা কাল

108

আত্মত্যাগ ও খুশির বার্তা নিয়ে আবারো হাজির হয়েছে মুসলমানদের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। বিশ্ব মুসলিমের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি ঈদুল আজহা। আগামীকাল সোমবার সারা দেশে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় উদ্যাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বাণী দিয়েছেন।
কোরবানি অর্থ ত্যাগ এবং ত্যাগের মহিমার মধ্যদিয়ে সামর্থ্যবানরা পশু কোরবানি করেন। কোরবানির একটি অংশ দরিদ্রদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। ধনী-গরীব সকলেই যাতে সমভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন সেজন্য ইসলামে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। কোরবানির মাংস ভাগবাটোয়ারা করার ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান মানতে হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য মুসলমান অভাব ও দারিদ্র্যের মধ্যে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। পশু কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি মুসলমানের ভেতরের পশুত্বকে কোরবানি করে আল্লাহর পথে, আল্লাহর সন্তুষ্টি, নৈকট্য ও অনুগ্রহ লাভের জন্য সর্বোচ্চ নিষ্ঠার পরিচয় দিতে হবে।
আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য এবং তারই রাহে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে পালিত হয়ে আসছে ঈদুল অজহা। হযরত ইবরাহিম (আ.) এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে কোরবানি প্রচলিত হয়েছে। যাকে কেন্দ্র করে ঈদুল আজহার এই উৎসব। আল্লাহর নির্দেশে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর পূর্বে হযরত ইবরাহিম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি দেয়ার ঘটনার স্মরণে কোরবানি প্রচলিত হয়। পুত্র কোরবানির পরীক্ষায় হযরত ইবরাহিম (আ.) উত্তীর্ণ হয়েছিলেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে খলিলুল্লাহ উপাধি পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন প্রতিবছরই পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আদিষ্ট হয়ে প্রতিবছরই পশু কোরবানি করেছেন এবং তার উম্মতের জন্য এ আদর্শ ও প্রথা অনুসরণের কঠোর নির্দেশ দিয়ে গেছেন। যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব তাদের জন্য কোরবানি করা বাধ্যতামূলক। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যাদের ওপর ওয়াজিব তারা কোরবানি না করলে যেন ঈদগাহে গমন না করে। তিনি আরও বলেছেন, কোরবানির দিন কোনো ব্যক্তির কোরবানির পশুর রক্ত ঝরানোর মতো আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় ও পছন্দনীয় কাজ আর কিছু নেই।
আল্লাহ তার কুদরতী পরিকল্পনায় ইব্রাহীমকে (আ.) তাঁর শেষ বয়সে প্রিয়তম পুত্র ইসমাঈলকে (আ.) কোরবানি করার নির্দেশ দেন। হযরত ইব্রাহীম (আ.) ৮৫ বছর বয়সে হযরত ইসমাইলকে (আ.) পান। এ অবস্থায় ছেলেকে কোরবানি দেয়া এক কঠিন পরীক্ষা। কিন্তু তিনি তার মহান রবের হুকুমে নত হলেন। নিষ্পাপ পুত্র ইসমাঈলও (আ.) নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। একপর্যায়ে পিতা তার পুত্রকে জবাই করতে যখন উদ্যত ঠিক তখনই মহান আল্লাহর কাছে ঈমানের কঠিন পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হলেন। চোখ বাঁধা অবস্থায় তিনি জবাই করেন। চোখ খুলে দেখেন তাঁর প্রিয় পুত্র অক্ষত রয়েছে আর কোরবানি হয়েছে একটি দুম্বা।
পবিত্র কোরআনে এই মহিমান্বিত ত্যাগের ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘অতঃপর সে (ইসমাঈল) যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো তখন ইব্রাহীম (আ.) তাকে বললেন, হে বৎস! আমি স্বপ্ন দেখেছি তোমাকে জবাই করছি। এখন তোমার অভিমত কি? সে বললো, হে পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তাই করুন। আল্লাহ চাইলে আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলো এবং ইব্রাহীম (আ.) তাকে জবাই করার জন্য শায়িত করালেন তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইব্রাহীম তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই সৎকর্মীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে জবাই করার জন্য দিলাম এক মহান জন্তু।’’ হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর অনুপম ত্যাগের অনুসরণে হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্ব মুসলমানরা কোরবানি করে আসছে। তারই নিদর্শন স্বরূপ প্রতি বছর হজ পালনকারীরা কোরবানি দিয়ে থাকেন। শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, কোরবানির পূর্বশর্ত আল্লাহভীতি ও একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আকাঙ্খা। হাদীস শরীফে আছে, ‘মানুষের আমলের প্রতিফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। সূরা হজ্বে বলা হয়েছে, ‘এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়।’ প্রত্যেক আর্থিক সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি দিলো না, সে যেন আমার ঈদগাহে না আসে।’ (মুসনাদে আহমদ)
জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যেকোনো একদিন কোরবানি করা যায়। গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এ শ্রেণির প্রাণি দ্বারা কোরবানি করা যায়। কোরবানিকৃত পশুর ৩ ভাগের ১ ভাগ মাংস গরীব-মিসকিন, একভাগ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হয়। আবার পুরোটাও বিলিয়ে দেয়া যায়।
এদিকে ৯ জিলহজ ফজর নামাযের পর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর তাকবীরে তালবিয়া পাঠ করা ওয়াজিব। তালবিয়াহ হলো, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগামীকাল সরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। ঈদের দিনে কারাগারসমূহ, বিভিন্ন হাসপাতাল, এতিমখানা, ভবঘুরে কেন্দ্র ও দুঃস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। জাতীয় পর্যায়ের সাথে সমন্বয় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও উপজেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।