পথশিশুদের মাঝে ঈদ আনন্দ বিলিয়ে দিতে অনন্য তারুণ্য

120

চারদিকে যখন মাদক-নেশা আর সন্ত্রাসের উন্মুক্ত ছড়াছড়ি, তরুণরা হচ্ছে বিপথগামী এমন সময়েই কিছু তরুণ নিজেদের তুলে ধরছে অনন্য মানবিকতায়। তারা নিজেদের নিয়োজিত করছেন সমাজ ও মানুষের কল্যাণমূলক নানা কাজে। অচেনা এক মানুষের কাছে বিনাদ্বিধায় দিচ্ছেন নিজ শরীরের রক্ত আর হতদরিদ্র মানুষটির চিকিৎসার ভরসাও তারুণ্য। পথে পথে যাদের জীবনের ঠিকানা, পথশিশু বা টোকাই যাদের নাম তাদের শিক্ষায় এবং তাদের মাঝে ঈদের আনন্দ বিতরণে তরুণদের ভূমিকা অনুপ্রেরণা হচ্ছে সমাজে। আসন্ন ঈদের আনন্দ সবার মাঝে বিলিয়ে দিতে তরুণরা বিতরণ করছেন পথশিশুদের মাঝে ঈদবস্ত্র। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রচেষ্টায় একটি রঙিন জামা বদলে দিতে পারে শিশুর ধূসর ঈদ।
কথায় আছে, অসম্ভবকে সম্ভব করতে ঝুঁকি নিতে পারে শুধু তারুণ্য। তরুণ বা নওজোয়ানদের অসাধ্য কিছু নেই। প্রথা ভাঙায় দুঃসাহস দেখাতে পারে শুধু তরুণেরাই। স্থলে, পানিতে ও মহাকাশের যেকোনো অভিযানে অভিযাত্রী হওয়ার যোগ্য শুধু তরুণেরাই। তাই তারুণ্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম তরুণ বা নওজোয়ানদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলেছেন: ‘অসম্ভবের অভিযানে এরা চলে/ না চলেই ভীরু ভয়ে লুকায় অঞ্চলে!/এরা অকারণ দুর্নিবার প্রাণের ঢেউ/ তবু ছুটে চলে যদিও দেখেনি সাগর কেউ’। এক সময় তরুণদের মাঝে এমন প্রবণতা ছিল না। তবে ইদানীং মানবিকতায় তরুণদের ভূমিকা অনন্য। আজ হয় কবি নজরুল থাকলে এমন তারুণ্যকে উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করাতেন। এমন তরুণদের একটি সংগঠন ‘এক টাকায় শিক্ষা’। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পড়–য়া তরুণ শিক্ষার্থীদের সংগঠন এটি। সদস্য রয়েছেন প্রায় দু’ হাজার। প্রত্যেক সদস্য প্রতিদিন এক টাকা চাঁদা দেন। যেটাকার পুরোটাই ব্যবহৃত হয় পথশিশু ও গরীব শিশুদের শিক্ষার জন্য। তাদের সহযোগিতায় প্রায় হাজার পথশিশু শিক্ষা গ্রহণ করছে। তবে ঈদকে সামনে রেখে সংগঠনটির একটি ইভেন্ট উন্মুক্ত করেছিলেন। যেটার মাধ্যমে ‘ডোনেশন’ সংগ্রহ করা হয়েছে পথশিশুদের ঈদবস্ত্র দিতে। তরুণদের যেমন ঘোষণা যেমন কাজও তেমন। এরইমধ্যে ফটিকছড়ি’র বিবিরহাট, নাজিরহাট, সরকারহাট, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকা, পটুয়াখালী, বান্দরবান, কুমিল্লা ও বরিশালে প্রায় দুই শতাধিক শিশুদের মাঝে ঈদবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। ঈদের আগ পর্যন্ত এই রঙিন জামা বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মো. রিজুয়ান।
অন্যদিকে রংধনু ফাউন্ডেশন শুধু ঈদবস্ত্রই দিচ্ছে না। শহুরে শপিংমল থেকে পছন্দমত শপিং করার আনন্দও বিলিয়ে দিচ্ছেন পথশিশুদের মাঝে। সংগঠনটি পথশিশু থেকে শুরু করে এতিমশিশু, অল্প বেতন পাওয়া সিকিউরিটি গার্ড এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সন্তানদের ঈদের নতুন জামা বিতরণ করেছে। এই ঈদে ২৩৮ জন শিশুকে তারা শপিং করে দিয়েছে। তবে শনিবার আরও এক দফায় শপিং করানো হয় পথশিশুদের। এমন ভিন্নধর্মী আয়োজনের কারণ জানতে চাইলে সংগঠনটির একজন প্রতিষ্ঠাতা সায়ীদ পূর্বদেশকে বলেন, আমরা কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই শপিং সেন্টারগুলোতে প্রবেশ করতে পারি। বাবা, মা, ভাই, বোনদের সাথে নিয়েই আমেজের মধ্যে ঈদের কেনাকাটা করি। কিন্তু একবারও কি ভেবেছেন আপনারা প্রবেশ করতে পারলেও এই পথশিশুগুলো প্রবেশ করতে পারে না? তারা আমাদের মতো সবাইকে সাথে নিয়ে কখনো শপিং সেন্টারে যাবে- এটা তাদের জন্য ধারণার বাইরে। কারণ তাদের মধ্যে হয়তো কেউ কেউ এতিম, আবার কারো বাবা নেই। তাই কার হাত ধরে যাবে শপিংয়ে? ২০১৪ সালের কথা। পথশিশুদের অভিনবভাবে ঈদের নতুন কাপড় দেওয়ার পরিকল্পনা করে রংধনু ফাউন্ডেশন। সেবার রমজান মাসে রংধনু ফাউন্ডেশন শুরু করল ইভেন্ট ‘ঈদের খুশি’। তাদের ইভেন্টের মূল উদ্দেশ্য ছিল, পথশিশুদেরকে নিয়ে শপিং সেন্টারে যাবে এবং পথশিশুদের পছন্দমত জামা কিনে দিবে। সেবার চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের লাকী প্লাজা শপিং সেন্টারের শৈলি কালেকশন থেকে পথশিশুরা শপিং করে। স্বাভাবিকভাবেই শপিং সেন্টারে এতো খরচ বহন করা রংধনু ফাউন্ডেশনের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু শৈলি কালেকশনের মালিক বর্তমানে রংধনু ফাউন্ডেশনের জেনারেল মেম্বার মাহবুবুর রহমান এগিয়ে আসেন। তিনি নামমাত্র মূল্যে পথশিশুদের শপিং করার সুযোগ করে দেন। এভাবেই ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০০০ এর উপর শিশু এভাবে শপিং করে।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের চইকা মাদ্রাসায় দ্বিতীয়বারের মতো শিক্ষার্থীদের পাঞ্জাবী এবং ফ্রক সেলাই করে তাদের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয়। অর্থাৎ সমাজের সকলস্তরের অসহায় শিশুদের মাঝে ঈদের খুশি ছড়িয়ে দিচ্ছে রংধনু ফাউন্ডেশনের ইভেন্ট ‘ ঈদের খুশি’। এই বছরও ঠিক একইভাবে চলছে শিশুদের ঈদ শপিং কার্যক্রম।
শুধু এই দুইটি সংগঠন নয় নগরীতে প্রায় শতাধিক তারুণ্যের সংগঠন এভাবে ঈদবস্ত্র বিতরণ করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিদ্যানন্দ, নগরফুল, স্মাইল বাংলাদেশ, আন নূর ফাউন্ডেশন, স্বপ্ন মিছিল, কল্যাণ, ডায়নামিক সিটি লায়ন্স ক্লাব ও গোল্ডেন সিটি লিও ক্লাব।