পণ্য পরিবহনে ধর্মঘট গণপরিবহনেও বাধা

55

নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ বিভিন্ন দাবিতে পণ্যপরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে গতকাল বন্ধ ছিল বন্দরের পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রেইলর, প্রাইম মুভার, কার্গো, ট্রাক, লরি। আর পণ্যপরিবহন বন্ধ রাখার কথা থাকলেও শ্রমিকেরা বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেট কার চলাচলেও বাধা প্রদান করেন। তবে দুপুরের পর থেকে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। গতকাল বুধবার সকাল থেকে ধর্মঘট চলাকালে দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। অবশ্য দুপুরের পর থেকে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে গতকাল সকাল থেকে কোনো পণ্য ডেলিভারি হয়নি বলে জানান বন্দর সচিব ওমর ফারুক। তিনি বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের কারণে পণ্য ডেলিভারি হয়নি।
জানা যায়, নতুন সড়ক পরিবহন আইনে শাস্তির মাত্রা বাড়ানোর বিরোধিতা করে আসছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা। তাদের দাবি, সড়ক পরিবহন আইন স্থগিত করে মালিক শ্রমিকদের আয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জরিমানার বিধান ও দন্ড উল্লেখ করে সঠিক আইন প্রণয়ন করতে হবে।
নগরীর বিভিন্ন স্পটে সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখায় অলংকার মোড় থেকে ওই রুটের সকল যান চলাচল বন্ধ ছিলো। নগরের বড়পোল, হালিশহর, ঈদগাঁও, মনসুরাবাদ, পোর্ট কানেক্টিং (পিসি) রোড এলাকায় শ্রমিকেরা প্রাইভেট কার, টেম্পো, সিএনজি ট্যাক্সি, জরুরি পণ্যপরিবহনের ছোট ভ্যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেন।
সকাল ১০টার দিকে ১০নং রুটে গাড়ি চলাচলে বাধা প্রদান করেন পণ্যপরিবহন শ্রমিকেরা। এসময় চালক-যাত্রী ও শ্রমিকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও জোর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। গাড়ি না পেয়ে হেঁটে কর্মস্থলের উদ্দেশে যেতে দেখা গেছে অনেক যাত্রীকে।
যাত্রী দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিয়মিত বড়পোল থেকে আগ্রাবাদ গাড়িতে করে আসি। আজকে গাড়ি না থাকার কারণে পায়ে হেঁটে আসতে হচ্ছে।
অজয় বড়ুয়া বলেন, দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর চকবাজার থেকে ডাবল ভাড়া দিয়ে আগ্রাবাদে এসেছি। জানিনা দেরি হওয়াতে অফিসের স্যারেরা কি বলবেন। এভাবে চললে তো আমরা কাজকর্ম করতে পারবো না।
আহমেদ নামের এক যাত্রী বলেন, কয়েকদিন পরপরই কোনো ইস্যু পেলেই সড়কে পরিবহন শ্রমিকেরা গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সরকারও কোনোভাবে এদেরকে দমাতে পারছে না। আর তাই আমাদের সাধারণ যাত্রীদের ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
বাসচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, সকালে বাস নিয়ে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পর কয়েকজন এসে বাস চালানো যাবে না বলে ঘোষণা করে। এসময় বাসে থাকা যাত্রীদেরও নামিয়ে দেয় তারা।
প্রাইম মুভার ট্রেইলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিকী পূর্বদেশকে বলেন, সড়ক আইনটি শ্রমিক ও জনবান্ধব করার লক্ষ্যে ডাকা ধর্মঘটের সমর্থনে কনটেইনার পরিবহনকারী গাড়ি প্রাইম মুভার চলাচল করছে না। শ্রমিকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন।
বাংলাদেশ জাতীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পূর্বাঞ্চলের (সিলেট-চট্টগ্রাম) সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, আমাদের সংগঠনটি পরিবহন শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ করে। তাই আজ (বুধবার) শুধুমাত্র পণ্যপরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে আমাদের সমর্থন রয়েছে। তবে গণপরিবহণ চলাচলে বাধা দেয়ার বিষয়ে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। কিছু উৎসুক শ্রমিক এমন কাজ করছেন। আমরা তাদেরকে গণপরিবহন চলাচলে বাধা না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।
নতুন সড়ক আইন বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান থেকে বাস্তবসম্মত নয় বলে এর সংশোধন দাবি করে তিনি বলেন, যেখানে আমাদের দেশের মন্ত্রী হতে শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি নেই সেখানে ড্রাইভারদের লাইসেন্স পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হচ্ছে। এটি বাতিল করতে হবে। এছাড়া নো পার্কিং করার আগে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না করে আইন করা হয়েছে। আর কোনো শুনানি ছাড়া আইনটি করা কোনোভাবে বাস্তবসম্মত মনে হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, যেখানে আমাদের দেশের পথচারীরা রাস্তা পারাপার শিখতে পারে নাই, সেখানে আইন করে সড়কের দুর্ঘটনাগুলোকে নরহত্যার সাথে তুলনা করা হয়েছে। বিভিন্ন মোড়ে সিগন্যাল বাতিগুলোও ঠিক নাই। তাই আমরা মহাসড়কগুলোকে চার লেন থেকে আট লেন করার দাবিসহ আইনটি সংশোধন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রæপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন বেলাল পূর্বদেশকে বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন যুগোপযোগী বিধায় তার প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল এবং এ আইন মেনে নিয়েছি। তাই আমাদের গাড়ি চলবে।
সকালে কেন গাড়ি চলেনি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সকালে পিকেটিং হওয়াতে চালকেরা ভয়ে ছিলেন। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার যান চলাচল সচল হয়।
অবরোধের ব্যাপারে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, সকালে দুরপাল্লার পরিবহন চলাচলে বাধা দিয়েছিলো একটি চক্র। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের ধাওয়া করলে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়। আর কেউ যদি আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, তাহলে সে শাস্তি ভোগ করবে। আমরাও মাঠে আছি, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।