পটিয়ায় বাস-মাইক্রোবাস মুখোমুখি সংঘর্ষ নিভে গেল ৪ প্রাণ

122

পটিয়ায় যাত্রীবাহী বাসের সাথে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে মাইক্রোবাস চালকসহ ৩ জন ঘটনাস্থলে এবং অপরজন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। এ দুর্ঘটনায় আহত হন ১১ জন। তাদেরকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার ভাইয়ার দীঘিরপাড় এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় এলাকার মুন্সি মিয়ার পুত্র আনোয়ার হোসেন (৪৮) ও মাইক্রোবাস চালক সাকিব (১৮), লোহাগাড়ার পদুয়া এলাকার বাসিন্দা হাফেজ মিয়ার পুত্র পোস্ট অফিসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান (৫০) এবং বান্দরবানের বালাঘাটার বাসিন্দা মাইক্রোবাসের হেলপার নাজিম উদ্দিন (১৬)।
এ দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে আলী আহমদ (৪০), ফরহাদ (২৫), ইরফান (৩৫), আহমদ হোসেন (৫৫), রাশেদুল ইসলাম (৩২), হাসান (২৫), দিলীপ (৫০), নাসির উদ্দিন (৪৫), তৌকির আহমদ এর নাম জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যাত্রীবাহী বাসটি সৌদিয়া পরিবহনের। এটি চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার এবং মাইক্রোবাসটি সাতকানিয়ার কেরানিহাট থেকে নগরীর দিকে যাচ্ছিল।
তারা জানান, সকালে মহাসড়ক শিশিরে ভেজা থাকার কারণে মহাসড়কে লবণ পানির আস্তরণ কিছুটা পিচ্ছিল ছিল। ওই অবস্থায় কক্সবাজারগামী সৌদিয়া পরিবহনের বাস (চট্টমেট্রো-ব-১১-০২৩৫) একটি ট্রাককে দ্রুত গতিতে ওভারটেক করে যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা চট্টগ্রামগামী মাইক্রোবাসের (চট্টমেট্রো-চ-১১-৪৯৫২) মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে পাশের খালি জমিতে পড়ে যায়।


এ সময় ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের ৩ জন ও হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও একজনের মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে কারও হাত, কারও পাসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তবে সৌদিয়া বাসের যাত্রীরা বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা থেকে রক্ষা পান।
পটিয়া থানার এএসআই মোহাম্মদ সোহাগ বলেন, মুখোমুখি সংঘর্ষের পরই পটিয়া ও সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা উদ্ধার অভিযানে নামেন। তাদের সাথে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন। এরপর হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এছাড়া গাড়ি দুটি জব্দ করে হাইওয়ে পুলিশ।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, দুর্ঘটনার পর আহতাবস্থায় ১১ জনকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সৌদিয়া পরিবহনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, সৌদিয়ার বাসটি নির্দিষ্ট লাইন ছেড়ে অন্যপাশে গিয়ে মাইক্রোবাসকে চাপা দিয়েছে। এতে সহজে অনুমান করা যায়, দুর্ঘটনার দায় সৌদিয়া পরিবহনের বাসটির। এ কারণে বাসটির চালক ও মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হচ্ছে।

শোকের মাতম
পুরানগড়ে
শহীদুল ইসলাম বাবর, সাতকানিয়া
সিএনজি চালিত অটোরিক্শা চালনার মধ্যদিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন সাতকানিয়ার পুরানগড় ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসহাক মিয়ার ছেলে সাকিব (১৮)।
কয়েক বছর এ পেশায় থাকার পর সম্প্রতি স্থানীয় আরেক জনের সাথে শেয়ারে একটি পুরাতন মাইক্রোবাস কেনেন। তা নিয়ে পুরানগড়ের নতুনহাট ও বাজালিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাওয়ার পথে চন্দনাইশ পটিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় পুরানগড়ের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন ও চালক সাকিবসহ ৪ জন নিহত হন। গুরুতর আহত হন আনোয়ার হোসেনের ছেলে ফরহাদসহ অন্তত ১১ জন।
সড়ক দুর্ঘটনায় পুরানগড়ের আনোয়ার ও সাকিব নিহত হওয়ার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে পুরো ইউনিয়নজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। তাদের ঘরে শুরু হয় শোকের মাতম।


পুরানগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ ফ ম মাহবুবুল হক সিকদার জানান, নিহত আনোয়ার ও আহত তার ছেলে ফরহাদ চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আর সাকিব দুর্ঘটনা কবলিত গাড়িটি চালিয়েই নির্বাহ করতেন পরিবারের জীবিকা। কর্মঠ এ দুই ব্যাক্তির মৃত্যুতে পুরানগড়বাসী কাঁদছে।
জানা যায়, দুপুর দুইটার সময় পুরানগড়ে পৌঁছে আনোয়ার হোসেনের লাশ। এ সময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টির হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ নুরুন্নবী জানান, আনোয়ার হোসেনের রয়েছে তিন ছেলে সন্তান। এর মধ্যে ফরহাদ বাবার সাথেই চট্টগ্রাম শহরে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন। আর ছোট ছেলে রিয়াদ পুরানগড় শাহ শরফুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
সকালে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পরীক্ষার হলে চলে যাওয়ার কারনে বাবার মৃত্যুর সংবাদটি সাথে সাথে পায়নি রিয়াদ। পরে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তার বাবার মৃত্যুর সংবাদ পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন রিয়াদ।
এদিকে বিকাল পাঁচটায় সাকিবের লাশবাহী গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে নতুনহাটে পৌঁছলে উপস্থিত শত শত লোকজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। গতকাল রবিবার মাগরিবের পরেই জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।