পটিয়ার চাঁনখালী খাল গিলে খাচ্ছে লবণ ব্যবসায়ীরা

87

পটিয়ার চাঁনখালী খাল লবণ ব্যবসায়ীদের প্রধান ট্রানজিট পয়েন্ট। এ খাল না থাকলে গড়ে উঠতো না লবণশিল্প। এখন খালটি দখলের প্রতিযোগিতা চলছে লবণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে। একজন ব্যবসায়ী খালের পূর্ব তীর দখল করলে, পশ্চিম তীরে দখল করেন অন্য ব্যবসায়ী। চাঁনখালী ব্রিজের উত্তরে এক ব্যবসায়ী দখল করলে, দক্ষিণে দখল করেন অন্য ব্যবসায়ী।
অবৈধ দখল, দূষণ, নাব্যতা ও প্রশস্ততা কমে যাওয়ার কারণে এটি মরা খালে পরিণত হচ্ছে। ধংস হতে চলেছে পটিয়ার লবণ শিল্প। অনেক আগেই খালের দক্ষিণাংশে প্রায় ৩ কিলোমিটার শ্রীমাই খালের পলিতে ভরাট হয়ে বরকল খাল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। খালের নাব্যতা সংকটে লবণবাহী বোট যাতায়াতে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি পটিয়া পৌরসভাসহ পূর্বাঞ্চলের পানি নিষ্কাশনে সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। এ অবস্থা থেকে খালটিকে রক্ষা করা না হলে পটিয়ার লবণ শিল্প বিলুপ্ত হওয়ার পাশাপাশি পৌর এলাকাসহ বিশাল একটি অংশে জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করবে।
জানা গেছে, এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যবসায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চাঁনখালী খাল ভরাট ও খালের দুইপাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে। এসবের কারণেই লবণবাহী ইঞ্জিন চালিত বোট চাঁনখালী খালে চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে।
পটিয়া লবণ মিল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে একটি লিখিত অভিযোগ দিলেও খাল দখল ও ভরাট বন্ধ হচ্ছে না। খালের দুইপাড় দখল করে লবণ কারখানা, দোকান, বসতঘর গড়ে তোলা হচ্ছে। ইন্দ্রপুলের ইন্দ্রপুলের
এদিকে ইন্দ্রপুলের সাথে কিরিঞ্জাখালের যে সংযোগ রয়েছে, তার দুই কিলোমিটার সম্পূর্ণ ভরাট। যার কারণে ওই খাল দিয়ে নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র ইন্দ্রপুল থেকে চাঁনখালী খালের উত্তর দিকে বোয়ালখালী খাল হয়ে কর্ণফুলী নদীর সাথে যোগাযোগ রয়েছে। এখানকার লবণ মিল মালিকরা কক্সবাজার, চকরিয়া, মগনামা, বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, টেকনাফ ও রাজাখালী এলাকা থেকে ইঞ্জিন চালিত বোট দিয়ে নৌপথে ইন্দ্রপুল শিল্প এলাকায় কাঁচা লবণ আনেন। চাঁনখালী ও কিরিঞ্জাখালের মুখ সম্পূর্ণ ভরাট থাকায় এ পথে নৌ চলাচল করা যাচ্ছে না। এছাড়া জোয়ার-ভাটার এ খালের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু অংশ ভরাট, অবৈধ দখল ও খালের প্রায় অংশে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে চাঁনখালী খাল নাব্যতা হারাচ্ছে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে শিল্প মালিকরা দাবি জানিয়েছেন।
লবণ মিল মালিক সূত্রে জানা গেছে, বৃটিশ আমলে ইন্দ্রপুল লবণ শিল্প এলাকা গড়ে উঠে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৮ সালে এ এলাকা আরও প্রশস্ত হয়। কাঁচা লবণ সংগ্রহের মাধ্যমে ক্রাসিং ও বয়েল্ড করার পর তা দেশ-বিদেশে বাজারজাত করা হয়। আগে এখানে শতাধিক মিল কারখানা থাকলেও বর্তমানে ৫০টিতে নেমে এসেছে। শিল্প মালিকরা প্রতিদিন খালে বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনা ফেলে জোয়ার-ভাটার চাঁনখালী খাল ভরাট ও দূষণ করছে।
পটিয়া লবণ মিল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও জে কে সল্ট ক্রাসিং ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আমানত সল্টের মালিক মোহাম্মদ সাইফু, চাঁনখালী সল্টের মালিক আবু তালেব সাহেল, আল্লাই সল্টের মালিক ফজলুল হক আল্লাই, এসএ সল্টের মালিক নাজিম উদ্দিন, দোকান মালিক নাছির উদ্দিন, আবদুল মাবুদ, রফিক সল্টের মালিক হাজী মো. রফিক ইসলাম, ভাড়া বাসার মালিক আবদুল নবী, খালের পশ্চিম পাড়ে আনোয়ারা সল্টের মালিক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মিন্টু, মোরশেদ, আইয়ুব, মোহাম্মদ তোরাব খালের পাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে।
খাল অবৈধ দখল ও ভরাট হওয়ার কারণে কক্সবাজার ও বাঁশখালী থেকে কাঁচা লবণবাহী বোট স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। অথচ চাষী পর্যায় থেকে লবণ সংগ্রহ করে নৌপথে পটিয়ার ইন্দ্রপুল কারখানায় আনা হয়।
এছাড়া পটিয়া পৌরসভা, হাইদগাঁও, শ্রীমাই খালের পানিসহ পটিয়ার পূর্বাঞ্চলের ড্রেন ও বৃষ্টির পানি চাঁনখালী খাল হয়ে প্রবাহিত হয়। গুরুত্বপূর্ণ এ খালের বিশেষ বিশেষ অংশে ভরাট করে ফেলায় আগামী বর্ষা মওসুমে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী খালে ময়লা-আবর্জনা ও পাথর ফেলে খাল ভরাট করে যাচ্ছে। দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তা কার্যকর হচ্ছে না।
পটিয়া ভ‚মি অফিসের সার্ভেয়ার আ ন ম বদরুদ্দোজা জানিয়েছেন, পটিয়া ইন্দ্রপুল খালের দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। খাল ভরাট ও স্থাপনার কারণে এ খাল প্রকৃত নকশার সাথেও মিলছে না। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। দখলকারীদের মৌখিকভাবে স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। যদি তারা সরিয়ে না নেন, তাহলে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া করা হবে।
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান জানিয়েছেন, চাঁনখালী খাল ভরাট ও অবৈধ স্থাপনার বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন। অবৈধ দখলদার পাওয়া গেলে উচ্ছেদের পাশাপাশি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।