ন্যায়বিচার, দ্রুত রায়ে আস্থা বাড়ছে মানুষের

55

এ আদালতে প্রতিনিধি মনোনয়নে আবেদনকারী ও প্রতিবাদী সমান সুযোগ এবং নিজের কথা নিজে বলতে পারেন। আইনজীবীর দরকার হয় না। সমঝোতার ভিত্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় নতুন করে বিরোধ সৃষ্টির আশঙ্কা নেই এবং বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের মধ্যে সুসম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সুযোগ মিলছে। এ কারণে বড়উঠান ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রাম আদালত আইন-২০০৬ অনুযায়ী, ছোট-খাটো ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিরোধ স্থানীয়ভাবে মিমাংসার জন্য গ্রাম আইন করা হয়। প্রতিটি ইউনিয়নে গ্রাম আদালত পরিচালনার বিধান থাকলেও বর্তমানে অধিকাংশ ইউনিয়নে আদালতের কোন ধরনের কাযক্রম পরিচালিত হয় না। কোন বিচার প্রার্থী ইউনিয়ন পরিষদে গেলে, তা সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে গিয়ে নানা বিপত্তির সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু ভিন্ন নজির সৃষ্টি করেছে বড়উঠান ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম।
জানা গেছে, সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার নিয়মিত আদালত বসে এ ইউনিয়নে। আদালতের আদলেই মামলাগুলো আমলে নেয়া এবং আদালতের ৫ সদস্যের অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে একের পর এক সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। এরপর খুশি মনে ফিরতে দেখা যায় মামলাগুলোর উভয় পক্ষের বিচার প্রার্থীদের।
জানা গেছে, গ্রাম আদালত চুরি, ঝগড়া-বিবাদ, কলহ বা মারামারি, প্রতারণা, পাওনা টাকা আদায়, অস্থাবর সম্পত্তি উদ্ধার বা তার মূল্য আদায়, কৃষি শ্রমিকদের পরিশোধযোগ্য মজুরি ও ক্ষতিপূরণ আদায়, গবাদি পশু সংক্রান্ত এবং নারীকে অমর্যাদা বা অপমান করাসহ ১৫টি বিষয়ে মামলা নিষ্পত্তি করতে পারে। সে আলোকে বড়উঠান ইউনিয়নের গ্রাম আদালতে গ্রামীণ স্থানীয় জনগণ বিশেষ করে নারীসহ দরিদ্র ও বিপদগ্রস্ত সবমানুষ আইনি সহায়তা পাচ্ছে। গ্রাম আদালতের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ের বিরোধগুলো স্বল্প খরচ ও স্বচ্ছতার সাথে দ্রæত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।
শিকলবাহা ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী (৬৫) জানান, তার কন্যা জেসমিন আক্তারের সাথে বড়উঠানের ৪ নম্বর ওয়ার্ডস্থ শাহমীরপুরের বাসিন্দা মৃত জাফর আহমদের পুত্র মোহাম্মদ মঞ্জুরের ৪ বছর আগে বিয়ে হয়। তার ঘরে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বর্তমানে সে অন্তঃসত্ত¡া। ৩ মাস আগে জেসমিন আক্তার শিকলবাহাস্থ বাবার বাড়ি বেড়াতে আসেন। এরপর থেকে স্বামী তার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না। স্বামীর সাথে যোগাযোগ করা হলে নানা কথা বলছেন।
এ নিয়ে বড়উঠান ইউনিয়ন পরিষদে মামলা করা হয়। এরপর সেখান থেকে নোটিশ জারি করা হয়। সে মতে গত ৯ ফেব্রুয়ারি উভয় পক্ষ গ্রাম আদালতে হাজির হন। সেখানে উভয় পক্ষের কথা শুনে আদালতের সদস্যরা সমস্যার সমাধান করে দেন। উভয় পক্ষ সে সিদ্ধান্ত হাসিমুখে মেনে নেন। এরপর জেসমিন আক্তার স্বামীর বাড়ি ফিয়ে যান। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান জেসমিন আক্তারকে মাতৃত্বকালীন ভাতার ব্যবস্থা করে দেন।
এমন আরও বেশ কয়েকটি মামলা নিষ্পত্তি করা হয় এবং কয়েকটি মামলা সাক্ষীর জন্য রাখা হয়। এভাবেই চলছে এ ইউনিয়নের গ্রাম আদালতের বিচার কার্যক্রম।
কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম জানান, তার ইউনিয়নের গ্রাম আদালতে দ্রæত মামলার মিমাংসা করতে তিনি সফল হয়েছেন। এ আদালতের মাধ্যমে জনসাধারণের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে এবং জনগণ উপকৃত হচ্ছে। এ কারণে এলাকার লোকজন গ্রাম আদালতে বেশি আসছেন। এর সুফলও তারা পাচ্ছেন।