নোয়াখালীতে ‘স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে দলবেঁধে ধর্ষণ’

92

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে এক নারীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটের দিন নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে বাগবিতন্ডার পর এই ঘটনা ঘটেছে বলে ওই নারী দাবি করেছেন। তবে এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ ধর্ষণের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও বলেছেন, এর সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের কোনো সংযোগ নেই।
এই ঘটনায় মামলার পর একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ওই নারী ও তার স্বামীকে।
সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবিলী ইউনিয়নের মধ্যবাগ্যা গ্রামে গত ৩০ ডিসেম্বর (রবিবার) রাতে ওই নারীকে দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন ওই নারী ও তার স্বামী। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারী (৪০) সাংবাদিকদের বলেন, রবিবার সকালে তিনি তার এলাকায় পাঙ্খার বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে তার বাগবিতন্ডা হয়েছিল। এরপর রাতে নিজের বাড়িতে ধর্ষণের শিকার হন ওই নারী।
তিনি বলেন, রাত ১২ টার দিকে এলাকার মোশারফ, সালাউদ্দিন, সোহেলসহ ১০-১২ জন তার বাড়িতে এসে প্রথমে বসতঘর ভাঙচুর করে, ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পিটিয়ে আহত করে। পরে স্বামী ও স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে ঘরে বেঁধে রেখে তাকে বাইরে নিয়ে পিটিয়ে আহত করে এবং গণধর্ষণ করে।
তার অটোরিকশাচালক স্বামীও বলেন, ‘মোশারফ, সালাউদ্দিন ও সোহেলসহ ১০-১২ জন ঘর-দুয়ার ভাঙচুর করে। ঘরে ঢুকে প্রথমেই আমাকে পিটিয়ে আহত করে। পরে আমাকে ও আমার স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে বেঁধে রেখে আমার স্ত্রীকে ঘরের বাইরে নিয়ে গণধর্ষণ করে। তাকে তারা পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহতও করে’।
হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর প্রতিবেশীরা এসে এই পরিবারটিকে উদ্ধার করেন। পরে স্বামী-স্ত্রীকে পাঠানো হয় নোয়াখালী সদর হাসপাতালে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনের শরীরে মারধরের জখম রয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম। তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে এক নারী সোমবার দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রাথমিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তবে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে’।
অভিযোগটি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘চরজুবলী ইউনিয়নের কোনো ভোট কেন্দ্রে আমাদের দলের কর্মী-সমর্থকরা কারও সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে- এমন অভিযোগ একবারেই ভিত্তিহীন। ধর্ষণের ঘটনার সাথে আমাদের দলের কারও সম্পর্ক নেই। আওয়ামী লীগের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য পরিকল্পিতভাবে কেউ এই ঘটনায় আমাদের দলকে জড়ানোর চেষ্টা করছে। আমরাও চাই প্রকৃত অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শান্তি হোক’।
পুলিশ সুপার ইলিয়াছ শরীফ বলেন, ‘গণধর্ষণের ঘটনা সত্য হলেও এর সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। কেউ এটাকে রাজনৈতিক কালার দেওয়ার চেষ্টা করছে’।
এই ঘটনায় নয়জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চর জব্বার থানার ওসি নিজাম উদ্দিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মামলার এজাহারে ‘পূর্ব বিরোধের জেরে’ হামলা ও ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘সব আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে’। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, মধ্যবাগ্যা গ্রামের সোহেল, হানিফ, স্বপন, চৌধুরী, বেচু, বাসু, আবুল, মোশারেফ ও সালাউদ্দিন।
পুলিশ সুপার ইলিয়াছ শরীফ বলেন, ‘আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। অভিযুক্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’।