নেত্রকোনার ৫ জনের ফাঁসির রায়

50

মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মাওলানা সহ পাঁচ আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ বৃহস্পতিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন এবং অগ্নিসংযোগসহ মোট সাতটি অভিযোগের মধ্যে ৫টিতে মৃত্যুদন্ড একটিতে যাবজ্জীবন ও আরেকটি অভিযোগে ১০ বছরের সাজা প্রদান করা হয়েছে। এটি হচ্ছে ট্রাইব্যুনালের ৩৬ তম রায় । রায় ঘোষণার সময় প্রসিকিউটর মো. মোখলেছুর রহমান বাদল ও তার সঙ্গে ছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। অপরদিকে আসামিদের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রীয় খরচে ট্রাইব্যুনালের নিযুক্ত করা আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।
রায় ঘোষণার পর প্রসিকিউটর মুখলেসুর রহমান বাদল বলেন, সাতটি অভিযোগের মধ্যে ৫টিতে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। একটিতে যাবজ্জীবন এবং অপরটিতে ১০ বছরের দন্ড প্রদান করেছে। আসামিরা একাত্তর সালে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন এবং অগ্নিসংযোগসহ যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, আমরা তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। অন্যদিকে তবে রাষ্ট্রনিযুক্ত আসামিদের আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম বলেন, আসামিরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে যদি আত্মসমর্পণ করেন এবং আপিল করেন আমি মনে করি তারা খালাস পাবেন।
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ৫ রাজাকারের মধ্যে রয়েছে শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মাওলানা, মো. আব্দুল খালেক তালুকদার , মো. কবির খান , আব্দুস সালাম বেগ ও নুরউদ্দিন। তারা সবাই পলাতক। অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট, হত্যা, ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। গত ২৮ জানুয়ারি মামলাটির রাষ্ট্র ও আসামি উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য যেকোনোদিন (সিএভি) অপেক্ষমাণ রেখেছিলেন।
এই মামলার মোট আসামি ছিলেন সাতজন। তাদের মধ্যে কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা যান আহাম্মদ আলী (৭৮)। আর মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় মারা যান আরেক আসামি আব্দুর রহমান (৭০)। ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল আসামিদের বিচার শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) ২৬ জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দি পেশ করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান কবির ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রæয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত তদন্ত শেষ করেন। ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ তিনি প্রসিকিউশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন, এরপর ২২ মে প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন।
১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট দুপুরে রাজাকার বাহিনী নিয়ে বাড়হা গ্রামের আব্দুল খালেককে গুলি করে হত্যার পর কংস নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার অভিযোগে শহীদ আব্দুল খালেকের ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির বাদী হয়ে ২০১৩ সালে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে তদন্তে আরও তিনজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় মোট আসামি হয় সাতজন। মামলায় আব্দুল কাদির অভিযোগ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত তার বড় ভাই আব্দুল হেকিম ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করছিলেন। রাজাকাররা এ খবর জানতে পেরে তাদের বাড়িতে গিয়ে বড় ভাই আব্দুল খালেককে পিঠমোড়া করে বেঁধে মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের সন্ধান জানতে চান।ভাইদের কোনো সন্ধান না দেয়ায় তখন রাজাকার বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে ভাই খালেককে ধরে নিয়ে গিয়ে জারিয়া রাজাকার ক্যাম্পে দুইদিন আটক রেখে অমানসিক নির্যাতন চালায়। পরদিন তাকে কংশ নদীর পাড়ে গুলি করে হত্যা করে নদীতে মরদেহ ভাসিয়ে দেয় রাজাকাররা।
আসামিদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ আনা হয়। সেই অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে।