নেতারা প্রার্থী হলে আপত্তি নেই বিএনপির

37

স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিএনপি বলেছে, দলের কেউ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হলে তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। তবে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে কাউকে ধানের শীষ বরাদ্দ দেবে না বিএনপি। গতকাল শুক্রবার বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন যে হচ্ছে, ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচন হচ্ছে। এখনও পুরো ইউপি নির্বাচনে সিডিউল আসেনি। এর মধ্যে আমাদের কাছে বিভিন্নভাবে আমাদের নেতা-কর্মীরা জানতে চাচ্ছেন যে, এখানে আমাদের অবস্থান কী হবে? আমরা জানেন যে, ইতোপূর্বে যখন আপনার প্রতীক দিয়ে, পার্টির প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করার প্রশ্ন এসেছিল তখনই আমরা এর বিরোধিতা করেছিলাম। আমরা বলেছিলাম যে, পার্টির মার্কা দিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করাটা বাংলাদেশের জন্য উপযোগী হবে না এবং এটা বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করবে রাজনীতির ক্ষেত্রে। আমরা এখনও মনে করি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে মার্কা ব্যবস্থা তুলে নেওয়া উচিত। প্রকৃতপক্ষে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্থানীয়দের মার্কা ছাড়াই নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, বিএনপির যে সমস্ত নেতা-কর্মী বা যারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন তারা যদি কেউ অংশ নিতে চান, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু মার্কা সেক্ষেত্রে আমরা বরাদ্ধ করব না।’-খবর বিডিনিউজের
গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ওই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া শতাধিক নেতাকে বহিষ্কারও করে দলটি।
বরগুনায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফ নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের ক্রসফায়ারে মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘রিফাত হত্যার পর যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা বাংলাদেশের আইন-আদালত ও রাষ্ট্রের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রকাশ করা হয়েছে। দেখুন যে, নয়ন বন্ড প্রধান আসামিকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। আমরা মনে করি, নয়ন বন্ডকে হত্যা করা এটার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- আসল মদদদাতা যারা তাদেরকে আড়াল করা। তারা যেন আপনার আলোচনায় না আসতে পারে সেজন্য এটা করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, আইনের শাসনের জন্য মারাত্মক হুমকি- এটা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত বলে আমরা মনে করি।’
বিচার বহির্ভূত হত্যাকাÐের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একটি প্রতিবেদনে এসেছে গত ৬ মাসে ৪৩৮ জনকে ক্রসফায়ার ও এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার হতে হয়েছে। গতকাল সম্ভবত আদালতে একটা আদেশ এসেছে সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে যে, এ বিষয়ে তাদেরকে জানানো। এর আগে হাই কোর্টের একটা আদেশ ছিল, কোনো মতে বিচার বহির্ভূত হত্যা করা যাবে না। এটা সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থি, আইনের শাসন পরিপন্থি, সংবিধান পরিপন্থি। অর্থাৎ এটা প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে, এই দেশে এখন আইনের শাসন বলতে কিছু নাই। জনগণের বেঁচে থাকার যে অধিকারটুকু সেটাও এখন নেই। কারণ তারা এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে যে কোনো সময়ে যে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করার অধিকার তারা নিয়ে নিয়েছে। যেটা আমরা মনে করি একটা স্বাধীন দেশের জন্যে, আইনের শাসনের জন্যে পরিপন্থি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদের যে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল প্রকাশ করেছে তার মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণ হয়েছে এই নির্বাচন ‘কতটা প্রহসন’ ছিল।
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন প্রায় ২১৩ কেন্দ্রে শতকরা ১০০ ভাগ ভোট পড়েছে, ১৫০০-এর উপরে ভোট কেন্দ্রে শতকরা ৯৫-৯৯ ভাগ ভোট পড়েছে। যেটা অসম্ভব ব্যাপার, যেটা বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সেটা কখনোই সম্ভব নয়। ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে, এই নির্বাচন কমিশন সরকার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং এই নির্বাচনটাকে প্রহসনে পরিণত করেছে। আমরা এ বিষয়ে তথ্য আরও ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। অল্প দিনের মধ্যে আমরা আপনাদের সামনে আসব।’
পাবনায় শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলিবর্ষণের মামলার রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২৪ বছর পরে নিম্ন আদালত থেকে যে রায় দেওয়া হয়েছে, এতে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ও বিক্ষুব্ধ হয়েছে। সভা মনে করে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং পুরোপুরি প্রতিহিংসামূলক রায় হয়েছে এটা। যে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল সেই ঘটনাতে গুলির আওয়াজ শুনা গিয়েছিল, কিন্তু কেউ হতাহত হয়নি। সেই গুলির আওয়াজ সম্পর্কেও একজন খুব পরিচিত ব্যক্তি ছিলেন যিনি এর আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সাথে কাজ করেছিলেন রেন্টু তার ‘আমরা ফাঁসি চাই’ বইতে বলেছিলেন, এটা একটা সাজানো ব্যাপার ছিল, তৎকালীন আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা ছিল। এই ধরনের রায় নজিরবিহীন। আমরা মনে করি, এই ধরনের রায় শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়, প্রতিহিংসা পরায়ন। এতোটুকু ন্যায় বিচার যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিলো তারা পায়নি। যাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা সবাই বিএনপির স্থানীয় বা অঙ্গসংগঠনের লোকজন। আমরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছি।’
গত বুধবার পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত ১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে শেখ হাসিনার ট্রেনে হামলা মামলায় ৯ জনের ফাঁসি, ২৫ জনের যাবজ্জীবন ও ১৩ জনের ১০ বছরের সশ্রম কারাদÐ দেয়।
বিকাল ৪টা থেকে দুই ঘণ্টা গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির এই বৈঠক হয়। বৈঠকে মির্জা ফখরুল ছাড়াও খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন। লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।