নুসরাত হত্যার মূল সন্দেহভাজন নুর উদ্দিন গ্রেপ্তার

72

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকান্ডের মূল সন্দেহভাজন নুর উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ফেনীর সোনাগাজীর উত্তর চর চান্দিয়া গ্রামের এই যুবককে ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে তা জানায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই।
নুসরাতের গ্রামেরই যুবক নুর উদ্দিন (২০) সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্র। ওই মাদ্রাসায়ই পড়তেন নুসরাত। এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছিলেন নুসরাত। গত ২৬ মার্চ নুসরাতের মা শিরীনা আক্তার মামলা করার পরদিন সিরাজকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। খবর বিডিনিউজের
অধ্যক্ষ সিরাজকে গ্রেপ্তারের পরদিন তার মুক্তির দাবিতে সোনাগাজীতে যে মিছিল-সমাবেশ হয়েছিল, তাতে সংগঠকের ভূমিকায় ছিলেন নুর উদ্দিন। ওই সমাবেশে তিনি হুমকি দিয়েছিলেন, অধ্যক্ষ সিরাজকে মুক্তি না দিলে মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
অধ্যক্ষ সিরাজকে নিয়ে ‘খারাপ রিপোর্ট’ করা হলে সাংবাদিকদেরও দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন এই যুবক।
অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছিল নুসরাতকে। তা না করায় গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার দিন মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বোরকা পরা কয়েকজন এই কাজটি করেছিল বলে নুসরাত নিজে বলে গেছেন।
বোরকা পরা ওই হামলাকারীদের মধ্যে নুর উদ্দিনও ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া শাহাদাত হোসেন শামীম (২০) নামে চর চান্দিয়া গ্রামের আরেক যুবককেও সন্দেহ করা হচ্ছে। তিনিও ওই মাদ্রাসার ছাত্র।
দুই বছর আগে দাখিল পরীক্ষার সময় আক্রান্ত হয়েছিলেন নুসরাত। তখন তার চোখে দাহ্য পদার্থ ছুড়ে মারা হয়েছিল। ওই ঘটনায়ও নুর উদ্দিনকে সন্দেহ করা হয়।
ধানমন্ডিতে পিবিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ওই দিন অন্তত চারজন বোরকা পরে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে অন্তত একজন মহিলা ছিল, এটা নিশ্চিত। তার কথায় স্পষ্ট, ওই দিন বোরকা পরিহিতদের মধ্যে পুরুষও ছিলেন।
নুসরাতকে হত্যার দুটি কারণ পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন আসামি নুর উদ্দিন।
ডিআইজি বনজ মজুমদার বলেন, আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী দুটি কারণে নুসরাতকে হত্য করা হয়। এর একটি আলেম সমাজকে হেয় করা। অপর কারণটি হচ্ছে আসামি শাহাদাত হোসেন শামীমের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান।
নুর ও শামীম দুজনই অধ্যক্ষ সিরাজের ‘অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ’ বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার পর তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান যে মামলা করেন, তার প্রধান তিন আসামি হলেন অধ্যক্ষ সিরাজ, নুর ও শামীম। ময়নসিংহেরই মুক্তাগাছা থেকে শুক্রবার শামীমকে গ্রেপ্তারের কথা জানান পিবিআই কর্মকর্তারা। তবে বনজ মজুমদার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “শামীম আমাদের নজরদারিতে আছে, তাকে নিয়ে আমরা অভিযান চালাচ্ছি।”
নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার পর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠলে সোনাগাজী থানার ওসিকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইকে।
পিবিআই দায়িত্ব নেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে নুসরাতের ভাইয়ের ভাইয়ের করা মামলার আট আসামির মধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হল।
আট আসামিদের মধ্যে হাফেজ আবদুল কাদের নামে একজন এখনও পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারেই শামীমকে নিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে পিবিআই কর্মকর্তারা জানান।
গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম, মাদ্রাসাটির শিক্ষক আফছার আহমেদ, মাদ্রাসাটির সাবেক ছাত্র জাবেদ হোসেন ও জোবায়ের আহমেদ।
এজাহারের আসামিদের বাইরে অধ্যক্ষ সিরাজের ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপিসহ কয়েকজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে আদালতের অনুমতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পিবিআই।