নুর আহমদ চেয়ারম্যান : চট্টগ্রামের বাতিঘর

122

আবু তালেব বেলাল

১.
সমৃদ্ধ চট্টগ্রামের স্বপ্নদ্রষ্টা নুর আহমদ চেয়ারম্যান ছিলেন কলিমউল্লাহ মাস্টারের শিক্ষা ভাবাদর্শের অনুগামী। শিক্ষা একটি জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের বড়হাতিয়ার এ কথাটি সহজে আয়ত্ত করতে পেরেছিলেন চট্টগ্রাম পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান নুর আহমদ। তিনি যে নগরের সেবা করবেন সেই নগরের ভবিষ্যৎ নাগরিকরা কেমন হওয়া চাই, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ সমুদ্র বন্দরের শহর এলাকার উন্নয়নে কেমন নেতৃত্ব চাই-মূলত এসব বিবেচনায় নুর আহমদের চেতনাকে বিদ্যোৎসাহী মনোভাবে শানিত করে এবং সময় ও সুযোগের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক অবৈতনিক শিক্ষার প্রচলন করেন। অতি দ্রæত এ ব্যবস্থাকে পুরো শহরব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে তিনি শুধু ভারতে নয়; এশিয়ায়ও আলোচিত হন। তাঁর অবিস্মরণীয় প্রয়াসে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা শিক্ষার্থীই বৃদ্ধি পায়নি, বরং শিক্ষার হারে অবিভক্ত বাংলায় চট্টগ্রাম পৌরসভা সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে ছিল। ১৯২১ সালে নুর আহমদ চট্টগ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে তিনি শারীরিক অক্ষমতার অজুহাতে অব্যাহতি নেন। এ দীর্ঘ তেত্রিশ বছর তিনি চট্টগ্রামের অবকাঠামোর উন্নয়ন ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি মানুষের মননের উন্নয়নে শিক্ষা নামক বৃক্ষের যে বীজ বপন করেন তা চট্টল বীর মরহুম মহিউদ্দিন চৌধুরীর হাতে মহীরুহ রূপধারণ করেছে। আজ চট্টগ্রামবাসী তাঁর রূপ প্রত্যক্ষ করছে।
২. ১৮৯০ খ্রি. ২৫ ডিসেম্বর নুর আহমদ নগরীর আলকরণে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হাজী আমজাদ আলী সওদাগর চট্টগ্রামের একজন খ্যাতিমান ব্যবসায়ী ছিলেন। নুর আহমদ চেয়ারম্যানের মাতা পেয়ারজান। তিনিও ছিলেন সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান ও মহীয়সী। পিতা ও মাতার অতি আদরের সন্তান নুর আহমদ পিতার ব্যবসায়ী ব্যস্ততার মধ্যেও নিজপুত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং তাঁকে একজন ভবিষ্যত সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর কর্তব্যবোধ থেকে তিনি বিচ্যুত হননি। জানা যায়, চার বৎসর ৬মাস বয়সে পিতা নুর আহমদকে স্থানীয় মসজিদের মক্তবে ধর্মীয় প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তি করা হয়। সাত বৎসর বয়সে তাঁকে এনায়েত বাজারে মাস্টার কলিম উল্লাহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। বিশ শতকে আলকরণ, এনায়েতবাজার, আন্দরকিল্লা, জামালখান এলাকা মিলে এটিই একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। কলিম উল্লাহ মাস্টার এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন এবং নুর আহমদ এর ছাত্র ছিলেন। ১৯০৩ সালে এখান থেকে তিনি পঞ্চম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভসহ প্রাইমারি বৃত্তি লাভ করেন। এরপর তিনি মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯১০ সালে এন্ট্রাস পরীক্ষায় জেলা বৃত্তি নিয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। ১৯১২ খ্রি. চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে দুটি স্কলারশীপ (চট্টগ্রাম জেলা ও বিভাগীয়) সহ আই.এ পাস করে একই কলেজে আরবি ও ফার্সি বিভাগে বি.এ অনার্সে ভর্তি হন। ১৯১৫ খ্রি. বি.এ অনার্স-এ প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। পরের বছর ১৯১৬ খ্রি. কলিকাতা বিশ^বিদ্যালয় থেকে তিনি ইতিহাসে এম.এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং গোল্ড মেডেল লাভ করেন। ১৯১৭ খ্রি. তিনি একই বিশ^বিদ্যালয় থেকে বিএল (আইন) পরীক্ষায় ও প্রথমস্থান লাভ করে চট্টগ্রামে ফিরে আসেন এবং আইন পেশায় যোগদান করেন। ১৯০৩ থেকে ১৯১৭ সন পর্যন্ত চৌদ্দ বছরের বর্ণাঢ্য শিক্ষাজীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় নুর আহমদের অভূতপূর্ব সফলতা তৎকালীন নয় শুধু, বর্তমান সময়েও বিরল বললে অত্যুক্তি হবে না। অথচ তাঁর তী² মেধা ও ঈর্ষনীয়ভাবে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করা সত্তে¡ও ইংরেজ আমলের লোভনীয় সরকারি চাকরি, শিক্ষকতা বা পৈত্রিক ব্যবসা কোনটিতে না গিয়ে নিজের অর্জনকে চট্টগ্রামবাসীর জন্য উৎসর্গ করতে মনস্থির করলেন। তাই শিক্ষাজীবন শেষে মাত্র এক বছর আইন পেশায় থেকে তারপর আধুনিক চট্টগ্রামের এক দুর্বেদ্য স্বপ্ন নিয়ে পুরোপুরি সমাজসেবার ব্রতে নেমে পড়েন।
নুর আহমদের বয়স যখন ১৭ বছরের কাছাকাছি ১৯০৭ খ্রি.। পিতা হাজী আমজাদ আলী মৃত্যুবরণ করেন। এসময় পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের অতি আবদারে সামাজিক দায়বদ্ধতাকে কাঁধে নিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়ে ১৭ বছর বয়সে চট্টগ্রামের তৎকালীন প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী হাজী চান্দ মিয়া সওদাগরের কন্যার সাথে তাঁর বিয়ে হয়। কিন্তু নুর আহমদের স্বপ্ন তাঁকে ঘর-সংসার ও পশ্চাদপদ চিন্তা থেকে বহুদূরে নিয়ে গিয়েছিল তখন “সন্তান হইতে সাধনা করিলে- লভিবে জন্মভূমি” এ চেতনায় পথ চলা বৈ আর কী-বা উপায় ছিল। এসব তীর্যক অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে শিক্ষাজীবন যখন একেবারে শেষপ্রান্তে তখর জননী পেয়ার জান বিবি (১৯১৭ খ্রি.) মৃত্যুবরণ করেন।
৩.
নিজের জীবনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও অর্জিত জ্ঞানকে দেশ ও সমাজের কল্যাণে ব্যয় করতে ১৯১৮ সালে চট্টগ্রাম পৌরসভার কমিশনার পদে নির্বাচন করেন এবং বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করেন। অত্যন্ত সফলতার সাথে জনগণের ব্যাপক সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ করে তিন বছর কমিশনারের দায়িত্ব পালন করার পর তিনি পৌরসভার সকল কমিশনারের সমর্থন নিয়ে ১৯২১ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। এ সময় থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত একাধারে সাতবার নির্বাচন করে সাতবারই অনেকটা বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়ে সুদীর্ঘ ৩৩ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। যা ভারত উপমহাদেশে আর দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত ছিল বলে জানা যায়নি।
উক্ত দীর্ঘ ৩৩ বছরে তিনি চট্টগ্রামকে একটি আধুনিক ও সভ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন এবং বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছিলেন তা বর্তমান অনুসন্ধিৎসু গবেষকদের ভাবিয়ে তুলে। ???? চট্টগ্রাম শহরে যা কিছু গৌরবের এবং জনকল্যাণকর তার ভিত্তিস্থাপক হলেন নুর আহমদ চেয়ারম্যান। মূলত এসময় নুর আহমদ চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যান একাকার হয়ে গিয়েছিলেন। নুর আহমদ চেয়ারম্যানের আগে ও পরে চট্টগ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে অনেকেই দায়িত্ব পালন করলেও কারো নামের আগে ও পরে ‘চেয়ারম্যান’ শব্দটি কেমন প্রযোজ্য মনে হয় না। যতটুকু নুর আহমদের নামের সাথে মানানসই। শুধু নাম নয়; কর্ম, সততা ও ত্যাগই তাঁকে চট্টগ্রামবাসীই ‘চেয়ারম্যান’ নামে তাঁকে জীবন্ত করে রাখে। জানা যায়, চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার ভাতা ও সম্মানি দিতেন, তিনি তাও গ্রহণ করতেন না। কারণ তিনি মানব ও সমাজসেবাকে শুধু ব্রত হিসেবেই নিয়েছিলেন।
৪.
স্বপ্ন দেখা আর তা বাস্তবায়ন করার সুযোগ খুব কম মানুষের ভাগ্যে জোটে। চট্টগ্রাম পৌরএলাকার তৎকালীন সময়কালের সর্বোচ্চ ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষিত ব্যক্তিত্ব নুর আহমদ সর্বশেষ আইন ব্যবসা ত্যাগ করে ১৯২১ সালে চট্টগ্রাম শহরের উন্নয়ন, শিক্ষা, সংস্কৃতি বিকাশ ও চট্টগ্রামবাসীর মৌলিক সমস্যার সমাধান করে চট্টগ্রাম বন্দর, শহরকে আধুনিক নগরীতে পরিণত করার প্রত্যয় নিয়ে মিউনিসিপ্যালটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। বহু প্রতিকূলতা, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর প্রতিবন্ধকতা, আর্থিক দৈন্যতা ও উপনিবেশ শাসকের অধীনে পরিচালিত প্রশাসনিক বিভিন্ন জটিলতার মধ্যে ও নুর আহমদ চেয়ারম্যান তার স্বপ্নের শহর চট্টগ্রামকে বিশে^র দরবারে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আর এর পেছনের শক্তি যোগিয়েছিল তাঁর শিক্ষামানস। তিনি চিটাগাং মিউনিসিপ্যালটির পরিচালনায় ১৯২৭ খ্রি. পৌরসভা এলাকায় অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাইমারি শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রবর্তন করেন। এটি ছিল শুধু চট্টগ্রাম নয়; পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য একটি স্মরণীয় অধ্যায় ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ। একবছর পর ১৯২৮ খ্রি. উক্ত অবৈতনিক প্রাইমারি শিক্ষাকে মেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক করে বিশ^ব্যাপী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন নুর আহমদ। নুর আহমদ শুরুতে কয়টি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন সেই সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ১৯৫৪ সালে যখন নুর আহমদ চেয়ারম্যান স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছিলেন তখন মোট ২১টি বিদ্যালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়। ১৯৭৫ সালে বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাইমারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাঁড়ায় বালক ২৪টি ও বালিকা ২৩টি।
নুর আহমদ চেয়ারম্যান প্রবর্তিত প্রাইমারি শিক্ষাব্যবস্থাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক বিষয়টি এতদঞ্চলে নতুন ধারণা। ইতোমধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরিচালনায় ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কয়েকটি প্রাইমারি, এন্ট্রাস স্কুল, কুইন্স স্কুল (ইংরেজি মাধ্যম), মীর এয়াহিয়া স্কুল (আরবি ও ফার্সি মাধ্যম), পরে নর্মাল ও মাদ্রাসা স্কুল নামে দু’ধারার শিক্ষা পদ্ধতি চালু হলেও এতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল অপ্রতুল। হুরু ঠাকুর, মৌলভী ও মাস্টার মশাইগণ বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আনা দায় হয়ে পড়েছিল। ১৮৮৫ সালে কাজেম আলী মাস্টার (১৮৫২-১৯২৬) চিটাগাং মডিল ইংলিশ স্কুল প্রতিষ্ঠার পর তাঁকে রীতিমত রাস্তায় ও মহল্লায় হেঁটে হেঁটে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আনতে হতো। নুর আহমদ চেয়ারম্যান শহর চট্টগ্রামবাসীদের তিক্ত অথচ বাস্তবতা উপলব্ধি করেই ৫ থেকে ১১ বৎসর বয়সি সকল শিশু, কিশোর-কিশোরীকে স্কুলে ভর্তি ও নিয়মিত স্কুলে পাঠানোর জন্য অনেক কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এমনকি বিদ্যালয়ে সন্তানকে না পাঠানোর অপরাধে অনেক নাগরিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলাও তিনি করেছিলেন।
নুর আহমদ চেয়ারম্যান নিজেই মাঝেমধ্যে স্কুলগুলো পরিদর্শন করতেন এবং কোনরকম অনিয়ম বা শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিত দেখলেই ত্বরিৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। তা ছাড়া পৌরসভা কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগবক্স একইভাবে বাড়ির বৈঠকখানাও একটি অভিযোগবক্স স্থাপন করেণ। যেখানে নগরবাসী শিক্ষা সংক্রান্ত কোন অভিযোগ পেলে ত্বরিৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন বলে জানা যায়। পরবর্তীতে দেখা যায়, নুর আহমদ চেয়ারম্যানের বিচক্ষণতা ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত তার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও চিন্তার প্রসারতাকেই শুধুই এগিয়ে নেয়নি; বরং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠ বন্দর ও বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রামকে বিশ^ ইতিহাসে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। চট্টগ্রাম শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যে নয়; বরং শিক্ষার ক্ষেত্রেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠ আসনটি অর্জন করেছিলেন। এ সময়ে চট্টগ্রামই একমাত্র নগরী বা পৌরশহর যার শিক্ষার হার অবিভক্ত বাংলায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঠাঁই করে নিয়েছিল। এ বিষয়ে ১৯৪২ খ্রি. তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের বঙ্গীয় আইন পরিষদের অধিবেশনে অবিভক্ত বাংলার শিক্ষার অগ্রগতির বর্ণনা দিতে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন- “শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলার মানুষ আজ আর পিছিয়ে নেই। আমি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর হতে এ পর্যন্ত শিক্ষা অধিদপ্তরের মাহপরিচালকের রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায় যে, শিক্ষার হার ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হারের দিক দিয়ে সমগ্র বাংলার (অবিভক্ত বাংলা) পৌর এলাকায় চট্টগ্রাম পৌর এলাকা সর্বোচ্চ স্থান দখল করেছে। আর চট্টগ্রাম পৌর এলাকার এ সম্মানজনক অবস্থানের জন্য কৃতিত্বের দাবীদার হলেন এই পরিষদের (বঙ্গীয় আইন পরিষদ) সম্মানিত সদস্য জনাব নূল আহমদ। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর নিকট আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি”। এখানে একটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, নুর আহমদ চেয়ারম্যানের ৩৩ বৎসরের সময়কালের প্রায় ২৬ বৎসরই ছিল ব্রিটিশ শাসনামল, বাকী ৮ বৎসর ছিল পাকিস্তান শাসনামল।
ব্রিটিশ আমলে যেখানে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে শিক্ষাকে পরিপূর্ণ ইংরেজি মাধ্যম বা মিশনারি শিক্ষায় রূপান্তর করে তাদের উপনিবেশ শাসনকে দীর্ঘতর করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত ছিল। সেখানে বিচক্ষণ নুর আহমদ চেয়ারম্যান বাধ্যতামূলক বাংলা মাধ্যম প্রাইমারি শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে উপনিবেশ শাসকদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিভিত্তিক চ্যালেঞ্জ (Intelectual Challange) ছুড়ে দিয়েছিলেন এটি মূলত তাঁর দেশপ্রেমের স্বাক্ষর। ১৯১৮ সালের দিকে আমরা কজেম আলী মাস্টারকেও একই রূপে দেখেছি। তিনি কাজেম আলী স্কুল প্রতিষ্ঠা করে চট্টগ্রামে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্র সৃষ্টি করার বুদ্ধিবৃত্তিক প্রয়াস চালিয়েছিলেন। তাদের চিন্তাধারা সফলও হয়েছিল অনেকাংশে।
লেখক: সহকারী সম্পাদক