নীল আকাশে উড়ছে ঘুড়ি

321

নোরা একটি ছোট্ট মেয়ে। তার খেলনা সখ অনেক। ব্যাটারি গাড়ি,খেলনার টেলিফোন,ব্যাটারি বইএ অ আ, এ বি সি পড়া। ওসবে খেলতে ভীষণ মজা পায় সে।
আবার নারিতাদিদির ইশকুল খাতায় আঁকতে ভালো লাগে ওর। ঠাম্মি,দাদুর চ্যান্ডেল পরে সারা ঘরে ছুটবে। দাদুর সাথে লুকিলুকি খেলে যা আনন্দ নোরার।
ধীরে ধীরে নোরা বড়ো হয়। বুদ্ধি যেন ওর পেটে ভরা। কিছু খায়না সে।
সকালে নারিতাকে নিয়ে মা ইশকুলে যায়। তখনও নোরা বাবার পাশে শুয়ে থাকে। ঘুম ভাঙতেই বাবা নোরাকে দাদুর কাছে নিয়ে যায়। নোরাকে কোলে জড়িয়ে ঘুম পাড়ায়। তারপর বিছানায় শুইয়ে দেয়।
নোরা জানে, বুঝে। মা এইসময় ইশকুলে থাকে। দাদু এখন বন্ধু, খেলার সাথী। সকাল দশটা নাহয় এগারটায় নোরার ঘুম ভাঙে। দাদু পাশে শুইয়ে মোবাইলে কবিতা, ছড়া, গল্প লিখে তখন। নোরা ঘুমচোখে হাসে। ভাঙা ভাঙা কথা বলে,
– দাদু, চকেট- চকেট!
– দাদু, ডিম খাবে? ঝাও খাবে? দাদু বলো।
– না না! মাথা নেড়ে উত্তর দেয় নোরা। বারবার বলে, চকেট, দাদু চকেট খাবো।
নোরার কথা ঠাম্মির কানে বাজে। ঠাম্মি কাছাকাছি হয়ে বলে,
– ছিঃ ছিঃ চকেট খায়না দিদিভাই। দাঁতে পোকা হবে। পেট কামড়াবে।
দাদু সবসময় চকলেট এনে রাখে। নারিতা- নোরা মাঝেমাঝে চাইলে দিতে হয়। দাদুর সামনে নোরার ভয় লাগেনা ঠাম্মিকে। বড় গলায় বলে,
– দাদু, দাদু চকেট দাও।
দাদু আলমীরা খুলে চকলেট দেয়। নোরা চকলেটের খোসা ছাড়তে পারেনা। দাদুকে বলে,
– খুলে দাও দাদু!
দাদু খুলে মুখের উপর খোসাকে চাপ দিতেই চকলেট টুক শব্দ করে মুখে চলে যায়। তখন নোরার কি আনন্দ। মুখে হিঃ হিঃ হাসির শব্দ।
একটুপর বিজয়া দিদিমনি ডিমের ওমলেট আনে। ততক্ষণে চকলেট শেষ। এবার ডিম ওমলেট। দাদু ঐ ওমলেটকে সাতআট টুকরো করে। পরপর একটুকরো খাবার পরেই হাততালি দিতে হয়।
এবার লুকিলুকি খেলা।
দাদু লুকাবে, নোরা খুঁজবে।
নোরা লুকাবে দাদু খুঁজবে।
এভাবেই নোরার দিন যায়।
নারিতা ইশকুল থেকে ফেরে। ইশকুল ফেরেই কার্টুন দেখবে। ওর আবার কার্টুন দেখার সখ। নারিতার সঙ্গী হয় নোরা ও। দু’জন কার্টুন দেখে।
একদিন দুপুরে নারিতা- নোরা ছুটে আসে দাদুর ঘরে।
দাদু ঘুমুচ্ছিলো তখন। নারিতা ডাকে,
-দাদু, দাদু।
নোরা ও ডাকে,
-দাদু দাদু।
দাদু ঘুমপাগল মানুষ। সারাদিন শুয়ে থাকে বিছানায়। দাদুর কানে যায়না নারিতা- নোরার ডাক। রেগে যায় দু’জন! বড়ো গলায় ডাকে,
-দাদু দাদু, শুনছো?
দাদু চোখ খোলে ধীরে ধীরে।
দাদু দেখে নারিতার হাতে একটা খাতা। দাদুর কৌতূহল বাড়ে। ভাবে কান্ড কি? নিশ্চয়ই অনেক মজার হবে। দাদু উঠে বসে বিছানায়। নারিতা খাতাটা দাদুর চোখের সামনে বাড়িয়ে দেয়। নারিতা বলে,
– দাদু দেখো, ঘুড়ির লেজে নারিতা- নোরা উড়ছে।
দাদু খাতাটা হাতে নেয়। বড়ো চোখে দেখে ইয়া বড়ো রঙিন একটি ছবি। ছবিতে রঙিণ বড়ো ঘুড়ি। ছবির নাম রেখেছে নীলআকাশে উড়ছে ঘুড়ি। ঘুড়ির নীচে রঙবে-রঙিণ লম্বা একটা লেজ। লেজের নীচে নারিতা- নোরার ছবি। অস্পষ্ট। তবু অনেক সুন্দর।
দাদু ছবি দেখে দারুণ খুশি। ভাবে, এত ছোট ওরা। অথচ স্বপ্ন অনেক বড়ো। দাদু ছবি দেখে বলে,
– দাদু ঘুড়িটা উড়ছে,ভারি সুন্দর। তবে লেজটা বেশি লম্বা।
– দাদু দাদু,লম্বা লেজ নাহলে আমি- নোরা লেজের নীচে দুলবো কেমন করে? যদি পরে যায় মাটিতে,ব্যথা পাবো, তাই এই লম্বা লেজ। একটু ভাবোতো!
– ও,তাই লম্বা লেজ দিয়েছো! তো ঘুড়ি ওড়াবে কে?
– তুমি। তোমার হাতেতো নাটাই থাকবে। নারিতা- নোরা দু’জন একসঙ্গে উত্তর দেয়। আরো বলে, দাদু আমরা থাকবো আকাশে। ঘুড়ির সাথে উড়বো। আর তুমি নাটাই হাতে আমাদের দেখে হাসবে।
– কিন্তু এই ছবিতে দাদুতো নেই। দাদুর হাতে নাটাই নেই। এখন কি হবে?
নারিতার চোখ লজ্জায় লাল হয়। কোনও রকমে বলে,
– দাদু তুমি একটু বসো, ততক্ষণে আমি, নোরা তোমার ছবিটি এঁকে আনছি।
নারিতা- নোরা চলে যায়।
দাদুর চোখে ওদের প্রতিভার আগ্রহ,আকাঙ্খা দেখে মন ভরে যায়!