নীতিমালা মেনে শুরু হচ্ছে স্বর্ণ আমদানি

65

সরকার প্রণীত নীতিমালায় শিগগির শুরু হচ্ছে স্বর্ণ আমদানি কার্যক্রম। এর আওতায় ভরি প্রতি এক হাজার টাকা দিয়ে বৈধ করা যাবে অবৈধ স্বর্ণ। নীতিমালার কারণে স্বর্ণ চোরাচালান কমবে বলে ধারণা ব্যবসায়ী মহলের।
জানা যায়, স্বাধীনতার পর গত ৪৭ বছরে দেশে কোনো প্রকার স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা ছিল না। উপরন্তু স্বর্ণ আমদানি ছিল খুবই কঠিন কাজ। একারণে ৪৭ বছরে এক কেজি স্বর্ণও আমদানি করা হয়নি।
বেসরকারি গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বার্ষিক ১৮-৩৬ মেট্রিক টন স্বর্ণের চাহিদা থাকলেও আমদানির সুযোগ না থাকায় চোরাচালানের মাধ্যমেই চাহিদার অনেকটা পূরণ হচ্ছিল। সামান্য পূরণ করা হত ব্যাগেজ রুলের আওতায়।
আমদানি নীতিমালা না থাকায় সা¤প্রতিক বছরগুলোতে সোনা চোরাচালান বেড়ে যায়। গত চার বছরে বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে দেড় হাজার কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে। আর স্বাধীনতার পর থেকে অবৈধ উপায়ে আসা স্বর্ণের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কেজি বা ১২৫ মণেরও বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৬০ মণ স্বর্ণের মালিকের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
এছাড়া মামলায় মালিকানা ঝুলে আছে আরও প্রায় ৩০ মণের। তবে ১৫ কেজি স্বর্ণ আদালতের নির্দেশে শুল্ক পরিশোধ সাপেক্ষে দাবিদারদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। আর কিছু বিক্রি করা হয়েছে নিলামের মাধ্যমে।
বৈধ পথে আমদানি না হওয়ায় স্বর্ণখাতে সরকার যেমন বছরে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছিল। এই প্রেক্ষাপটে স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় সরকার।
গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত ডিলারদের মাধ্যমে সোনা আমদানির বিধান রেখে ‘স্বর্ণ নীতিমালা ২০১৮’ অনুমোদন করে অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
চোরাচালান ও স্বর্ণ খাতে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ এর অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। নীতিমালার অভাবে এ খাতে বেশ অরাজকতা ছিল। এ ছাড়া নতুন নীতিমালায় পরিষ্কার করা হয় অলঙ্কারের সংজ্ঞাও।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানিতে উৎসাহ এবং নীতিগত সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে রপ্তানি বৃদ্ধিকরণ এ নীতিমালার লক্ষ্য। স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক ও ঋণ সুবিধা যৌক্তিকীকরণ ও সহজীকরণে এ নীতিমালা ব্যবহৃত হবে।
আরো বলা হয়, সারাবিশ্বে শুধু ২০১৬ সালে অলঙ্কার রপ্তানি হয়েছে ৬৩৮ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই হস্ত নির্মিত অলঙ্কারের প্রায় ৮০ শতাংশই ভারত এবং বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। রপ্তানি ব্যুরোর পরিসংখ্যান মতে বাংলাদেশ ৬৭২ মার্কিন ডলার এবং ভারত রপ্তানি করেছে ৪২ দশমিক ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেই হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচে। তবে বাংলাদেশের দেশের শ্রমিক ভারতে গিয়ে স্বর্ণ তৈরি করে বেশি।
নীতিমালায় বলা হয়, অনুমোদিত ডিলার সরাসরি স্বর্ণবার আমদানি করতে পারবে এবং এ স্বর্ণবার অলঙ্কার প্রস্তুতকারকদের কাছে বিক্রি করতে পারবে। তৈরি অলঙ্কার বিদেশে রপ্তানি করা হবে। স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করার ক্ষেত্রে হলমার্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
তবে মনোনীত অথরাইজড ডিলার, ব্যাংক অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত একক মালিকানাধীন কোনো অংশীদারি প্রতিষ্ঠান বা লিমিটেড কোম্পানি অনুমোদিত ডিলার হিসেবে গণ্য হবে। আমদানিকারকদের প্রতি মাসের শুরুতে সোনার হিসাব যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করতে হবে।
নীতিমালায় অলংকারের সংজ্ঞায় বলা আছে, স্বর্ণ দ্বারা প্রস্তুতকৃত অলংকার এবং স্বর্ণের পরিমাণ নির্বিশেষে স্বর্ণের সাথে হীরক, রৌপ্য ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর মিশ্রণে প্রস্তুতকৃত অথবা সাধারণ পাথর দ্বারা খচিত অংলকার।
চট্টগ্রাম জুয়েলারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন কান্তি ধর জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছি। সরকার তাতে সাড়া দিয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এবার বৈধভাবে দেশে স্বর্ণ আমদানি হবে। সরকারও রাজস্ব পাবে।
জানা যায়, শিগগিরই নীতিমালা অনুযায়ী স্বর্ণ আমদানি শুরু হচ্ছে। লাইসেন্সধারি ডিলাররা বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি করতে পারবেন।
এদিকে প্রচারণা বাড়াতে সরকার স্বর্ণ মেলার আয়োজন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ মেলায় ব্যবসায়ীরা সরকারকে ভরিপ্রতি এক হাজার টাকা দিয়ে অবৈধ স্বর্ণ বৈধ করার সুযোগ পাবে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, স্বর্ণ আমদানির জন্য যাচাই কর্তৃপক্ষ গঠন, বাংলাদেশ ব্যাংকে স্বর্ণের তথ্য ভান্ডার গড়ে তোলা, আমদানির পর বাজারে স্বর্ণ কতটুকু মজুদ আছে, কতটা বিক্রি হয়েছে, সেসব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকারককে ভরিপ্রতি শুল্ক দিতে হবে দুই হাজার টাকা। ভ্যাটের হার ধরা হয়েছে পাঁচ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শিগগিরই নীতিমালা অনুযায়ী স্বর্ণ আমদানি শুরু হবে। এই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে স্বর্ণ নীতিমালার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। নীতমালা হওয়ার পরও ব্যাপক প্রচারণা না থাকায় ব্যবসায়ীরা এখনও এ বিষয়ে জানে না। ফলে স্বর্ণ আমদানিতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম। এজন্য স্বর্ণ মেলার আয়োজন করা হবে।