নিষিদ্ধ বিলবোর্ড ব্যবসায় সিটি কর্পোরেশনের গাড়িচালক

740

ঝুঁকিপূর্ণ বড় বড় বিলবোর্ডে ঢাকা ছিল বন্দরনগরী। সব বাধা-বিপত্তি অগ্রাহ্য করে একে একে সব বিলবোর্ড উচ্ছেদ করে সিটি কর্পোরেশন। বিলবোর্ডমুক্ত পরিচ্ছন্ন নগরীর যাত্রা শুরু হয়। এ সাফল্য দেখিয়েছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। কিন্তু মেয়রের এমন অর্জনের সুনামে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন খোদ সিটি কর্পোরেশনেরই একজন কর্মচারী। কর্পোরেশনের গাড়িচালক হয়েও সুকৌশলে করে যাচ্ছেন নিষিদ্ধ বিলবোর্ড ব্যবসা। সিটি কর্পোরেশনের নাম ভাঙিয়ে নগরীতে টাঙাচ্ছেন বিলবোর্ড। কর্পোরেশনের এই কর্মচারীর নাম মো. আলী। তিনি গাড়িচালক হিসেবে কর্পোরেশনে কর্মরত রয়েছেন। পূর্বদেশের কাছে বিলবোর্ড স্থাপনের কথা অপকটে স্বীকারও করেছেন তিনি। কর্পোরেশনে চাকরি করলে কি ব্যবসা করা যাবে না ? উল্টো এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি। অন্যদিকে বিলবোর্ডের সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
নগরীর চকবাজার মোড়ে মোতালব মার্কেট। সেই মার্কেটের সম্মুখ অংশে রয়েছে একটি বড় বিলবোর্ড। সেখানে সায়েন্স কেয়ার নামের একটি কোচিংয়ের বিজ্ঞাপন ঝুলছে। ভবনটির দায়িত্বে রয়েছেন মোরশেদ নামের এক ব্যক্তি। বিলবোর্ডের বিষয়ে তিনি পূর্বদেশকে বলেন, ভবনের মালিকের সাথে দুইবছরের চুক্তি করেছেন কর্পোরেশনের চাকরিজীবী মো. আলী। তিনিই কোচিং সেন্টারকে ভাড়া দিয়েছেন। এছাড়াও দেওয়ান ব্রিজের পূর্বপাশে আরেকটি বড় বিলবোর্ড রয়েছে। সেখানে সাইগনাসের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হচ্ছে। এখানেও ভবন মালিক থেকে ভাড়া নিয়ে বিলবোর্ড স্থাপন করেছেন মো. আলী। পরে অন্যজনের কাছে মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠানটির নাম রায়হান এড ফার্ম। এছাড়াও এবি এড ফার্ম নামে তার আরও একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানা গেছে।
নগরীর খুলশী এলাকার ১নং রোড়ের মুখে পয়েটিক কোচিং সেন্টারের একটি বড় বিলবোর্ড রয়েছে। এই বিলবোর্ডটিও মো. আলী ভাড়া দিয়েছেন। এই তিনটি বিলবোর্ড ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন জায়গায় আরও বিশটির মত বিলবোর্ড রয়েছে বলে জানা গেছে। শুধু নগরীতে নয়, বিভিন্ন উপজেলার মূল সড়কে বিলবোর্ড স্থাপন করে কৌশলে ব্যবসা করে যাচ্ছেন এই চালক।
সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগের সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর কোথাও বিলবোর্ডের অনুমতি দেওয়া হয়নি। নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে বিলবোর্ড নিষিদ্ধ করেছে সিটি কর্পোরেশন। পূর্বদেশের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চালক মো. আলী বিভিন্ন স্থানে নিজেকে সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দেন। তারপর ভবন মালিককে দিয়ে চুক্তি করান। এভাবে মূলত বিলবোর্ড ব্যবসা বিস্তার করে যাচ্ছেন সিটি কর্পোরেশনের এই গাড়িচালক। ভবন মালিকের সাথে চুক্তি শেষে বিলবোর্ডের ‘এঙ্গেল’ স্থাপন করেন। তারপর বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানিতে বিলবোর্ড ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব পাঠান। যেখানে নিজেকে সিটি কর্পোরেশনে অগ্রিম কর প্রদানপূর্বক অনুমোদিত এজেন্ট হিসেবে উল্লেখ করেন। গত এক দশক ধরে সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি চালানোর পাশাপাশি বিলবোর্ড ব্যবসা করে যাচ্ছেন মো. আলী।
এ বিষয়ে মো. আলী পূর্বদেশকে বলেন, আমি সিটি কর্পোরেশনের পানির গাড়ি চালাই। শহরে বিলবোর্ড ব্যবসা করি। তবে তা সিটি কর্পোরেশনের জায়গায় নয়, ভবন মালিক থেকে ভাড়া নিয়ে বিলবোর্ড স্থাপন করি। সিটি কর্পোরেশনের একজন কর্মচারী হয়ে অনুমোদনহীন ভাবে কিভাবে বিলবোর্ড স্থাপন করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনে চাকরি করলে কি ব্যবসা করা যাবে না। শুধু আমি তো না, শহরে অনেকেরই বিলবোর্ড রয়েছে। সেগুলো নিয়ে কারো মাথা-ব্যথা নেই।
সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন পূর্বদেশকে বলেন, অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বিলবোর্ড মুক্ত নগরী গড়ছি। সেখানে এমন কর্মকান্ড মেনে নেওয়া যায় না। আমি খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। বিলবোর্ডের সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন মেয়র।