নিশ্চয়তা মিলেনি পাঁচ বছরেও

70

চট্টগ্রামে আবেদনের পাঁচ বছর পার হতে চললেও নিশ্চয়তা মিলছে না আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগের। অথচ এই পাঁচ বছর ধরে ২০ হাজার গ্রাহকের ২৫ কোটি টাকা কর্ণফুলী গ্যাসের কোষাগারে আটকা রয়েছে। এসব আবেদনের সংযোগ কখন দেওয়া হবে, আদৌ দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষের কোনো সদুত্তর নেই।
জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গ্রাহকদের গ্যাস সংকটের সমাধান দিতে পারেনি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (কেজিডিসিএল)। সারাদেশে চাহিদা মাফিক গ্যাস সরবরাহ দিতে ব্যর্থ হয়ে ২০১০ সালের ১৩ জুলাই আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে নানামুখী চাপে সরকার আবাসিক গ্রাহকদের নতুন গ্যাস সংযোগের সিদ্ধান্ত নেয়। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ৭ মে সংযোগ বন্ধের আদেশ প্রত্যাহার করে নতুন সংযোগ দেওয়ার পেট্রোবাংলার প্রস্তাব অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে পেট্রোবাংলার নতুন আবেদন নেওয়ার সিদ্ধান্তের পর চট্টগ্রামে নতুন সংযোগ পেতে ২০ হাজার আবেদন জমা পড়ে। এতে ডিমান্ড ফি হিসেবে প্রায় ২৫ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা পড়ে। ২০১৫ সাল থেকে নতুন আবেদন ও সংযোগ একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কেজিডিসিএল সূত্রে জানা যায়, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্পখাত মিলিয়ে চট্টগ্রামে গ্যাসের গ্রাহক রয়েছে ৫ লাখ ৮০ হাজার। তন্মধ্যে আবাসিক গ্রাহক ৫ লাখ ৭৫ হাজারের অধিক। তাছাড়া শিল্পকারখানা আছে এক হাজার ৫০০। চট্টগ্রামে সিএনজি ফিলিং স্টেশন আছে ৭০টি। শিল্প, বাণিজ্যিক, সার-বিদ্যুৎ ও চা বাগানসহ সব মিলে আরো ৪ হাজার ৯২টি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাসের গ্রাহক। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা থাকে ৪৮০-৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
গত ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট থেকে চট্টগ্রামে বহুল প্রতীক্ষিত এলএনজি সরবরাহ শুরু করে পেট্রোবাংলা। তারই ধারাবাহিকভাবে বর্তমানে ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস পাচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস। অথচ ২০১০ সালের ১৯ এপ্রিল যাত্রা শুরুর পর থেকেই চাহিদার অর্ধেকের কম গ্যাস পেয়ে আসছিল কর্ণফুলী গ্যাস। দীর্ঘদিন ধরে ১৮০ থেকে ২২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছিল চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে এলএনজি আসার পর থেকে চট্টগ্রামে গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও নতুন গ্যাস সংযোগের জন্য ২০ হাজার আবেদনের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না কর্ণফুলী গ্যাস। উপরন্তু চট্টগ্রাম গ্রাহক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটি নতুন সংযোগ আবেদনের সমস্যা সমাধানের জন্য পেট্রোবাংলা ও বিইআরসি’র (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন) সিদ্ধান্তের উপর চেয়ে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন আবেদন নেওয়ার পর ওই সময় থেকে এখনো নতুন সংযোগ দিতে পারেনি কর্ণফুলী গ্যাস। ফলে অনিশ্চয়তায় পড়েছে এসব আবেদনকারীরা। নিয়মানুযায়ী ঠিকাদারদের মাধ্যমেই আবেদন থেকে শুরু করে সংযোগ নেওয়ার প্রক্রিয়াটি সারতে হয় গ্রাহকদের। শুধু ডিমান্ড নোট (জামানত) হিসেবে সরকারি কোষাগারে ২৫ কোটি টাকা নিয়মমাফিক জমা পড়লেও ঠিকাদারদের চার্জ, সংযোগের নকশা তৈরি, সংযোগস্থলে রাস্তা, আঞ্চলিক সড়ক থাকলে (গ্যাস পাইপের সংযোগ তৈরির জন্য রাস্তা কাটার প্রয়োজন হলে) স্থানীয় পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুমতিপত্র আবেদনের সাথে সংযুক্ত করার পরেই এসব আবেদন গ্রহণ গৃহিত হয়। আবার অলিখিত অফিস খরচ হিসেবে চাহিদা মাফিক ‘ঘুষ’ নেওয়ার পরই ডিমান্ড নোট ইস্যু করে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। তবে নতুন সংযোগ দিতে ব্যর্থ হলে শুধু ব্যাংকে জমা অর্থই ফেরত পাবেন সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীরা।
ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালের শেষের দিকে নতুন গ্যাস সংযোগ নেওয়ার জন্য অনেকে আবেদন করেন। মূল লাইন থেকে সংযোগ অনুযায়ী দূরত্ব হিসেব করে প্রথম তিন মিটার বাদে পরবর্তী প্রতি মিটার পাইপের জন্য এক হাজার ৬০ টাকা করে হিসেবে ডিমান্ড নোটের সাথে জমা দিতে হয়েছে। এতে একেকটি আবেদনের জন্য ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকাও জমা দিতে হয়েছে। আবার ঠিকাদারের চার্জ ও ডিমান্ড নোট ইস্যুতে কর্ণফুলী গ্যাস কর্মকর্তাদের ঘুষও দিতে হয়েছে। কিন্তু অফিসিয়াল সব কাজ শেষ হলেও দীর্ঘ পাঁচ বছরে চট্টগ্রামে গ্যাসের নতুন সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে কথা হলে কেজিডিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক খায়েজ আহমদ মজুমদার প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের কাছে নতুন সংযোগের যেসব আবেদন রয়েছে তার হিসেব আমরা পেট্রোবাংলার কাছে পাঠিয়েছি। আমাদের কাছে প্রায় ২০ হাজার নতুন সংযোগের আবেদন জমা আছে। নতুন সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে পেট্রোবাংলা থেকে সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’