নির্বাচন নিয়ে টিআইবি-সুজন বিভ্রান্ত করছে

21

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে টিআইবি ও সুজন ‘ভ্রান্ত’ তথ্য নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। নির্বাচনের আট মাস পর গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও বিশিষ্টজনদের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এই মত প্রকাশ করেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সময় কাজী রিয়াজুল হক মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হচ্ছে মানুষের অধিকার, মানবাধিকার। এই মানবাধিকার এই দেশের মানুষ সব সময় আনন্দের সাথে ভোগ করেছে। কিন্তু এবারের নির্বাচনে অভিযোগ হলো এতো ভোট কিভাবে হলো?’
২০০১ সাল এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোটের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এইসব নির্বাচনেও মানুষ ভোট দিয়েছিল, ২০০১ সালে ৭৫ শতাংশ এবং ২০০৮ সালে ৮৭ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন’। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর মানুষ ‘অপশাসনের শিকার’ হয়েছিল মন্তব্য করে কাজী রিয়াজুল বলেন, ‘ওই দুঃশাসনের কথা মানুষ ভুলে যাননি। এই কারণে ২০০৮ সালে মানুষ পাগলের মতো গিয়ে ভোট দিয়েছিল। মানুষ তখন বলেছিল, যারা পাকিস্তানের এজেন্ডা নিয়ে কাজ করে, তাদেরকে আমরা চাই না’।
একই কারণে এবারের নির্বাচনেও মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনটা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হয়েছে। তারপরও কিছু জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে। টিআইবি ও সুজন… তাদেরকে আমরা বুদ্ধিমান মনে করি, কিন্তু তারাই রং মেসেজ দিচ্ছে, ভ্রান্ত এবং অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এই অধিকার তাদেরকে দেওয়া হয়নি। খবর বিডিনিউজের
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৭৬ দশমিক ৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে ১৩ শতাংশ ভোট পাওয়া বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করে। এই নির্বাচন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেছিলেন, দলীয় সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তা আবার প্রমাণিত হলো।
সব প্রার্থীর সমান সুযোগ না পাওয়াসহ বিভিন্ন ত্রুটির কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত’ বলেছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
মানবাধিকার কমিশন থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল জানিয়ে কাজী রিয়াজুল বলেন, ‘নির্বাচনের আগের দিন বিকাল থেকে আমি আমার টিম নিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রে কেন্দ্রে পর্যবেক্ষণ করি। কই, কোথাও তো কোনো ব্যালট বাক্স ভর্তি দেখিনি! আমরা বিভিন্ন ফল্ট খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোনো ফল্ট পাইনি’।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে টিআইবির করা জরিপের সমালোচনা করে সভায় ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ‘টিআইয়ের এই গবেষণা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। পৃথিবীর কোথাও শতভাগ স্বচ্ছ নির্বাচন হয়নি, তা সম্ভবও না। টিআইবির যে কোনো গবেষণায় স্বচ্ছ থাকা দরকার। যা এখানে তারা এমনটা দেখাতে পারেনি’।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইউসূফ হোসেন হুমায়ূন বলেন, ‘এই নির্বাচনে কেউ বলেনি যে কোনো বাধা দেওয়া হয়েছে। সব দল এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এখন কথা হলো, যদি পক্ষে যায় তাহলে ভালো হয়েছে, আর বিপক্ষে গেলে বলা হয় খারাপ হয়েছে!’ আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচনের বিরুদ্ধে কোনো বিক্ষোভ হয়নি যে আর্মি দিয়ে এই বিক্ষোভ দমন করতে হয়েছে। তবে কিছু ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে, যা পার্শ্ববর্তী দেশের নির্বাচনেও হয়েছে’।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুর রশিদ বলেন, ‘এই নির্বাচন নিয়ে আমরা শঙ্কায় ছিলাম যে, এতে কোনো গোলযোগ হয় কি না, মারামারি হয় কি না? কিন্তু নির্বাচনে তেমন কিছু হয়নি, কেন্দ্রে যেতে কোনো ভোটারকে বাধা দেওয়া হয়নি। নির্বাচন সংঘাত-সহিংসতামুক্ত ছিল’।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিদেশি পর্যবেক্ষক কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী গৌতম ঘোষ বলেন, ‘স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এই নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনে মারামারি হয়েছে, গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। কিন্তু এখানে (বাংলাদেশ) তো এমন কিছু হয়নি’।
নির্বাচনের সময় কাজ করতে আসা বিদেশি সাংবাদিক কলকাতা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কমল ভট্টাচার্য্য বলেন, বাংলাদেশে তিনি এর আগে আরও কয়েকটি নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, ‘এবার নির্বাচনের দিন সকাল সোয়া ৮ টায় গুলশান মডেল স্কুল কেন্দ্রে গিয়েছিলাম, আবদুল মালেক নামে এক ভোটারকে প্রশ্ন করেছিলাম- কেন্দ্রে ঢুকতে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কি না? তিনি বললেন- ‘না, কোনো বাধা কেউ দেয়নি, নির্বাচন ভালোভাবে হচ্ছে’। আরেকজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনাকে নাকি ঢুকতে দেওয়া হয়নি? তিনি বললেন- না না, আমি তো সুন্দরভাবে ভোট দিয়েছি’। এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে দাবি করে নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
নির্বাচনে নেপালের পর্যবেক্ষক মহাম্মদীন আলী বলেন, ‘ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়েছেন, কোথাও কোনো কারচুপি হতে দেখিনি, এমন অভিযোগ কেউ করেনি’।
সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এবং ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের তত্ত্বাবধানে বৈঠকে ফাউন্ডেশনের মহাসচিব আবেদ আলীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে সাবেক সেনাপ্রধান-হারুন-অর রশীদ, ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম হাবিবুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমেদ আবুল কালামসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।