নির্বাচন ও ক্ষমতা

79

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ২৯ মার্চ। এ নির্বাচন স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন। এটা স্থানীয় জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এবার মেয়র পদে নতুন মুখ। অর্থাৎ নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। অর্থাৎ নতুন মুখের পালাবদল। পক্ষান্তরে ওয়ার্ড পর্যায়ে ২৮ জন নতুন মুখ মনোনয়ন পেয়েছেন। এটা নেত্রী ও উচ্চ পর্যায়ের নেত্রীবৃন্দের ইচ্ছার প্রতিফলব্ধ। দলীয় সিদ্ধান্তই সর্বোচ্চ সিদান্ত। এ সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করার অর্থ হচ্ছে নেত্রী ও দলীয় হাই কমান্ডকে অসম্মান করা। দলকে অবহেলা করার নামান্তর এবং দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সামিল। যারা দলের সিদ্ধান্তের প্রতি অনুরাগী তারই ত্যাগী নেতার পদবাচ্য। ত্যাগই দলের জন্য শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত করবে। দলকে শক্তিশালী করবে। কেউ কেউ বলেন বড়ো দলে গ্রুপিং থাকবে। এটা আমি বিশ্বাস করিনা এবং অনুসরণও করিনা। আমার এ্যাথিক হচ্ছে দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকা, যুক্তির খাতিরে যুক্তি নয়। তর্কের খাতিরে বিতর্ক নয়। ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের ফল আজকের স্বাধীনতা। দলীয় সিদ্ধান্তকে ইস্পিত লক্ষে পৌঁছিয়ে দিতে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস আবশ্যক। আমি রাজনীতি, বিশেষ করে দেশপ্রেমিক রাজনীতিকদের অন্তর থেকে ভালোবাসি। তারা দেশের অমূল্য সম্পদ। বিশেষ করে যারা ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত, যারা দেশকে ভালোবাসতে জানে। দেশের দূর্দিনে যারা অকুতোভয়, লড়াকুসৈনিক। দেশের স্বার্থে যারা আপোসহীন, যারা বিপদের ক্ষণে মানুষের পাশে অবস্থান করে, যারা সর্বস্তরের মানুষের সাথে সুব্যবহার করতে জানে তাঁদের স্থান সাধারণ মানুষের চিত্তের অভ্যন্তরে। যে ব্যক্তি অহংকারি, হিংসাপরায়ন অর্থলোভী তাদের জন্য রাজনীতি নয়। যে মানুষকে ভালোবাসতে জানে সেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে শ্রদ্ধা পাবেই। অর্থলোভী যারা তাদের চরিত্রে যথেষ্ট খাদ। এক নিখাদ চরিত্রের মানুষ আজকের দিনে খুব করে আবশ্যক। যারা আত্মসমালোচনা করতে জানে তারাই যেন নিজের জন্য উত্তম বিচারক। আমার লেখনির মাধ্যমে কোন দলকে বা কোন ব্যক্তিকে নাম উল্লেখ না করে কোন মানসিক অভিব্যক্তি উপস্থাপন করা থেকে নিজেকে সামলে রাখতে চেষ্টা করি। করি এজন্যে তা আমার কাছে কেমন জানি রুচিবিরোধী বলে মনে হয়। যেকোন অবাঞ্চিত উক্তি মানুষের মনে কষ্টদায়ক। রাষ্ট্রের স্বার্থহানি করলে এমন লোক বিবেক বর্জিত। ভোট আমাদের পবিত্র আমানত এ আমানত, যেকোন কিছুর বিনিময়ে সংরক্ষণের চেষ্টা করতে হবে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে গণতান্ত্রিক মনমানসিকতার চর্চা আবশ্যক। কেউ কারো প্রতি অসহিষ্ণু এবং বিদ্বেষমুখি হলে গণতন্ত্রের চলার পথে ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি হবে। ক্ষমতা এবং অর্থের মাধ্যমে মানুষের চরিত্র মূল্যায়ন করা যায়। অর্থ ও সম্পদ পেয়ে মানুষ কতটুকু সংযমী, ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে মানুষ কতটুকু ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে বা কতটুকু বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সেটাই বিবেচ্য বিষয়। ধর্ম মানুষকে সঠিক পথ বাতলিয়ে দেয়। যারা ধর্মীয় রীতিনীতির অনুসারি নিশ্চয় তারা উত্তম। রাষ্ট্রে এবং সমাজে উত্তম মানুষের প্রয়োজন খুব বেশি। এদেশে যারা বসবাস করে সবাই এদেশের নাগরিক এবং পুরোমাত্রায় নাগরিক অধিকার ভোগ করার অধিকারী। সংখ্যালঘু কনসেপ্টটা হীনমন্যতার নামান্তর। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিশ্বাস করি। তিনি বলেছেন ‘এদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, বাঙ্গালী নন বাঙ্গালী আমরা সবাই ভাই ভাই, তাদের যাতে কস্ট না হয়, আমাদের যাতে বদনাম না হয়’। এমন বড়ো মাপের কথা ভারত উপমহাদেশের বলতে শোনা যায়নি কোন নেতার মুখ দিয়ে। তারপরও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন ? এটা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। আমরা যদি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানে ঐক্য পরিষদ গঠন করতে পারতাম তা হতো অত্যন্ত দৃস্টিনন্দন এবং গ্রহণযোগ্য। এবারকার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রার্থী দাঁড়িয়েছে। এ চর্চা যদি বিদ্যমান থাকে তবে কোন সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চর্চা চালু হলে অবাক হবার কিছুই থাকবে না। কেউ ধর্মনিরপেক্ষতা ঈড়হপবঢ়ঃ কে কুক্ষরী মতবাদ আখ্যায়িত করেছে। ভুলেগেলে চলবেনা বিদায় হজের মূল্যবান ভাষণে হযরত মোহাম্মদ (স.) বলেন, ‘ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা। এর ফলে অতীতে বহুজাতি ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে। ইসলাম জোরজুলুমের ধর্ম নয় সহযোগিতা সহনশীল তা এবং সহমর্মীতার ধর্ম। জঙ্গিবাদ ও ধর্মীয় উন্মাদনা ইসলাম সমর্থন করেনা। যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁরা যদি নীতিবোধে উজ্জীবিত হন এবং মানুষের জন্য ভালবাসা উজার করে দিতে জানেন গণরায় নিশ্চয় তাদের পক্ষে যাবে। ক্ষমতা পেয়ে যারা ক্ষমতার দম্ভ প্রদর্শন করে গণরায়ের মাধ্যমে তাদের দর্পচুর্ণ হলে অবাক হবার কিছুই না। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা আলে ইমরানের (২৬-২৭) আয়াতে উল্লেখ করেন বলো হে আল্লাহ! তুমিই সমস্ত রাজ্যের অধিপতি, ‘তুমি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব প্রদান করো। আর যার নিকট থেকে ইচ্ছা রাজ্য কেড়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা তুমি সম্মান দান কর্আর যাকে ইচ্ছা অপদস্ত করো, যাবতীয় কল্যাণ তোমারই হাতে ন্যস্ত’। নিশ্চয় তুমি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। তুমি রাতকে দিনে পরিণত করো এবং দিনকে রাতে পরিণত করো, আর তুমি মৃত থেকে জীবিতকে নির্গত করো এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করো। যাকে ইচ্ছা তুমি অপরিমিত জীবিকাদান করে থাকো।
অবশ্যই কোরআনের এ বাণী সত্য একমাত্র আল্লাহ, যাকে ইচ্ছা ক্ষমতার মসনদে বসাতে পারে এবং সম্মানিত করতে পারে, ক্ষমতার যারা অপব্যবহার করে আল্লাহর ইচ্ছায় তারাই অপদস্ত হবে। এটাই আল্লাহর চূড়ান্ত ফয়সালা। সমস্ত কল্যাণ আল্লাহর আয়াতে যারা এ বিষয়টা অনুধাবন করবে তাদের জন্যই জনমর্থন এবং গণরায় অপেক্ষা করছে। যিনি এসত্য উপলব্ধি করে ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার করেছেন এমন একজন পরপর ছয়বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন জনগণের সেবক হিসেবে। নাম উল্লেখ করলাম না। তাঁকে আমি ভালবাসি, শ্রদ্ধা করি। মাঝেমধ্যে সাক্ষাৎ হয়, কথা হয় তৃপ্তিতে হাসি বিনিময় হয় বুকে সাথে বুকের স্পর্শ হয়। তাঁকে আমি ভাই বলে ডাকি, হাস্যেজ্জ্বল মুখ। কি সাধাসিধে জীবন তারপর প্রাপ্তির তেমন কোন স্পিৃহা নেই। শুধু মানুষের ভালোবাসা। হঠাৎ মান্না দের একটি গানের দু’টো চরণ স্মরণে এসে গেলো ‘ অভিনন্দন নয়’ প্রশংসা নয়, নয় কোন সংবর্ধনা, মানুষের ভালোবাসা পেতে চাই আমি’এ শুধু কামনা। মানুষের ভালোবাসায় যে লোকটা সিক্ত না, তাঁর নাম কখনোই বলবোনা এ আমার ছোট্ট গল্পের জানার কৌতুহল।
আজকে নিবন্ধনটা লিখতে গিয়ে হঠাৎ মনে পড়লো ইংরেজ কবি Robert Browing এর Patriot কবিতা ঐ কবিতার মাধ্যমে Patriol এর আবির্ভাব এবং তিরোভাবের মাধ্যমে শেষ পরিণতি কি যে মর্মান্তিক তা উপস্থাপন করতে কবি প্রয়াসী হয়েছে। কবিতার মূলভাবটা নিয়ে বাংলায় কাব্যিক রূপে রূপায়িত করতে চেষ্টা করছি।
Patriot
Robert Browing

অনুবাদে আবদুল হাই
আমার সমস্ত চলার পথ গোলাপে গোলাপে সাজানো মার্টেল পুষ্পে পুষ্পে কদমার্থে রাঙানো।
বাড়ির ছাদে ছাদে রঙ্গীন পতাকা
বাতাসে আন্দোলিত এদিক ওদিকটা।
ভোরের কুয়াশা ভাঙা ঘণ্টা
পুরানো ইটের দেয়ালেও ভিড় করা জনতা,
মানুষগুলোর চিৎকার জয়ধ্বনি,
কেবলি কি চিৎকার ? দেখি সূর্যটা দাও মোরে আনি।
ওরা বলে, দেশপ্রেমিক এরপর চাওয়ার আর কি আছে বাকী ?
আমার রোপিত একটি বছরের শস্য,
যা নিখাদ ছিলোনা জনতার জন্য।
একি দৃশ্য সুউচ্চ ঘরের ছাদে
জনতা দৃশ্যমান নেই ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে।
মুষ্টিমেয় কেউ দাঁড়িয়ে আছে জানলা পাশে
পুরোনো উৎকৃষ্ট জনের নিকৃষ্ট পরিণতি দেখতে।
শক্তিহীন দেহে বৃষ্টিতে হেঁটে যাই হস্ত কব্জি পেছন থেকে শক্তভাবে বাঁধা কষ্ট হয় হাত কেটে যায়
কপালে অনুভবে উষ্ণ রক্ত বেয়ে পড়ে
নিষ্ঠুর অভিব্যক্তির প্রস্তর নিক্ষেপে নিক্ষেপে…
এভাবে প্রবেশ আমার এভাবেই প্রস্থান
আমি দেশপ্রেমিক (Patriol )
নির্বাচনে যাঁরা অংশগ্রহণ করছেন নিশ্চয় জ্ঞানে বুদ্ধিতে তাঁরা উত্তম ও যোগ্যতাসম্পন্ন। তাঁরা প্রত্যেকে গণরায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় তাঁরা সহিষ্ণুতার পরিচয় দেবেন এটুকু প্রতাশা। এজন্য তাঁরা সহিষ্ণুতা পরিহার করবে। যারা জনগণকে ভালোবেসেছে দেশ ও জনগণের জন্য বুদ্ধি, মেধা, শ্রমকে কাজে লাগিয়েছেন তাদের তরে গণরায় অপেক্ষা করছে। কারো বিরুদ্ধে কুরুচি ও বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য নয়। গণতান্ত্রিক ভাবধারাকে অক্ষুন্ন রাখতে গণতান্ত্রিক আচরণ ও গণতান্ত্রিক বাক্য প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণকে উদ্ভুদ করা যায়। শান্তি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখার মাধ্যমে মানুষের মনে স্থান করে নেয়ার সহজপথ। এমন কোন আশ্বাসে কাকেও আশ্বস্থ করা উচিত নয় যা সক্ষমতার পরিধির বাইরে। এমনটা হলে জনগণ প্রতারিত হবে নিশ্চয়। যারা ভোটার তাদেরকে অবশ্যই ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে। ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত না হওয়া মানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনাকে অস্বীকার করার নামান্তর। ঢাকা সিটির উত্তর-দক্ষিণ মিরে গড়পড়তা ২৭% ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে, অথচ ৭৩% ভোটার ভোট দিতে যায়নি। অথচ কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এক্ষেত্রে ভোটারগণ নিজের অধিকার নিজেরা টুটি চেপে হত্যা করেছে। ভোটাধিকার সুষ্ঠু প্রয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন শক্ত পদক্ষেপ নেবেন সকল প্রার্থী ও দলের প্রতি সমান দৃষ্টি দেবেন এটাই সর্বস্তরের প্রত্যাশা। এমন প্রার্থীগণ জয়ী হোক যারা বিদ্যা,বুদ্ধি,জ্ঞানে ও সততায় সমৃদ্ধ। যারা আখেরগোছানোর জন্য মানুষের সাথে প্রতারণা করে তাদের পরিণতি অবশ্যই দূর্বিষহ হবে। দেশ ও এলাকার মানুষ আপনাকে দেখতে চায় দূর্নীতিমুক্ত দেশপ্রেমিক রূপে, সৎ ও জনগণের জন্য নিবেদিত মানুষ রূপে। মানুষকে ভালবাসুক বিনিময়ে, মানুষ শ্রদ্ধা করবে।

লেখক : কলামস্টি