নির্বাচনে ফ্যাক্টর হবে ছোট দলের প্রার্থীরা

85

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছোট দলগুলোর প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটে কপাল পুড়তে পারে হেভিওয়েট প্রার্থীদের। সুন্নী ও কওমীপন্থি ইসলামী দলগুলোর বেশ কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আবার সংখ্যালঘু কয়েকজন প্রার্থীও মাঠে আছেন। এসব প্রার্থীদের দিকে সুন্নী, কওমী ও সংখ্যালঘু ভোট পড়লে পাল্টে যেতে পারে ভোটের হিসাব। সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি প্রত্যেক নির্বাচনেই এ ভোটগুলো প্রভাব ফেলে আসছে।
ভোটারদের মতে, সুন্নী, কওমী ও সংখ্যালঘু ভোটাররা বরাবরের মতো এবারের নির্বাচনেও ফ্যাক্টর হবে। এ ভোটগুলো বড় দলের প্রার্থীরা ভাগিয়ে নিতে পারলে জয় অনেকটা সহজ হবে। তবে তাদের নিজস্ব প্রার্থী থাকায় এবার বড় দলগুলোকে ভোটগুলো আয়ত্বে নিতে ঘাম ঝরাতে হবে। উল্টো ছোট দলের প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটে বড় প্রার্থীদের ভোটের হিসেবে ব্যবধান গড়ে দিতে পারে।
সূত্র জানায়, মোমবাতি ও চেয়ার প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন সুন্নী মতাদর্শে বিশ্বাসী প্রার্থী। আবার হাতপাখা প্রতীকে নির্বাচন করছেন ওহাবী মতাদর্শী প্রার্থীরা। এবারের নির্বাচনে চট্টগ্রামের প্রত্যেকটি আসনেই হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা নির্বাচন করছেন। তাঁদের নিজস্ব ভোটব্যাংক আছে। পাশাপাশি হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের কোনও প্রার্থী না থাকায় কওমী অনুসারীরা হাতপাখার দিকেই ঝুঁকতে পারেন। হাটহাজারী, পটিয়া, বাঁশখালীতে কওমী অনুসারীদের প্রভাব আছে। আবার আনোয়ারা, পটিয়া, ফটিকছড়ি ও রাউজানে সুন্নী অনুসারী আছেন বেশি। এমন হিসেব নিকেশের বাইরে গিয়ে বড় দলের প্রার্থী কি পরিমাণ ভোট আদায় করতে পারছেন তার উপর জয়-পরাজয় ফ্যাক্টর হবে। সংখ্যালঘুরা আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত পেলেও এবার বিভিন্ন এলাকায় ভোটের হিসেব গড়মিল হতে পারে। কয়েকটি আসনে থাকা সংখ্যালঘু প্রার্থীরাও কিছু ভোট ভাগিয়ে নিতে পারেন এবার।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের যুগ্ম মহাসচিব সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলায় আমাদের ভোট আছে। এবারের নির্বাচনের সাথে অন্যান্য বারের নির্বাচনের ভোটের হিসেব পাল্টে গেছে। এবার আমাদের পার্টির সিনিয়র নেতারা নির্বাচন করছেন। ফটিকছড়ি, পটিয়া, চন্দনাইশে আমাদের প্রার্থী জিতবেন। রাঙ্গুনিয়ায় উপজেলা নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী ৭২ হাজার ভোট পেলেও এবার কাজ করতে পারছেন না। হাটহাজারী, সীতাকুন্ডে ও বোয়ালখালীতে আমাদের ভোটব্যাংক আছে। এবার শুধু ভোট করছি তা না, আমরা এবার কোমর বেঁধে নেমেছি।’
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহী পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমাদের ভোট নির্বাচনে প্রভাব পড়বে। আমাদের পক্ষের কোনও প্রার্থী নাই। যে কারণে আমাদের ভোটাররা যেদিকে যাবে সেদিকে একটু প্রভাব পড়বেই। চট্টগ্রামে আমাদের আনুমানিক ১০-১৫ লক্ষ ভোট আছে। বাঁশখালীতে আমাদের প্রভাব বেশি। পটিয়া, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়ায় আমাদের ভোট বেশি। আমাদের সমর্থন যেদিকে যাবে তারাই জিতবেন। আমাদের ভোটাররা সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধভাবে ভোট দেন। এ ভোটের উপর প্রার্থীর হারজিত নির্ভর করে। ইসলামের পক্ষে, কোরআনের পক্ষে, দেশের উন্নয়নের পক্ষে যারা আছেন তাদেরকেই আমরা ভোট দিব।’
চট্টগ্রাম মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এড. নিতাই প্রসাদ ঘোষ পূর্বদেশকে বলেন, চট্টগ্রামে এলাকাভিত্তিক আমরা ফ্যাক্টর। কোতোয়ালী, রাউজান, বাঁশখালী, পটিয়া ও মিরসরাইয়ে সংখ্যালঘুদের ভোট প্রভাব ফেলতে পারে। আমাদের ভোটগুলো ঐক্যবদ্ধ ও জোটবদ্ধ। সংখ্যালঘুদের ভোটে অনেকেই নির্বাচিত হলেও পরবর্তীতে আমাদের দিকে সেভাবে মনযোগ থাকে না। চট্টগ্রামে মোট ভোটের ২০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট। এগুলো অবশ্যই ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহ-সভাপতি শফকত হোসাইন চাটগামী বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ ভোটব্যাংক আছে। সারাদেশের ২৯৯টি আসনে আমাদের প্রার্থী আছেন। দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাঁচটি আসনেও আমাদের শক্তিশালী প্রার্থী আছেন। বাঁশখালীতে আমাদের ৩০ হাজার রিজার্ভ ভোট আছে। আলেম-ওলামারা ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের প্রার্থীর পক্ষে নেমেছেন। আমাদের ভোটের প্রভাব গত উপজেলা নির্বাচনেই প্রমাণ হয়েছে। আমি নিজেই ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রায় ১২ হাজার ভোট পেয়েছিলাম। আঞ্চলিকতার দিক থেকেও আমাদের প্রার্থী এগিয়ে আছেন।’