নির্বাচনী সহিংসতা-সংঘাতরোধ সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা

42

নির্বাচনের বাকি আর মাত্র দুই দিন। সর্বত্র টান টান উত্তেজনা। নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা, সংঘাত ও নাশকতারোধে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ভোটের মাঠে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। ইতিপূর্বে মোতায়েন করা হয়েছে ৭০ প্লাটুন বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)। কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে আগে থেকেই মাঠ চষে বেড়াচ্ছে এলিট ফোর্স র‌্যাব, পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর সদস্যরা। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেকোনো মূল্যে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর।
জানা যায়, গত ১১ নভেম্বর সারা দেশকে চারটি বৃহত্তর অঞ্চলে ভাগ করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং সেল ও কো-অর্ডিনেশন কমিটি করে দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশের আট কর্মকর্তাকে। চট্টগ্রাম ও সিলেট মহানগর এবং রেঞ্জের তদারক করছেন অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ও পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান।
সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক গত রবিবার রাত ১২টা থেকেই টহলে নেমেছে সেনাবাহিনী। আন্তঃবাহিনীর জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৪০৭ উপজেলায় স্বশস্ত্র বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। এর মধ্যে ৩৮৯ উপজেলায় সেনাবাহিনী এবং ১৮ উপজেলায় নৌবাহিনী টহল দেবে। চট্টগ্রামেও মোতায়েন রয়েছে সেনাবাহিনী। সেনা সদস্যরা বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছে গেছেন। ক্ষেত্র বিশেষে টহল দিচ্ছেন। প্রয়োজন অনুযায়ী স্থানগুলোতে যাচ্ছেন। তারা ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। নির্বাচনে ‘ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ অনুযায়ী কাজ করবেন সশস্ত্র বাহিনীর এই সদস্যরা।
বিজিবি সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে ৭০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে। আগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকার কথা রয়েছে বিজিবি সদস্যদের। তারা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় টহল দিচ্ছেন। গতকাল বুধবার রাউজান উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিজিবি সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, যেকোনো ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ করতে তারা জোরদার অভিযান চালাবে। প্রয়োজনে র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যদেরও অভিযানে ডাকবেন তারা। সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। সব দলের প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। অপরাধীদের ধরতে অভিযান আরও জোরালো করা হচ্ছে।
সিএমপি সূত্রে জানা যায়, নগরীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রায় আড়াই হাজার পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ৪৩টি চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। এসব চেক পোস্টে যানবাহন ও সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হচ্ছে। নগরীর চার প্রবেশ মুখ বহদ্দারহাট টার্মিনাল, সিটি গেট, অক্সিজেন মোড় ও শাহ আমানত সেতু এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। চালানো হচ্ছে তল্লাশি।
সিএমপি কমিশনার মাহবুবুর রহমান বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা-সংঘাতরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা প্রস্তুত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো ধরনের ছাড় নয়। পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ নগরীতে মোতায়েন রয়েছে। এ সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আমরা সকল প্রকার পদক্ষেপ নিয়েছি। সব এলাকা আমাদের নজরদারির মধ্যে রয়েছে। সহিংসতা সৃষ্টির কোনো সুযোগ কোনো গোষ্ঠী পাবে না।
র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র‌্যাব সদস্যরাও প্রস্তুত রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম চালাচ্ছে র‌্যাব। এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ এবং মহড়া করেছেন র‌্যাব সদস্যরা। অন্যসব বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করেই দায়িত্ব পালন করবেন তারা। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে।
জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেন, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাখা হয়েছে মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং কুইক রেসপন্স টিম। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী অন্যান্য বাহিনীগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করেই নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করবে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, জেলার সব ক’টি থানায় সতর্কাবস্থায় রয়েছে পুলিশ। কোথাও যাতে সহিংসতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে নজরদারি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ সাদা পোশাকে টহল দিচ্ছে।
নাশকতার আশঙ্কায় থানা, রেলওয়ে, টিভি স্টেশন, বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর, পানি শোধনাগারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।