নিরিবিলি সৈকতে ফিরেছে কচ্ছপ, দিচ্ছে ডিম

47

পর্যটকদের ভিড়, জেলেদের আগ্রাসী শিকার আর দূষণ তাদের ঠেলে দিয়েছিল দূরে, করোনা ভাইরাস মহামারি আবার তাদের কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিনের সৈকতে অবাধ বিচরণের সুযোগ করে দিয়েছে; তাতে সঙ্কটে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপের বংশ বিস্তার বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
মূলত তিন প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপ অলিভ রিডলে, গ্রিন টার্টল আর হকসবিল বাংলাদেশের উপকূলে ডিম ছাড়তে আসে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ বা আইইউসিএনের লাল তালিকায় অলিভ রিডলেকে ‘সংকটাপন্ন’, গ্রিন টার্টলকে ‘বিপন্ন’ এবং হকসবিল টার্টলকে ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির কাতারে রাখা হয়েছে।
অলিভ রিডলে ও হকসবিল কচ্ছপ সাধারণত নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এবং গ্রিন টার্টল জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিম ছাড়ে। এই সময়ে রাতের আঁধারে মা কাছিম সৈকতের বালিয়াড়িতে তৈরি বাসায় (নেস্টিং গ্রাউন্ড) এসে ডিম দিয়ে আবার সাগরে ফিরে যায়।
নেচার কনজারভেশন সোসাইটির (ন্যাকম) সমন্বয়ক আবদুল মান্নান সামুদ্রিক কচ্ছপ নিয়ে গবেষণা করেন ২০০৭ সাল থেকে। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে পর্যটন বন্ধ মার্চ থেকে। তাতে বাংলাদেশের উপকূলে অলিভ রিডলে ও হকসবিলের আগমন ও ডিম ছাড়ার হার যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে তাদের স্থায়িত্ব। অনেক বছর ধরে কাছিম নিয়ে কাজ করলেও এবার প্রথম দেখলাম জুন মাস পর্যন্ত ওরা আমাদের উপকূলে ডিম দিতে আসছে। সাধারণত প্রজনন মৌসুম মার্চ, বড়জোড় এপ্রিলেই শেষ হয়ে যায়।
সৈকতে কচ্ছপের ডিম ছাড়ার প্রবণতা কতটা বেড়েছে তার ধারণা পাওয়া যায় পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব থেকে। কচ্ছপের বংশ বিস্তারের জন্য কক্সবাজারে পাঁচটি সংরক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে সরকার, যেখানে কৃত্রিমভাবে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো হয়। ডিম ছাড়ার জন্য সৈকতের বালিয়াড়িতে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে বাসা (নেস্টিং গ্রাউন্ড)।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, এই পাঁচটি কেন্দ্রে মোট ১১৫টি নেস্টিং গ্রাউন্ড থেকে এবারের প্রজনন মৌসুমে ১৩ হাজার ১৮৯টি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে, সেগুলো থেকে ফোটানো হয়েছে মোট সাড়ে ১১ হাজার ছানা।
কক্সবাজারে অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘গতবার আনুমানিক ৮ হাজার ডিম পাওয়া গিয়েছিল। সেগুলো থেকে সাড়ে ৫ হাজার বাচ্চা পাওয়া গিয়েছিল। সে তুলনায় এবার সংখ্যা অনেকটাই বেশি’।
কচ্ছপের ফেরার পরিবেশ তৈরিতে করোনা ভাইরাসের লকডাউন বড় ভূমিকা রেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন, নভেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত যত ডিম পাওয়া গেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ডিম পাওয়া গেছে মার্চ ও এপ্রিলে। অধিদপ্তরের হিসাবে, এর আগে ২০১৮ সালে আড়াই হাজার ডিম থেকে ১৮০০ এবং ২০১৭ সালে ২ হাজার ডিম থেকে ১৭০০ বাচ্চা পাওয়া গিয়েছিল।
সামুদ্রিক প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কচ্ছপকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জলজ প্রাণি বিবেচনা করা হয়। কচ্ছপ ক্ষতিকর জেলি ফিশ খেয়ে ফেলে, যা মাছের বংশ বিস্তারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।