নিরাপদ সড়ক নিয়ে ১১১ সুপারিশের খসড়া চূড়ান্ত

43

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টায় সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি ১১১ দফা সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে খসড়া সুপারিশের ওপর আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়।
খসড়া প্রতিবেদনটি এখন বিআরটিএ ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে সবার মতামত নেওয়ার জন্য। ১৫ দিন পর তা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কমিটির প্রধান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি সংসদ সদস্য শাজাহান খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের চলমান সমসাময়িক ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হল সড়ক দুর্ঘটনা এবং সড়কের নিরাপত্তা। এর সমাধান করা এখন ‘নৈতিক দায়িত্ব’ হয়ে পড়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ১৫ দিনের সময় দিয়ে সুপারিশগুলো জনসাধারণের মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে দিয়ে দেব। ওই ১৫ দিনের মধ্যে আমরা আশা করি মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারব। তার মতামত নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেব।
‘সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা আনয়ন এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটি’র ওই খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস ও শৃঙ্খলা বৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন’। খবর বিডিনিউজের
গতবছর জুলাই মাসে দুই কলেজশিক্ষার্থীর মৃত্যুর সারা দেশে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনে পরিবহন খাতের বিভিন্ন স্তরে বিশৃঙ্খলার বিষয়গুলো নতুন করে সামনে চলে আসে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সে সময় সড়ক দুর্ঘটনাকে সরকারের ‘সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনার বিষয়’ হিসেবে বর্ণনা করেন। সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খোদ সরকারপ্রধান মন্ত্রিসভার বৈঠকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেন। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পরিবহন মালিক, শ্রমিক, পুলিশ, গবেষক ও বিআরটিএ’সহ বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই কমিটি করা হয়। তবে গতকাল বুধবার খসড়া চূড়ান্ত করার দিনে ২৩ সদস্যের ওই কমিটির ১৪ জনই অনুপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে মতামত দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে পত্রিকা, টেলিভিশনসহ ৪০টি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হলেও কেউ যাননি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শাজাহান খান বলেন, সড়কে নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু সড়ক পরিবহন মালিক বা সরকারের নয়, সারাদেশের মানুষের। এজন্য সবার মতামত চাওয়া হয়েছিল। আমরা বিভিন্ন সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, তাদের আমরা আবেদন করেছিলাম। তারা আসলে আমরা খুশি হতাম। যারা আসেন নাই তাদের নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। তারপরও যেহেতু আমরা ওয়েবসাইটে দিয়ে দিচ্ছি। তাদের কোনো মতামত থাকলে তারা দিতে পারবেন। আমরা সেটা বিবেচনায় নিয়ে তা আলোচনা করবো।
যা আছে সুপারিশে
অবিলম্বে সড়ক পারিবহন আইনের বিধিমালা জারি, সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি স্কুলের পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা, সড়ক উন্নয়নে নেওয়া প্রকল্পের ৫ শতাংশ অর্থ সড়ক নিরাপত্তার জন্য রাখা, জেলা ও উপজেলা সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ক্ষমতা বৃদ্ধি, চালক প্রশিক্ষণে সরকারি খরচে ইন্সট্রাক্টর তৈরির কার্যক্রম নেওয়া, ইন্সট্রাক্টর নিয়োগে সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের অগ্রাধিকার দেওয়া, চাকরিতে নারী চালকদের অগ্রাধিকার দেওয়া, ট্রাফিক পুলিশের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ, রাজধানী থেকে রিকশা তুলে দেওয়া, রাইড শেয়ারিং কোম্পানির জন্য গাড়ির সংখ্যা বেঁধে দেওয়া, কেবল লাইসেন্সধারী চালকদের কাছে মোটরসাইকেল বিক্রি করা, দৈনিক ভিত্তিতে চালক নিয়োগ না দেওয়া, চালকদের সুনির্দিষ্ট মজুরি নির্ধারণ, রাস্তায় প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে বাস রুট ফ্রাঞ্চাইজি প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন, সড়কে ডিজিটাল মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
সড়ক নিরাপত্তা ইস্যুতে বরাবর মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ নেওয়া শাজাহান খানকে এই কমিটির প্রধান করায় সমালোচনা এসেছিল সরকারের ভেতর থেকেই। এছাড়া সড়ক নিরাপত্তা আন্দোলনকারীরাও শাজাহান খানকে কমিটিতে রাখায় ক্ষোভ জানিয়েছেন। এ কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা, যিনি জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবং বর্তমান সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনও সদস্য হিসেবে আছেন এই কমিটিতে।